বিশে^ দুইশতরও বেশি প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন (টিকা) উদ্ভাবনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশেরও একটি প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট এগিয়ে রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত টিকার চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে। রাশিয়া ঘোষণা দিয়েছে, তারা এ মাসেই টিকার ব্যাপক উৎপাদনে যাবে এবং জনগণের মধ্যে টিকার প্রয়োগ শুরু করবে। করোনার টিকা যখন প্রায় নাগালের মধ্যে এসে গেছে, তখন উৎপাদিত টিকা পাওয়ার জন্যও প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। টিকা বাজারে আসার আগেই অনেক দেশ কোটি কোটি টিকার অর্ডার করে রাখছে। বাংলাদেশও সেই দৌড়ে পিছিয়ে নেই। কিভাবে কত দ্রুত টিকা হাতে পাওয়া যাবে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। টিকা উৎপাদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এমন দেশ বা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকারিভাবে যেমন নিবিড় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, তেমনি বেসরকারিভাবেও অনেক প্রতিষ্ঠান এই যোগাযোগ রাখছে।
বিশ্বের জনসংখ্যা এখন প্রায় ৭০০ কোটি। জনপ্রতি দুটি করে টিকার প্রয়োগ করা হলেও এক হাজার ৪০০ কোটি টিকার প্রয়োজন হবে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত টিকা বাজারে এলে মোট টিকা উৎপাদন গাণিতিক হারে বেড়ে যাবে। করোনা মহামারির ব্যাপকতা বিবেচনায় টিকা উৎপাদনের এ কাজটি করতে হবে খুব দ্রুত। এজন্য টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশের ওষুধ কম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা ঘোষণা করেছে, তারা ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকটি ওষুধ কম্পানি জানায়, তারা আমেরিকা ও ভারতের যৌথ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় থাকা একটি টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। অন্য আরেকটি কম্পানি রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, করোনার ভ্যাকসিন পেতে গত রোববার ও রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এ নিয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে বলেও জানায় সূত্রটি। আর চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ আইসিডিডিআরবিতে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে চীনের সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের নমুনা। এরপর শুরু হবে সাতটি হাসপাতালে চিকিৎসাকর্মীদের ওপর ট্রায়ালের কাজ। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহ ও সরবরাহের নেতৃত্বে রয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। ধারণা করা হচ্ছে, টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনো দেশই খুব বেশি সমস্যায় পড়বে না। ৯২টি নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সংস্থা গাভির-এর সহায়তায় টিকা সরবরাহ করা হবে। আমরা আশা করি, যথাযথ আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশে করোনার কার্যকর টিকা প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে।