অন্যান্য ফসল চাষের চেয়ে গৌড়মতি আমচাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় গৌড়মতি আমেই আর্থিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের মেড়েয়া গ্রামের কৃষক আবু রেজা প্রামানিক বাবলু (৫৫)। একসময় তরুন বয়সে পারিবারিক অনাবাদি পতিত জমিতে আলু, পটল, বেগুন, আদা, রসুন, মরিচ ও শাকসব্জি চাষ শুরু করেন। এর মাধ্যমেই খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন সাংসারিক জীবনের স্বচ্ছলতা। কিন্তু এতে কোন সুবিধা করতে না পারায় জন হপ্কিন্স ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রাম নামে এক বিদেশি এনজিওতে চাকুরীতে যোগ দেন। সেখানে ১৪ বছর চাকুরী করার পর প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সংকট দেখা দিলে তিনি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে আম, লিচুর বাগান গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করেন। শুরু টা ছিল ২০০৭ সাল। পারিবারিক প্রায় ১২ একর জমির মধ্যে ৩-৪ একর জমিতে ধান চাষ করা সম্ভব হলেও বেশির ভাগ জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো। ২০০৭ সালে এসব জমিতে শাকসব্জির পরিবর্তে প্রথম পর্যায়ে ১৭৫টি হাড়িভাঙ্গা আম ও ৪০০টি আম্রপালি আমের কলম রোপন করেন। চারা রোপনের তিন-চার বছরের মাথায় এসব গাছ থেকে ফলন আসতে শুরু করে। বাজারে এসব আমের চাহিদা ও মুল্য দুটোই আবু রেজা প্রামানিক বাবুল কে আম চাষে উৎসাহিত করে। পরবর্তিতে পর্যায়ক্রমে ২০১৬ সালে আম বাগানের আয়তন বাড়িয়ে সেখানে ১ হাজার ২শ’ উন্নতমানের গৌরমতি আম ও ১ হাজার ১০০ বারি চার জাতের আমের চারা রোপন করেন। ২০১৮ সালে আম বাগান আরও সম্প্রসারিত করে ২০০ থাই জাতের কাটিমন গাছের চারা রোপন করেন। এভাবে বাগানের আয়তন দাড়ায় ৯ একরে। তবে, এ বছরই প্রথম তার বাগানের ১ হাজার ২শ’ গৌড়মতি জাতের আম গাছের মধ্যে প্রায় ৩০০ গৌড়মতি ও ৪০০ বারি-৪ জাতের ভাল ফলন হয়। আমের এ দুটি জাতই নাবি জাতের। বাজারে সব আমের সরবরাহ যখন শেষ। ঠিক তখন অর্থাৎ ভাদ্র মাসে এসব আম পাকতে শুরু করে। ফলে ভাল দামে এ দুটি জাতের আম বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হয়। এদুটি জাতের মধ্যে বারি-৪ জাতের আম আকারে বড় ও মাংসল। দুই-তিনটি আমে এক কেজি হয়। মিষ্টতা কম হলেও আঁটি পাতলা। অন্যদিকে, গৌড়মতি আম মিষ্টতা স্বাদের দিক থেকে অসাধারন। আম দেখতে ল্যাংড়া আমের মত হলেও আকারে বড় ও মিষ্টতা অনেক বেশি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বৈশিষ্ট হলো সকল আমের মৌসুম শেষ হবার পর এটি বাজারে আসতে শুরু করে। বারি-৪ জাতের প্রতি কেজি আম বাজারে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি গৌড়মতি আম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে গৌড়মতি আম বিক্রি করে ইতোমধ্যে হাতে ভাল পয়সা আসায় গোটা আম বাগানটি কে গৌড়মতি আম বাগানে রুপান্তরের চিন্তা ভাবনা করছেন বলে জানান- আম চাষী আবু রেজা প্রামানিক বাবুল (৫৫)। তিনি বলেন, বাগান প্রতিষ্ঠায় এ পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সাদিকুল ইসলাম, ফারুক হোসেন ও বাবলু নামে তিন শ্রমিক প্রতিদিন বাগান পরিচর্যার কাজ করছেন। এমনিতেই গৌড়মতি আমের চাহিদা যথেষ্ট সন্তোষজনক। তা সত্বেও এ বাগানের আমের চাহিদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আম উৎপাদনে কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। এছাড়াও ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ ও জৈব সার ব্যবহার করায় এ বাগানের আমের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। এ বাগানের গৌড়মতি আমের একটি বড় চালান গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ইতোমধ্যে কক্সবাজার, চট্রগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, বি-বাড়িয়া, পঞ্চগড়, রংপুর, বগুড়া ও খুলনায় পাঠানো হয়েছে।
পার্বতীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রাকিবুজ্জামান বলেন, আবু রেজা প্রামানিক বাবুলর গৌড়মতি আম বাগানের পরিচর্যা ও ফলন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান ও সহযোগিতা কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস। দেশের বিভিন্ন স্থানের গ্রাহকদের কাছে পার্বতীপুরে উৎপাদিত গৌড়মতি আমের চাহিদা থাকায় আম চাষী আবু রেজা বাবলু’র আম চাষ সাফল্য ও স্বচ্ছলতা বয়ে আনবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।