সরকারের সকল মন্ত্রণালয় ও দফতরই ডিজিটালাইজড হচ্ছে। ফলে সকল ক্ষেত্রেই চালু হবে ডিজিটাল নথি। ফলে সরকারি কর্মকর্তারা মন্ত্রীদের মতোই বাসায় বসেও দাফতরিক কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। এমনকি ওই ফাইল আন্তঃমন্ত্রণালয় ও আন্তঃদফতরেও পাঠানো যাবে। ওই লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের উদ্দেশে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। ওই খসড়ায় ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। যাতে সরকারি দফতরসমূহ অনলাইন ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় বেতন-ভাতা, পেনশন, অনুদান, বৃত্তি প্রদান করবে। ওই লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘ডিজিটাল গবর্ন্যান্স আইন, ২০২০’- এর খসড়া তৈরি করে নাগরিকদের মতামত চেয়ে সম্প্রতি ওয়েবসাইটে দিয়েছে। আর আইনটি প্রণয়ন হলে সরকারি কাজ পুরোমাত্রায় ডিজিটালাইজড হয়ে যাবে। তাতে সরকারি দফতরে কাজে গতি বাড়বে। বাড়বে কর্মঘণ্টাও। কারণ কর্মকর্তারা বাসায় বসে রাতেও কাজ করার সুযোগ পাবে। কোন কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে ফাইল দিনের পর দিন পড়ে থাকবে না। এমনকি কোন কর্মকর্তা দেশের বাইরে থাকলেও তিনি সেখানে বসেও দাফতরিক কাজ এবং প্রয়োজনে জুমের মাধ্যমে সভা সম্পন্ন করতে পারবেন। সচিবালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার সরকারি কর্মচারীগণ কর্মস্থলের বাইরে থাকলেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে দাফতরিক কর্ম সম্পাদনের সুযোগ রেখে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। ওই আইনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কর্ম সম্পাদন এবং নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ডিজিটাল নথি ব্যবস্থাপনা তৈরি ও বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। ওই আইনের বিধান বাস্তবায়নে ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হলে তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা যাবে বলেও প্রস্তাব রাখা হয়েছে। আইনের খসড়ায় ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অনলাইন ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় সরকারি দফতরসমূহ বেতন-ভাতা, পেনশন, অনুদান, বৃত্তি প্রদান করবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোত্তম প্রয়োগের মাধ্যমে দাফতরিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন এবং সেবা পদ্ধতি সহজীকরণে এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। করোনাকালে অনলাইনে হোম ওয়ার্ক এবং ভার্চুয়াল আদালতের আইনি কাঠামো প্রদানের পর নতুন আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আইনের খসড়ায় ৬টি অধ্যায় রয়েছে। তার প্রথম অধ্যায়ে আইনের প্রয়োজনীয়তা ও পটভূমি এবং বিভিন্ন সংজ্ঞা ও শব্দের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ডিজিটাল গবর্মেন্ট বলতে এমন কোন পদ্ধতি, যার মাধ্যমে কোন কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস বা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি কার্যক্রম সঠিক ও সুচারুরূপে সম্পাদন করা এবং সেবাসমূহ দ্রুত জনগণের নিকট পৌঁছানো যায়। খসড়ার দ্বিতীয় অধ্যায়ে ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত প্রয়োগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কোন তথ্য-উপাত্ত হস্তাক্ষর বা মুদ্রাক্ষর অথবা কোন উপায়ে লিখিত বা মুদ্রিত আকারে দাখিল করার কোন শর্ত উল্লেখ থাকলেও তা ডিজিটাল উপায়ে দাখিল করা যাবে। ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে দলিল সম্পাদন, মূল দলিল বা সত্যায়িত অনুলিপি উপস্থাপন, চুক্তি সম্পাদন করা যাবে এবং ডিজিটাল রেজিস্টারে তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা যাবে।
