একদিন আগে ছেলের লাশ দাফন হয়েছে। পরদিন ছেলের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন বাবাও। নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাম মসজিদে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শিশু জুবায়ের মৃত্যুর পর বাবা জুলহাসও মারা যান। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বাহেরচর গ্রামের এক পরিবারের এই দুই সদস্যকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্বজনরা। তাদের আর্তনাদ যেন থামছেই না।
শোকার্ত এ পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে রোববার রাত সাড়ে ৭ টায় নিহতদের বাড়িতে ছুঁটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান। সেখানে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পরেন তিনি। পরিবারকে সান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন এবং তাৎক্ষণিক ব্যক্তিগতভাবে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন ইউএনও। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা এই অসহায় পরিবারের পাশে আছি।’
এদিকে, রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জুলহাসের ছেলে ৭ বছরের শিশু জুবায়েরের নামাজে জানাজা শেষে ওই ঈদগাহ সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরদিন সোমবার ৯ টায় একইস্থানে জুলহাসের জানাজা শেষে ছেলের পাশে তাকেও দাফন করা হয়।
এরআগে জুলহাস ও তার ছেলে জুবায়ের আশঙ্কাজনক অবস্থায় দু’জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিটে নেওয়া হলে শুক্রবার রাত ১টায় ৭ বছরের শিশু জুবায়ের মারা যায়। গ্রামের বাড়িতে ছেলের লাশ নিয়ে আসার পর রোববার সকাল ৮টায় দাফন কাফনের প্রস্তুতিকালে খবর আসে জুলহাসও মারা গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, ছোটবেলায় জুলহাসের বাবা বাচ্চু ফরাজী মারা যান। তখন জুলহাসের বয়স ১০-১২ বছর। অভাব অনটনের সংসারের হাল জুলহাসেকই ধরতে হয়। কিন্তু বিয়ে করার পর সেই সংকট আরও বেড়ে যায়। তাই ১০ বছর আগে স্ত্রীসহ ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে গার্মেন্ট শ্রমিকের কাজ করতেন জুলহাস। নিহত জুলহাসের স্ত্রী রাহিমা বেগম বলেন, ‘জুলহাস নিয়মিত নামাজ পড়তো। প্রায়ই ছেলেকে নিয়ে নামাজে যেত সে। কিন্তু ওইদিন ছেলে যেতে চায়নি। সে টিভি দেখতে চেয়েছিল। তবুও ছেলেকে বাবার সঙ্গে নামাজে পাঠান তিনি।’ এখন বেঁচে থাকার সম্বল আদরের একমাত্র ছেলে ও স্বামীকে হারিয়ে তিনি নির্বাক।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘জুলহাস ও জুবায়েরের পরিবারকে আমি ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। নিহত অপর দুইজনের পরিবারকেও সহায়তা দেওয়া হবে। নিহত চারজনের তথ্যই সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় প্রত্যেক পরিবারকে এক একর করে জমি দিবেন বলে জানিয়েছেন। ওইসব পরিবারকে শুকনো খাবার বিতরণের প্রক্রিয়াও চলছে।’