সরকার আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করছে। ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে জাতীয় কর্মসংস্থান নীতিমালা ২০২০ শীর্ষক নীতিমালাটির খসড়া তৈরি হয়েছে। যা এখন মতামত গ্রহণ পর্যায়ে আছে। নীতিমালার খসড়া অনুযায়ী বর্তমানে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বেশি বলে এখনই বাংলাদেশে জনমিতিক মুনাফা লাভের সুযোগ গ্রহণের সময়। কারণ কর্মক্ষম মানুষ বেশি থাকলেও তাদের একটি বড় অংশ বেকার ও অদক্ষ। এখন যুবকদের বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। আর কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা এখন ক্রমাগত বাড়লেও ২০৪০ সালের দিকে তা কমতে থাকবে এবং ২০৫০ সালের পর তা অনেকটা কমে যাবে। ফলে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে কাজে লাগাতে এখনই দরকার সঠিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রয়োজন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ৬ কোটির বেশি। ওই বিশাল জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে পরিকল্পনামাফিক পদক্ষেপ নিতে হবে। কর্মসংস্থান নীতি ও কৌশল প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৩ কোটি লোকের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের বেকারত্ব নিরসন করা সম্ভব হবে। খসড়ায় নীতিমালার মূলনীতি ও লক্ষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থান নীতির মূল লক্ষ্য হবে জাতীয় উন্নয়নে সহায়ক যুগোপযোগী-বৈষম্যহীন, অধিকারভিত্তিক, স্ব-উদ্যোগী ও উৎপাদনশীল পূর্ণ কর্মসংস্থানে উৎসাহিত করা। দেশের সব কর্মক্ষম কর্মসংস্থানপ্রত্যাশী জনশক্তিকে উপযুক্ত ও দক্ষ করে তোলার মাধ্যমে বেকারত্বহীন দরিদ্রমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই এ নীতির লক্ষ্য।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সব কর্মক্ষম মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কর্মের সুযোগ সৃষ্টি ও কর্মে নিয়োগের উপায় নির্ধারণ এবং কর্মের জন্য জনশক্তিকে উপযুক্ত ও দক্ষ করে তোলার জন্য জাতীয় কর্মসংস্থান কৌশলপত্র বাস্তবায়নে আইনি সমর্থন জোগানোর উদ্দেশ্যে দেশে কর্মসংস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত সব আইন, বিধিমালা, নীতি, নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রয়োজনে নতুন আইনি সহায়তার সুযোগ রেখে এই কর্মসংস্থান নীতি প্রণয়ন অত্যাবশ্যক। খসড়া অনুযায়ী এটি প্রণয়নের নীতি-উদ্দেশ্য হিসেবে মোট সাতটি বিষয় রয়েছে। তার মধ্যে প্রথমেই আছে বাংলাদেশের সব নারী-পুরুষের অবাধ ও পছন্দমাফিক উৎপাদনশীল পূর্ণ কর্মসংস্থানে উৎসাহিত করা। দ্বিতীয় নীতি-উদ্দেশ্য হলো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সক্ষম বহুমাত্রিক দক্ষতাসম্পন্ন উৎপাদনমুখী শ্রমশক্তি গড়ে তোলা। তৃতীয় নীতি-উদ্দেশ্যটি হলো কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ ও নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি। এর পরের নীতি-উদ্দেশ্যটি হলো কর্মমুখী শিক্ষা প্রবর্তন ও আত্মকর্মসংস্থানে উৎসাহিত করা। প্রতিটি নারী-পুরুষের নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী বৈষম্যহীনভাবে উপযুক্ত কর্মে নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা। ষষ্ঠ নীতি-উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ রয়েছে অনুসমর্থিত আন্তর্জাতিক দলিলের আলোকে দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী শোভন কর্মপরিবেশ ও কর্মে নিয়োজিত সব ব্যক্তির অধিকার নিশ্চিত করা। সর্বশেষ ও সপ্তম নীতি-উদ্দেশ্যটি হলো কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে সেবার মানসিকতা সৃষ্টি করা।
এদিকে এ প্রসঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয় থেকে কর্মসংস্থান অধিদপ্তর গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যার অংশ হিসেবে জাতীয় কর্মসংস্থান নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। নীতিমালাটির খসড়া তৈরি হয়ে মতামত গ্রহণ পর্যায়ে আছে। শিগগিরই তা চূড়ান্ত হবে।