সূত্র জানায়, সরকারি দফতরসমূহ অনলাইনে প্রাপ্ত আবেদন, ডিজিটাল নথি এবং অন্যান্য আবেদন ডাটাবেজ, কনটেন্ট, সফটওয়্যারের তথ্য সংরক্ষণের জন্য ডিজিটাল তথ্যভা-ার তৈরি ও পরিচালনা করতে পারবে। আর তথ্য যাচাইয়ে পারস্পরিক সহায়তার লক্ষ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় ফাইল চলমানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আইনের খসড়ায় তৃতীয় অধ্যায়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের কথা বলা হয়েছে। জনগণের নিকট তথ্য ও সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে সরকার দেশব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে। আর প্রত্যেক সরকারি দফতরে তথ্য ও সেবাসম্বলিত একটি বাতায়ন থাকবে, যা জাতীয় তথ্য বাতায়নে সংযুক্ত থাকবে এবং দফতরসমূহ নিজ নিজ বাতায়নে তথ্য, উপাত্ত ও সেবা সন্নিবেশ এবং হালনাগাদ করবে। সকল সরকারী দফতর ‘কান্ট্রি কোড টপ লেভেল ডোমেন’ নাম রেজিস্ট্রেশন এবং দাফতরিক ই-মেল এ্যাকাউন্ট তৈরি করবে। পাশাপাশি কর্মচারীদের জন্য ব্যক্তিগত ই-মেল এ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। ওই মেল এ্যাকাউন্ট থেকে সকল দাফতরিক যোগাযোগ হবে ডিজিটাল। সরকারি দফতরসমূহে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কর্ম সম্পাদনে সরকার সকল কর্মচারীকে ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর সনদ প্রদান করবে। ডিজিটাল নথির মাধ্যমে কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সকল সরকারি দফতরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পাদন এবং নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ডিজিটাল নথি ব্যবস্থাপনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারি কর্মচারীগণ কর্মস্থলের বাইরে দেশে অথবা বিদেশে অবস্থানকালেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে দাফতরিক কর্ম সম্পাদন করতে পারবেন। অডিও ভিজ্যুয়াল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও কনফারেন্স বা সভা করা যাবে এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা করা যাবে। পাশাপাশি খসড়ায় তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ই-প্রশিক্ষণেরও সুযোগ রাখা হয়েছে। তাছাড়া আইনের খসড়ায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী তথ্য প্রাপ্তির সুবিধা রাখার কথা বলা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, খসড়া আইনের চতুর্থ অধ্যায়ে ডিজিটাল সেবা ব্যবস্থাপনায় সরকারি দফতরসমূহের দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়াও ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে; যাতে প্রচলিত আইনের অধীন সরকারি দফতরসমূহে আদায়যোগ্য অর্থ ডিজিটাল পদ্ধতিতে আদায় করা যাবে। সরকারি দফতরসমূহ বেতন-ভাতা, পেনশন, আনুতোষিক, অনুদান, ক্ষতিপূরণ, বৃত্তি প্রদান করবে। সেবা গ্রহীতা ও সেবা প্রদানকারীর পরিচয় নিশ্চিতকরণে সরকার নির্দেশিত পদ্ধতি এবং পরিচিতিজ্ঞাপক তথ্য উল্লেখ থাকবে। সেবা গ্রহণে নাগরিকদের যে কোনো অভিযোগ প্রতিকারের লক্ষ্যে সমন্বিত অনলাইন অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা তৈরি করবে। খসড়ার পঞ্চম অধ্যায়ে তথ্যের নিরাপত্তায় সরকারি দফতরের তথ্যভা-ারের নিরাপত্তা রক্ষা এবং গোপনীয়তা রক্ষা এবং ডিজিটাল সিস্টেমে নিয়মিত অডিটের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। আর ষষ্ট অধ্যায়ে আন্তঃদফতর সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই আইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবে। তাছাড়া কোন অস্পষ্টতা তৈরি হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তা স্পষ্টীকরণ করতে পারবে। তাছাড়া আইনের বিধান প্রতিপালনে ব্যর্থতা নিয়ে বলা হয়েছে, এই আইনের বিধান বাস্তবায়নে ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হলে তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা যাবে।