প্রাথমিক শিক্ষায় মেধাবীদের টানতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ সবই ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য করা হচ্ছে। প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকরা তাদের বেতন গ্রেড পরিবর্তন করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ দাবি নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। সেই দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩ করা হয়েছে। এখন তা বাস্তবায়নের পথে। যদিও শিক্ষকদের দাবি ছিল ১১ গ্রেড। প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দাবি ১০তম গ্রেড। তারা এখন ১১তম গ্রেডে রয়েছেন। এর মাঝখানে অর্থাৎ ১২ তম গ্রেডে সহকারি প্রধান শিক্ষকের একটি পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলছে। তবে ১৩ তম গ্রেডে সব সহকারি শিক্ষকের অর্ন্তভুক্তি নিয়ে সহকারি শিক্ষকদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। কারণ সহকারি শিক্ষকের নতুন নিয়োগ বিধি-২০১৯ অনুযায়ী, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবার শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির ¯œাতক ডিগ্রি। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেক নারী সহকারি শিক্ষক রয়েছেন যারা কাগজে কলমে এইচএসসি পাস রয়েছেন। কারণ তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত তাদের নিয়োগের সময় সেটুকুই ছিল। অনেকেই চাকরি পাওয়ার পর সাফল্যের সাথে ¯œাতক পাস করেছেন। কিন্তু অনুমতি না থাকায় তা সার্ভিসবুকে অন্তুর্ভুক্ত করতে পারেনি। এখন যদি এই সহকারি শিক্ষকগণ তাদের সার্টিফিকেট সার্ভিসবুকে যোগ করতে না পারেন তাহলে লক্ষাধিক শিক্ষক হতাশায় ভুগবেন। সার্টিফিকেট থাকা সত্ত্বেও তারা যদি ১৩ তম গ্রেডে উন্নীত হতে না পারেন তা নিঃসন্দেহে হতাশার হবে। এর প্রভাব শ্রেণিকক্ষেও পরতে পারে। কারণ তারা মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে থাকবেন। এইচএসপি পাস করে সহকারি শিক্ষক পদে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের মধ্যে যারা দ্বিতীয় শ্রেণিতে ¯œাতক পাস করেছেন তাদের একটি সুযোগ থাকা উচিত। যদি তা না হয় তাহলে তাদের পদোন্নতির সুযোগও রুদ্ধ হবে। চাকরি ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি হতাশার জন্ম দেবে। এরপর থেকে যে নিয়োগ আসবে সেখানে নারী পুরুষ ¯œাতক প্রয়োজন হবে। এতে উচ্চশিক্ষিতরা প্রাথমিক শিক্ষায় আসবে এবং প্রাথমিকের শিক্ষায় পরিবর্তন ঘটবে।
এখন থেকে প্রধান শিক্ষক পদে আলাদা কোনো নিয়োগ না হয়ে এই পদে সহকারি শিক্ষকদের পদন্নোতির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে। এমনটা জানা গেছে বিভিন্ন মাধ্যমে। যেকোনো চাকরিতে পদন্নোতি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেবল বেতনের জন্যই সবাই চাকরি করে না। পদোন্নতির আশা মনের ভেতর লুকিয়ে রাখে সবাই। অন্যান্য সরকারি চাকরির মতো প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরিতে পদোন্নিতর সুযোগ থাকা উচিত এবং এটা তাদের পেশাগত দক্ষতা, কাজের প্রতি স্পৃহা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর তার মেধা এবং দক্ষতা, কাজের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উৎসাহ এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পার হলেও সেই পদ থেকে পদন্নোতি না হয় তখন তার মনে হতাশা বিরাজ করে। আর সেটাই স্বাভাবিক। প্রত্যেকেই তার কাজের মূল্যায়ন চায়। সেই মূল্যায়ন যে কেবল বেতন বৃদ্ধির ভেতরেই সিমাবদ্ধ থাকে এমন ধারণা ঠিক নয়। একজন সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর নির্দিষ্ট সময় শেষে সহকারি প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক,সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে শিক্ষকদের মধ্যে আগ্রহ সঞ্চার হবে। তারা তাদের দায়িত্ব পালনে সচেতন হবে। কারণ এই পদন্নোতির মাপকাঠি যদি শিক্ষকদের মেধা,দক্ষতা ইত্যাদি বিবেচনায় হয় তাহলে তারা তাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে কাজ করবে। তারা তাদের কাজে অসন্তুষ্টি থাকবে না এবং সর্বোচ্চ সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দেয়ার কাজটি করে যাবে। সম্প্রতি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে পরীক্ষার সুযোগ না থাকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। পূর্বে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক উভয়ই সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিতে পারতো। এই সুযোগ সহকারি শিক্ষকদের থাকা একান্ত প্রয়োজন। কারণ এর ফলে আরও বেশি মেধাবী প্রাথমিকে শিক্ষকতা পেশায় আসবে। শিক্ষকতাকে ব্রত হিসেব গ্রহণ করবে। অন্তত ৪৫ বছর পর্যন্ত যেন প্রাথমিকে সহকারি শিক্ষকরা এ পদে পরীক্ষা দিতে পারে তা সুযোগ থাকা উচিত।
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এখন যারা নিয়োগ পাচ্ছে তারা সর্বোচ্চ শিক্ষিত। এতদিন মেয়েদের ক্ষেত্রে যে শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল আগামী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে তা পুরুষ ও মহিলা সমান যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। খুব সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ঘোষণা এসেছে। খুব তাড়াতাড়িই এই বিজ্ঞপ্তি হয়তো আসবে। এখন সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি মানেই প্রচুর আবেদন জমা পরা। অন্তত করোনা কালীন সময়ে বেসরকারি চাকরিতে নিরাপত্তাহীনতা এবং বিপরীতে সরকারি চাকরির নিরাপত্তা ও সুবিধার কারণে সরকারি চাকরিতে সবার ঝোঁক বেশি। সামনের যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসবে তারাও শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে যথেষ্ট যোগ্য। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকদের কয়েকটি বিষয়ও গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ প্রাথমিক শিক্ষাসহ শিক্ষার সব স্তরে মেধাবী এবং আন্তরিক মানুষ প্রয়োজন যারা কেবল শিক্ষকতাকেই নিজের জীবনের ব্রত হিসেবে দেখে থাকেন। এমন এক সময় আসবে যখন একজন তার মেধাকে সরকারি অন্য উচ্চ শ্রেণির চাকরিতে না দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষায় নিয়োজিত হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করবে। এটা হয়তো অনেক দূরের কল্পনা। তবে খুব বেশি দূরে হয়তো নয়।
অলোক আচার্য ,সাংবাদিক ও কলাম লেখক পাবনা