চলতি বোরো মৌসুমে দেশের অভ্যন্তর থেকে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ করা যায়নি। সারা দেশে ৪ মাসে মাত্র ১ লাখ ৯৯ হাজার টন ধান এবং ৬ লাখ টন চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। অথচ ৮ লাখ টন ধান এবং সাড়ে ১১ লাখ টন চাল সংগ্রহ করা সরকারের টার্গেট ছিল। কৃষক ও মিলাররা সরকারি মূল্যের চেয়ে বাজারে দাম বেশি হওয়ায় গুদামে ধান-চাল দিচ্ছে না। ফলে বোরো সংগ্রহ বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থায় ধান-চাল সংগ্রহের সময়সীমা আরো ১৫ দিন বাড়ানো কথা ভাবা হচ্ছে। পাশাপাশি খাদ্য অধিদফতর সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও যেসব চালকল (মিলার) মালিক চাল দিচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। খাদ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে ২৬ টাকা কেজিদরে ৮ লাখ টন ধান, ৩৬ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৫ টাকা কেজিদরে দেড় লাখ টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। বিগত ২৬ এপ্রিল থেকে ধান এবং ৭ মে থেকে বোরো চাল সংগ্রহ শুরু হয়ে ৩১ আগস্টে শেষ হয়। কিন্তু বিগত গত ৪ মাসে সরকারিভাবে সারা দেশে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৯৯ হাজার ৬৫৪ টন। আর চাল (সিদ্ধ) সংগ্রহ হয়েছে ৫ লাখ ২৬ হাজার ২৭৯ টন, আতপ চাল ৭৫ হাজার ১৪৩ টন; যা কাক্সিক্ষত নয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে খাদ্যমন্ত্রী একাধিকবার মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংগ্রহের গতি বাড়াতে তাগিদ দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী মিলারদের চাল দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী চাল না দিলে কালোতালিকাভুক্ত করাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারিও দিয়েছেন। এমনকি শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানি করার কথা বলেছেন। পাশাপাশি চুক্তি অনুযায়ী সময়মতো চাল সরবরাহ করলে সরকারি প্রণোদনা দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। কিন্তু এতো কিছুর পরও মিলারদের মন কিছুতেই গলেনি।
সূত্র জানায়, এবার খোলাবাজারে ধানের দাম বেশি। ফলে চাষীরা গুদামে ধান দিচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতিতে চালের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। চাল সরবরাহে মিল মালিকরা সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছে। মিল মালিকরা বাজার থেকে ধান কিনে চাল তৈরি করছে। এ কারণে বেড়ে গেছে বোরো ধানের দাম। আর চাষীরা খাদ্য গুদামে ধান না দিয়ে বাজারে বিক্রি করছে। ফলে খাদ্য বিভাগের বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে। সরকারি মূল্যের চেয়ে বাজারে চালের দাম বেশি হওয়ায় মিলাররাও চুক্তি অনুযায়ী সরকারি গুদামে চাল দিচ্ছে না। বরং অভিযোগ রয়েছে, মিলাররা সিন্ডিকেট করে বাজারে চালের দাম বাড়িয়ে চলেছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে ধান-চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে কিছুটা প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজমান রয়েছে। আর চুক্তি করেও যেসব মিলার ধান-চাল সরকারকে দিচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। তবে যেসব চালকল মালিক সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করেছে বা করবে তাদের ইতিবাচক মূল্যায়ন করা হবে। আর চুক্তি সম্পাদনের জন্য আদিষ্ট হয়েও যেসব চালকল মালিক চুক্তি সম্পাদন করেনি তাদের লাইসেন্স স্থগিতের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। আর যেসব চালকল মালিক চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ ব্যর্থ হতে যাচ্ছে ও সরকারি সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জনে অসহযোগিতা করছে সংগ্রহ মৌসুম শেষ হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে চুক্তিপত্র ও চালকল লাইসেন্স ইস্যু সংক্রান্ত বিধিবিধানসহ প্রাসঙ্গিক আইনি বিধি অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে চালকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক একেএম লায়েক আলী জানান, করোনা ভাইরাস এবং লাগাতার বৃষ্টি-বন্যায় এবার ধান চাল সংগ্রহে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে ধানের স্বল্পতা ছিল। বাজার থেকে এখন চাল কিনে গুদামে দিলে মিল মালিকদের কেজিপ্রতি ৪ টাকা লোকসান গুনতে হবে। আর সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহের টার্গেট পূরণে আরো মাস সময় প্রয়োজন। আর আবহাওয়া ভালো হলে ও সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময় দিলে মিলাররা লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করতে পারবে। এখন সরকার যদি মিলারদের বিরুদ্ধ আইনি ব্যবস্থা নেয়, চুক্তি অনুযায়ী তা নিতেই পারে। তবে এ ব্যর্থতা থেকে উত্তরণে মিলাররা সরকারের সহযোগিতা চায়।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) সারোয়ার মাহমুদ জানান, অন্যান্য বছরের মতো এবার ধান-চাল সংগ্রহ হয়নি। করোনা ও বন্যার কারণে পরিবেশ অনেকটাই বৈরী। টার্গেটের অর্ধেকও সংগ্রহ করা যায়নি। টার্গেট পূরণ করতে হলে সংগ্রহের সময়সীমা বাড়ানো প্রয়োজন। বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে খাদ্য মন্ত্রণালয়।