ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে মাসের পর মাস ঘুরেও প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ পাচ্ছে না এসএমই উদ্যোক্তারা। মূলত ব্যাংক কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। ভুক্তভোগীদের মতে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কাগজপত্র পরীক্ষার নামে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। ফলে উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে পারছে না। ব্যাংকিং খাত এবং ভুক্তভোগীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার করোনায় অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় বিভিন্ন খাতে এক লাখ তিন হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। তার মধ্যে সিএমএসএমই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল। বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৩ এপ্রিল এ সংক্রান্ত তহবিল বরাদ্দের জন্য নীতিমালা জারি করে। এ তহবিলের ঋণের সুদ ৯ শতাংশ হিসাব করা হলেও ঋণগ্রহীতাদের দিতে হবে ৪ শতাংশ সুদ। অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সুদের অর্থ সরকার ভর্তুকি আকারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে দেবে। প্রথমে প্রণোদনার ২০ হাজার কোটি টাকাই ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের কথা ভেবে পরবর্তী সময় তহবিলের ১০ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন করার ঘোষণা দেয়া হয়। আগামী অক্টোবরের মধ্যে ওই তহবিলের ঋণ বিতরণ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই তহবিলের ঋণ বিতরণে কাক্সিক্ষত গতি আসছে না। গত ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্যাকেজের আওতায় মাত্র ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। আর ৪ হাজারের মতো সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠান এই ঋণ পেয়েছে।
সূত্র জানায়, করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ প্রদানে ব্যাংকগুলো নানা টালবাহানা করছে। অনেক উদ্যোক্তার ঋণ আবেদনই মঞ্জুর করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকেও অভিযোগপত্র জমা পড়েছে। এমনকি প্রণোদনার ঋণ প্রদানে হয়রানির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে ভুক্তভোগীরা আবেদন করেছে। ওই আবেদনে ব্যবসার সংকট তুলে ধরার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির বিষয়ও তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঝামেলামুক্ত ঋণ প্রদানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সিএমএসএমই প্যাকেজের ঋণ বিতরণে অগ্রাধিকার দিতে তদারকি বৃদ্ধি ও বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বৈঠকও করা হচ্ছে। তাতে আগের চেয়ে ঋণ বিতরণে গতি এসেছে।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণে অগ্রাধিকার দিতে শুরুতেই ব্যাংকের ধরন অনুযায়ী সিএমএসএমই ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিল। যেসব ব্যাংক মূলধন কাঠামোর দিক থেকে একেবারে ছোট তাদের এক বছরে ৫০ কোটি টাকা, মাঝারি আকারের ব্যাংককে ৫০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি টাকা এবং বড় আকারের ব্যাংককে ৩০০ কোটি টাকার অধিক ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে। কিন্তু শুরুতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে কোনোক্রমেই গতি আসছিল না। ওই পরিপ্রেক্ষিতেই ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির জন্য তদারকি বাড়ানোর অংশ হিসেবে গত ২১ জুন মাসিক ভিত্তির পরিবর্তে পাক্ষিক ভিত্তিতে ঋণ বিতরণের তথ্য জানাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়। তাতেও কোনো কাজ না দেয়ায় গত জুলাই থেকে ঋণ বিতরণের টার্গেটের সীমা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করতে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওসব বৈঠকের পর সিএমএসএমই খাতের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণ সম্পন্ন করতে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। আর এর অগ্রগতি নিয়ে অক্টোবরের শুরুতেই বড় আকারের ২০-২৫ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ আসছে যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সিএমএসএমই তহবিল থেকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে না। তাই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কয়েক ধাপে বৈঠকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ বৈঠকে সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ সম্পন্ন করতে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।