তানোর উপজেলার হাট-বাজারে সিনজেন্টা কোম্পানীর মোড়কে ভেজাল কীটনাশক কিনে প্রতারিত হচ্ছেন কৃষকরা। সুনামধন্য কোম্পানীর মোড়কে কমদামে দ্বামের এইসব ভেজাল কীটনাশক তৈরি হচ্ছে মোহনপুর উপজেলার কেশর হাট। এসব ভেজাল কীটনাশক প্রকাশ্যেই বিক্রি করা হলেও রহস্যজনক কারণে নিরব দর্শকের ভুমিকায় রয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
কৃষি অফিস ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখন আমনের ভরা মৌসুম, ক্ষেতের ফসলে বিভিন্ন রোগ-বালাই দমনে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেন কৃষকরা। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করা। ফসলের মোট খরচের বেশির ভাগ খরচ হয়ে থাকে কীটনাশক প্রয়োগে।
তানোর উপজেলার বিভিন্ন দোকান থেকে নামিদামি কোম্পানীর মোড়কের এসব ভেজাল কীটনাশক কমদামে কিনে জমিতে প্রয়োগ করে পোকা দমন করতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে, কমদামে এসব ভেজাল কীটনাশক জমিতে প্রয়োগ করে কোন সুফল না পাওযায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, কীটনাশক উৎপাদনকারী বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানি নকল ব্র্যান্ডের ভেজাল কীটনাশক বিক্রি হচ্ছে অবাধে, এসব ভেজাল কীটনাশক কিনে কৃষকরা যেমন প্রতারিত হচ্ছেন তেমনি কৃষি পন্য উৎপাদনও ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব।
এসব কীটনাশক ব্যবসায়ীরা নাম না প্রকাশ করার সর্তে বলছেন, এসব ভেজাল কীটনাশক তৈরির একাধিক কারখানা ও সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট এলাকায়। ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের তেমন কোন তদারকি না থাকায় প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে এসব ভেজাল কীটনাশক।
তবে, মাঠ পর্যায়ের একাধিক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা স্বীকার করছেন, কোম্পানীর কর্তৃতপত্র ছাড়াই যততত্র কীটনাশক বিক্রি করছেন অনেক অসাধু ডিলার। আর ভেজাল ও নকল কীটনাশক গুলো পরীক্ষা করা ল্যাব উপজেলা পর্যায়ে না থাকায় ও তাদের হাতে ভেজাল বিরোধী অভিযানের কোন ক্ষমতা না থাকায় সহজে ধরা যাচ্ছে না বলে তারা দাবি করেছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে সব চেয়ে বেশি নকল ও ভেজাল কীটনাশক সিনজেন্টা কোম্পানীর এমিস্টর টপ। এ কীটনাশক ধানের পচন রোগ সারাতে বেশ কার্য্যকরী। তাই এটার উপর কৃষকদের চাহিদাও অনেক বেশি। এ সুুযোগে প্রায় কীটনাশক ডিলার সিনজেন্টা কোম্পানীর মোড়কে ভেজাল কীটনাশক বিক্রি করতে শুরু করেছেন। কৃষকরা ভেজাল ও নকল কীটনাশকের বিষয়ে যেন নিয়মিত মাঠ পর্যায়ের কীটনাশকের বাজার মনিটরিং করা হয়।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার মু-ুমালা বাজারে প্রায় ১০টি কীটনাশক দোকানে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে এসব ভেজাল কীটনাশক। এর মধ্যে মেসার্স জামান ট্রেডার্স, মেসার্স শিবলী ট্রেডার্স, মেসার্স হাফিজ ট্রেডার্স ও মেসার্স মাসুম ট্রেডাসে সিনজেন্টা কোম্পানীর ভেজাল ও নকল ইমিস্টর টপ বিক্রি করছেন প্রকাশ্যে। এ চারটি দোকানের সিনজেন্টা কোম্পানীর এজেন্ট বা বিক্রির অনুমতি পত্র নাই।
তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক আজিজ বলেন, তার আমন ক্ষেতে পচন রোগ দেখা দেয়। মু-ুমালা বাজারে মেসার্স জামান ট্রেডার্স এর মালিক বাবুর কাছে গিয়ে ক্ষেতে পচনের কথা জানালে তিনি এমিস্টর টপ নামের একটি বড় কীটনাশক বোতল দেন। বোতলের গায়ে ১৬৫০ টাকা মুল্য থাকলেও দোকানী দাম নিয়েছেন তাকে ১২০০ টাকা।
কম দামে পাওয়া ওই কীটনাশক ক্ষেতে প্রয়োগ করি কিন্তু এক সপ্তহের বেশি সময় পর হলেও পচন কোন প্রকার দমন করতে পারিনি। তার মত এসব ভেজাল কীটনাশক কিনে শতশত কৃষক প্রতারিত হচ্ছেন।
তানোর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সমশের আলী বাজারে নকল ও ভেজার কীটনাশক পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এসব ভেজার কীটনাশক গুলো পরীক্ষা করার কোন ল্যাব উপজেলা পর্যায়ে নাই। এমন ভাবে এগুলো প্যাকেটজাত হয়ে থাকে, ব্যান্ডের মোড়ক দেখে চেনার উপায় থাকে না এগুলো নকল না আসল।
তিনি বলেন, কৃষকরা এসব কীটনাশক ব্যাবহার করে কোন কাজে আসছেনা বলে ভরি ভরি অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন আমরা বিষয়গুলো উর্দ্ধত কর্মকর্তাদের কাছে জানাচ্ছি।
রাজশাহীর তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সামিউল ইসলাম বলেন বাজারে ভেজাল ও নকল কীটনাশক ও বীজ পাওয়া যাচ্ছে এমন সংবাদের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে, কৃষকদের কীটনাশক কেনার সময় অবশ্যই সে কীটনাশক ডিলালের কাছে মেমু সংগ্রহ করতে হবে।
তিনি বলেন কারণ কীটনাশক ব্যবহার করে কোন কাজ হচ্ছেনা পরে তথ্য প্রমান পাওয়া যাইনা। আর মেমু নেওয়ার পরে যদি কাজ না হয় সে ক্ষেত্রে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে পারবো। সে ক্ষেতে কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে।