অনিয়ম বা জালিয়াতির কোনো তথ্য পেলে স্বাস্থ্যসেবায় জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান চালাবে এলিট ফোর্স র্যাব। ওই লক্ষ্যে চিকিৎসাসেবার নামে জালিয়াতি ও নানা অনিয়মের মধ্যে চলা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে গোয়েন্দা তৎপরতার পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের অভিযোগ যাচাই করে বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে র্যাব ইতিমধ্যে অভিযান চালিয়েছে। এমন ধরনের আরো বেশ কিছু হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। র্যাব সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, র্যাবের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো প্রায় সব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই অভিন্ন চিত্র মিলেছে। হাসপাতালগুলোতে অপরিচ্ছন্ন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সরঞ্জাম, অস্ত্রোপচার কক্ষে নোংরা পরিবেশ, অতিরিক্ত চিকিৎসা ফি আদায়, একজন রোগীর জন্য ব্যবহার করা যায় এমন মেডিকেল সামগ্রী একাধিক রোগীর জন্য ব্যবহারের চিত্র প্রায় সব হাসপাতালেই মিলেছে। তাছাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগ নির্ণয়পত্রে ভুয়া চিকিৎসকের স্বাক্ষর, ন্যূনতম পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট প্রদান, রোগীর দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই মনগড়া রিপোর্ট তৈরি এবং ল্যাবগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ পাওয়া যায়।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি র্যাবের অভিযানে রাজধানীর মালিবাগে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার কক্ষগুলোয় মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী মিলেছে। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অবস্থাও ছিল খারাপ। এক রোগীর জন্য ব্যবহার্য মেডিকেল সামগ্রী সেখানে তিন রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। হাসপাতালটিতে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহারের অস্তিত্বও মিলেছে। সেজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিষ্ঠানটিকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করে। একই দিন অভিযান চালিয়ে ওই এলাকার পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৪৮ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা ধরে রোগীর দেহের নমুনা মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে রেখে রোগ নির্ণয় করার নিয়ম থাকলেও মাত্র ৫ ঘণ্টাতেই রিপোর্ট দেয়ার মতো প্রমাণ পাওয়া যায়। ওই প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই দিন ধারাবাহিক ওই অভিযানে মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্টের সঙ্গে ল্যাবে পুরোনো বর্জ্যও পাওয়া যায়। তাতে প্রতিষ্ঠানটিকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আমেরিকা-বাংলাদেশ হাসপাতালটি পুরোদমে কার্যক্রম চালালেও ৩ বছর ধরে সেটির লাইসেন্সই ছিল না। সেখানে সার্জিক্যাল সামগ্রীও ছিল মেয়াদ উত্তীর্ণ। হাসপাতালটি অন্য জায়গা থেকে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা করিয়ে নিজেদের নামে চালিয়ে দিত। অস্ত্রোপচার কক্ষের অবস্থাও ছিল খারাপ। ওই প্রতিষ্ঠানটিকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সূত্র আরো জানায়, নানা কারণে বেশ কিছুদিন র্যাবের হাসপাতাল কেন্দ্রিক অভিযান বন্ধ ছিল। অবশ্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনিয়মের বিষয়ে ভুক্তভোগীদের অনেক অভিযোগ জমেছে। গোয়েন্দা তথ্যেও অনেক হাসপাতালের অনিয়মের বিষয়ে তথ্য মিলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে মোটা অংকের জরিমানা করা হয়।
এদিকে করোনা সংকটের মধ্যে চিকিৎসাসেবা নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে গত ৬ জুলাই উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাব। একই সময়ে হাসপাতালটির মিরপুর শাখাতেও অভিযান চালানো হয়। ওই দুটি অভিযানে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় ভয়াবহ গাফিলতির চিত্র বেরিয়ে আসে। অভিযানকারীরা হাসপাতাল দুটিতে চিকিৎসা কার্যক্রমে নানা অনিয়ম দেখতে পান। এ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয় এবং গ্রেপ্তার হয় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম। তারপরই তার প্রতারণার নানা কাহিনী বের হতে থাকে। গত ১৯ জুলাই গুলশানে শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ১০ আগস্ট গাজীপুরে সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। ওসব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেও চিকিৎসার নামে জালিয়াতি ও প্রতারণার চিত্র বেরিয়ে আসে।
অন্যদিকে র্যাব অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্ব দেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেখানেই অনিয়ম পাওয়া যাবে, আইনের মধ্যে থেকে সেখানেই অভিযান চালানো হবে। চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়ের নামে জালিয়াতি করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এ প্রসঙ্গে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার জানান, কোনো হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসাসেবার নামে জালিয়াতি বা অনিয়মের তথ্য পেলেই অভিযান চালানো হবে। কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না।