এবারের বন্যায় দেশজুড়ে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে গত মার্চ থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে রয়েছে। বর্তমানে ধীরে ধীরে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেও অবকাঠামো হারিয়ে যাওয়া ওসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে ফেরা নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। তবে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) ইতোমধ্যে বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসগুলোর মাধ্যমে সারাদেশের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের তালিকা করেছে। আর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রণয়নের কাজ করছে। তবে ওই তালিকা এখনো চূড়ান্ত না হলেও ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত একটি সভায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি খসড়া তালিকা উপস্থাপন করা হয়। ওই তালিকা অনুযায়ী এবারের বন্যায় সারা দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ৮৭৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডিপিই এবং মাউশি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এবারের বন্যায় ৩ হাজার ৯১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভেই বিলীন হয়ে গেছে। আর ৩ হাজার ৮৬৬টি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অঞ্চলভিত্তিক হিসাবে দেখা গেছে ঢাকা অঞ্চলে প্রাথমিক বিদ্যালয় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢাকা বিভাগের সর্বমোট ১ হাজার ৪৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তার মধ্যে ৯টি বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যায় এর পরের অবস্থানেই রয়েছে রাজশাহী অঞ্চল। ওই বিভাগের ৭৬১টি বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে ১৫টি বিদ্যালয়। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা রংপুরে ৬৬৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ১৬টি নদীতে হারিয়ে গেছে। তার বাইরে সিলেট বিভাগে ৫৮২টি, ময়মনসিংহে ৩৮৮টি, চট্টগ্রামে ৫২টি, বরিশালে ৫টি ও খুলনায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে খসড়া তালিকা অনুযায়ী বন্যায় ময়মনসিংহ অঞ্চলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকপর্যায়ের ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি। ওই অঞ্চলটিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৯৬টি। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রাজশাহীতে ১৮৬টি ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা ঢাকায় ১৭৬টি প্রতিষ্ঠান এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার বাইরে রংপুরে ১৪৫টি, সিলেটে ৫৭টি ও কুমিল্লা অঞ্চলে ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো বন্যায় ক্ষতির শিকার হয়েছে।
সূত্র জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ না হলে শিক্ষার্থীদের বিরাট একটি অংশ ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। তবে নদীগর্ভে বিলীন ৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী গৃহনির্মাণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিগগিরই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হবে। তাছাড়া অন্য বিদ্যালয়গুলোতেও প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে মেরামত সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ জানান, প্রতি বছরই বন্যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ বছরও বন্যার পানিতে বেশকিছু বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া কয়েকটি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নদীভাঙনের কবলেও পড়েছে। ওই বিদ্যালয়গুলোর সংস্কার ও মেরামতের জন্য প্রথমে মাঠপর্যায় থেকে তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই আলোকে ইতোমধ্যে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। এখনো অনেক এলাকায় বন্যা চলমান রয়েছে। তাই বন্যা শেষে আরেকটি চূড়ান্ত তালিকা করে ওই আলোকে বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।
অন্যদিকে বন্যায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকপর্যায়ের ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রণয়নের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছেন মাউশির উপ-পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) মো. রুহুল মমিন। তিনি জানান, আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর তথ্যের সামষ্টিক হিসাবে দেখা গেছে এখন পর্যন্ত মাউশির অধীন পরিচালিত ৮৭৩টি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাউশির পাশাপাশি শিক্ষা প্রকৌশল থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়। বন্যা পরিস্থিতি শেষে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে ওসব প্রতিষ্ঠান সংস্কার ও মেরামত করা হবে।