ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের আধিপত্য, ডাক্তারদের কমিশন আদায়ের মহোৎসব আর বহিরাগত দালালদের দৌরাত্ম্যে করোনা কালেও চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেন হয়ে উঠেছে ‘অনিয়মের আখড়া’। এমন ‘অনিয়মের’ কারণে রোগীদের হাসপাতালের সামনে থেকেই ভুলিয়ে বাগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকে।
এতে একদিকে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। অন্যদিকে, আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন দরিদ্র লোকজন। দিনের পর দিন এ অনিয়ম চলতে থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ অনেকটাই নিরুপায়
প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় দালালদের নির্মূল করাও সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ঘুরে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকের সামনে শাহীন নামে এক লোক বসে আছেন। ডাক্তার কথা বলার আগেই তিনি রোগীর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। জিজ্ঞেস করা হলে জানান, তিনি এখানে রোগী নিয়ে এসেছেন। অথচ পরে জানা যায় তিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত।
এছাড়া হাসপাতালের প্রধান ফটক, জরুরি বিভাগসহ একাধিক স্থানে ওঁৎ পেতে আছেন স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিকের মালিকদের ‘নিয়োজিত’ কয়েকজন যুবক যুবতী। রোগীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রবেশ করতেই তাদের সাথে কথা বলতে শুরু করেন। ভুল বুঝিয়ে নিয়ে যান পাশ্ববর্তী প্রাইভেট ক্লিনিকে।
চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশেই অবস্থিত একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় শত শত রোগীর ভিড়। সামাজিক দুরুত্বের কোনো বালাই নেই। ডাক্তারের জন্য অপেক্ষমাণ রাওথা এলাকার শফিকুল ইসলাম বলেন, জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি তার স্ত্রী মনোযারা খাতুনকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। সেখানে প্রবেশের পরই এক ব্যক্তি হাসপাতালে ডাক্তার নেই বলে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে এসেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আলম জানান, গত বুধবার অসুস্থ হয়ে তিনি সরকারি এ হাসপাতালে আসেন। জরুরি বিভাগে আসার পরই তাকে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এক যুবক। পরে তার সঙ্গে বেশি টাকা নেই জানালে ওই যুবক ছেড়ে দেন আলমকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেডিকেল অফিসাররা সরকারি সেবার দিকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রতিদিনই প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এতে প্রাইভেট হাসপাতালে নির্ধারিত ফি’র পাশাপাশি রোগীপ্রতি কমিশনও পাচ্ছেন তারা। আবার কিছু উপ-সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা চিকিৎসা সেবা বাদ দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের ওষুধের দোকানে বহিরাগতদের সাথে আড্ডায় মশগুল থাকেন।
চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আশিকুর রহমান বলেন, দালালদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। আমরা প্রতিনিয়ত মাইকিং করে দালালদের হাসপাতাল ছাড়তে সতর্ক করেছি। স্থানীয় প্রশাসনকেও ব্যাপারটা জানিয়েছি। খুব দ্রুত রোগীদের স্বার্থে দালালদের বিরুদ্ধে সব রকম ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।