দেশে কর্মরত বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই শিক্ষার্থী খরায় ভুগছে। করোনা প্রাদুর্ভাবে ওসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তিতে ধস নেমেছে। ফলে করোনাকালে শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ছাড়া সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থী ভর্তি কমেছে। তার মধ্যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ শতাংশ, কোনোটির ৭০ শতাংশ এমনকি কয়েকটিতে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি কমেছে। সব মিলিয়ে গড়ে গত বছরের সামার সেমিস্টারের তুলনায় এবারের সামার সেমিস্টারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অন্তত ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী হারিয়েছে। ইউজিসি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত প্রায় তিন মাস বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ১ জুন থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেয়। ইউজিসির তথ্যমতে, কয়েক বছরে ক্রমান্বয়ে বাড়ার পর ২০১৮ সালে দেশের ৯১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৯২-এ। আর ২০১৯ সালের চূড়ান্ত পরিসংখ্যান এখনো প্রকাশ না হলেও ধারণা করা হচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যার ধারাবাহিক ঊর্ধ্বমুখিতা গত বছরও বজায় ছিল। কিন্তু করোনার প্রভাবে এ বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কমে গেছে।
সূত্র জানায়, বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে পরিবারের আর্থিক সংকট, ঢাকার বাইরে অবস্থান ও সর্বোপরি করোনায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কারণে শিক্ষার্থীরা এখন ভর্তি হতে চাচ্ছে না। ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিছু শিক্ষার্থী পেলেও অন্য বিভাগীয় ও জেলা শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থী সংকট মারাত্মক আকার নিয়েছে। আর শিক্ষার্থী ভর্তি কমার প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রমেই প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে আয়ের পথ সংকুচিত হয়ে গেছে। ফলে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়া যাচ্ছে না। সেজন্য কয়েক দফায় আর্থিক প্রণোদনা চেয়ে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া হলেও এখনো ইতিবাচক কোনো সাড়া মেলেনি।
সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিতে গত বছরের সামারে শিক্ষার্থী ১ হাজার ৮০০ জন ভর্তি হয়েছিল। এ বছরের সামারে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে মাত্র ৫০০ জন। বর্তমানে ফল সেমিস্টারের ভর্তি কার্যক্রম চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গত বছরের ফল সেমিস্টারে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী পেলেও এবার এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি মাত্র ১৫০ শিক্ষার্থী পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণে বড় ছাড় দিচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবুও শিক্ষার্থীদের দিক থেকে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি (আইএসইউ)ফল ও স্প্রিংÑ দুই সেমিস্টারে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে ফল সেমিস্টারের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভর্তির ক্ষেত্রে সব শিক্ষার্থীর টিউশন ফির ওপর আইএসইউ ৪০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। ছাত্রীদের জন্য ছাড় দেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত আরো ২০ শতাংশ। এসব বড় ছাড় ঘোষণার পরও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তেমন সাড়া মিলছে না। বিশ্ববিদ্যালয়টি ফল সেমিস্টারে এখন পর্যন্ত ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী পেয়েছে। অথচ গত বছর এ সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫০।
এ প্রসঙ্গে ইফজিসির সদস্য মুহাম্মদ আলমগীর জানান, কভিড-১৯ সংক্রমণের শুরুর দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় ইউজিসি। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়। তবে বাস্তবতা হলো অনুমোদনের পরও তারা শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। পরিবারের আর্থিক সংকটের পাশাপাশি এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়াটাও এখন শিক্ষার্থী না পাওয়ার বড় একটি কারণ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ শিক্ষার্থী সংকট কাটিয়ে ওঠা দুষ্কর।
অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন। একই সঙ্গে ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। তার বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থী ভর্তি কমেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ। তিনি জানান, একদম শীর্ষ পর্যায়ের দু-চারটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আসন অনুপাতে শিক্ষার্থী পেয়েছে। তাছাড়া সবাই শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে বড় সংকটে রয়েছে। গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, এ বছরের সামার সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি কমেছে ৭৫ শতাংশ। তবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ হার এক নয়। কোথাও এটি ৫০ শতাংশের মতো কমেছে। আবার কোথাও ৮০-৯০ শতাংশও কমেছে।