পুরো রাজধানীকে অপরাধ মুক্ত রাখতে প্রযুক্তির নজরদারীতে আনা হচ্ছে। সেজন্য রাজধানী জুড়েই বসানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। সেফ সিটি প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার ৬ হাজার কিলোমিটার ছোট-বড় রাস্তার পুরোটাই কয়েক হাজার সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যার মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং যানবাহন চলাচলের ত্রুটি ধরতে এই ক্যামেরা পদ্ধতি কাজ করবে। যদিও সেফ সিটি প্রকল্পের আগেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৫০০ পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীজুড়ে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে যতো বেশি ক্যামেরা বসানো হবে. ততটাই নিরাপদ হবে শহর। রাজধানীকে নিরাপদ করার জন্য এবং উন্নত দেশের আদলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করতে পুরো শহরকেই ক্লোজড সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসছে পুলিশ। সরকারের প্রস্তাবিত সেফ সিটি প্রকল্পের আওতায় পুলিশ সদর দপ্তর ডেভেলপমেন্ট অব ঢাকা সিটি ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম নামের একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) আকারে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। গত বছরই এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হলেও করোনা মহামারির কারণে এখনো কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। যদিও তার আগে ঢাকা নগরে এলাকাভিত্তিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু তার সুফল পুরোপুরি পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যে সিসি ক্যামেরাগুলো রয়েছে সেগুলো এলাকাভিত্তিক, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নিজস্ব উদ্যোগে হয়েছে। কিন্তু জরুরি প্রয়োজনে সেগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে সেগুলো থেকে প্রয়োজনীয় ফুটেজ সংগ্রহ করা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সম্প্রতি সংসদ ভবন এলাকায় মাইক্রোবাসের চাপায় পর্বতারোহী রেশমা নাহার রত্নার মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তকারীরা ৩৮২টি সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করে গাড়িটির ব্যাপারে ধারণা পান। এমন অনেক ঘটনায় সিসি ক্যামেরা থাকলেও সহায়তা পেতে তদন্তকারীদের সময় লেগে যায়। তাছাড়া ক্যামেরা না থাকা বা অকেজো থাকার কারণেও তদন্তে সহায়তা মেলে না। এসব সমস্যা নিরসনের জন্যই বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে সেফ সিটি নামের প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়, যা ডেভেলপমেন্ট অব ঢাকা সিটি ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম প্রকল্প নামে পরিচিত।
সূত্র আরো জানায়, কয়েক বছর আগে এলাকাভিত্তিক সিসি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেয় ধানম-ি, তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা পশ্চিমসহ ঢাকার কয়েকটি থানা। পরবর্তী সময়ে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনে আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটি (ল অ্যান্ড অর্ডার কো-অর্ডিনেশন কমিটি বা এলওসিসি) ওই এলাকায় এক হাজার ২০০ সিসি ক্যামেরা বসায়। গুলশান ফাঁড়িতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ বসিয়ে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে কিছু এলাকার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের অল্প পরিমাণ সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সেগুলো দিয়ে যানবাহনের বিরুদ্ধে ভিডিও মামলা করা হয়। তবে গুলশানের কার্যক্রম ছাড়া এলাকাভিত্তিক কার্যক্রমগুলো সফল হয়নি। সড়কের মোড়ের ক্যামেরাগুলো এখন প্রায় অকেজো। যেগুলো নষ্ট হয়নি সেগুলো থেকেও ফুটেজ সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া অনেক এলাকাই ক্যামেরার আওতার বাইরে রয়েছে।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বরে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘শিগগিরই সেফ সিটি প্রকল্প শুরু হবে। প্রথম অবস্থায় ঢাকায় যদি সফল হই তবে চট্টগ্রাম এবং অন্য সিটিতে প্রকল্পটি নিতে পারব। শিগগিরই আমরা পরিকল্পনা কমিশনে প্রজেক্ট পাঠাব। আশা করি, শিগগিরই সেটা পাস হবে। এ পরিস্থিতিতে করোনার কারণে দেরি হলেও শিগগিরই প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই শেষে পুলিশের পক্ষ থেকে ডিপিপি আকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ওই প্রকল্পে ঢাকার দুই সিটির প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার সড়কে সিসি ক্যামেরা বসবে। ক্যামেরাগুলো হবে জার্মানির উন্নত প্রযুক্তির, যা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে অপরাধীকে শনাক্ত করবে। ক্যামেরাগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের আইসিটি শাখাকে দায়িত্ব দেয়া হবে। একটি গাড়ির নাম্বার প্লেট ক্যামেরার সীমানায় এলেই গাড়িটি শনাক্ত হয়ে যাবে। এর মাধ্যমে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মামলা হয়ে যাবে। অপরাধ করলে গাড়ি শনাক্তের পর দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা বার্তা পাবেন।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম জানান, ঢাকা মেগাসিটিতে কোটি মানুষের সঙ্গে প্রতিদিনই নতুন মানুষ যোগ হয়। এমন জনবহুল ও গলি-মহল্লার শহরে কোথাও কিছু ঘটলে তা বের করতে বেগ পেতে হয়। তাই প্রতিটি এলাকা সব সময়ের জন্য নজরে নিয়ে আসা হবে। ঢাকা শহরকে নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে সেফ সিটি প্রকল্পের আওতায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়ও ৫০০ পয়েন্টে ক্যামেরা বসানো হবে।