কৃষকের আমন ধান চাষ করে ধান উৎপাদন করতে সার, বীজ, কীটনাশক, নিড়ানী, কৃষি শ্রমিক ইত্যাদিতে কি পরিমান ব্যয় এবং বর্তমানে ধানের বাজার মূল্যেতে কি কৃষক লাভবান হবেন না ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ধান চাষে অগ্রহ হারাবেন না ধান চাষে আগ্রহ ফিরে পাবেন এ সম্পর্কে লিখার জন্য, তথ্য উপাত্ত নিয়ে ল্যাপটপ ওপেন করলাম এমন সময় রাজশাহীর একটি সনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক আমার বন্ধু আমার বসায় আসলেন অন্য একটি কাজে, নাস্তা করার পর তিনি বললেন, মাদকের কারণে যুবকের আজ ধ্বংসের পথে, এদের বাঁচাতে না পারলে সমাজ দেশের ব্যপক ক্ষতি হবে। এ ব্যপারে কিছু লিখেন। করোনার কারণে লুকিয়ে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার তালিকাভুক্ত মাদ্রক মাদক ব্যবসায়ী ও স¤্রাটরেরা এলাকায় ফিরে এসে বীর দাফটে তাদের অবৈধ মাদক কারবার শুরু করেছেন। সে যাই হউক ওই শিক্ষক বন্ধুর কথা শুনে লেখার মাদক সম্পর্কে আল্লাহর নাম নিয়ে লিখা শুরু করলাম।
বর্তমানে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীর তালিকা দিনে দীর্ঘ হচ্ছে। কোনভাবে থামানো যাচ্ছেনা এ অবৈধ মাদককারবার। ফলে সব চেয়ে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে যুব সমাজ। দেশে মাদকের বিস্তৃতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তরুণ ও যুবসমাজ ব্যাপক হারে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। মাদকে আক্রান্ত তরুণ ও যুবসমাজ ধ্বংসের পথে। বর্তমান সমাজে মাদক জন্ম দিচ্ছে একের পর এক অপরাধ। শুধু মাদকের কারণে ছেলের হাতে বাবা মা ভাই ও খুন স্ত্রী হাতে স্বামী, স্বামীর হাতে স্ত্রী, প্রেমিকের হাতে প্রেমিকা, প্রেমিকার হাতে প্রেমিক খুন হওয়ার কথা পত্র পত্রিকায় খবর বের হয়েছে। মাদকের ছোঁয়ায় সম্ভাবনাময় তারুণরা অধঃপতনের চরম শিখরে উপনীত হচ্ছে। মাদক এখন সহজলভ্য। শহর-নগর, গ্রামসহ মফস্বল এলাকায়ও হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। আশির দশকের শেষ দিকে ফেনসিডিলের আবির্ভাব হয়। পর্যায়ক্রমে এটার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। নব্বইয়ের দশকে মাদকের জগতে সংযোজন হয় ইয়াবা। এ ছাড়া গাঁজা, আফিম, চরশ, বাংলা মদ, গুল, মরফিন, কোকেন, বিয়ার, ওয়াইন, হেরোইন, প্যাথেলিন, মারিজুয়ানা, ডেক্রপরটেন, প্যাথেডিন কোকেন চোলাইমদসহ রকমারি মাদকের প্রতি তরুণদের আসক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বিধ্বংসকারী মাদকের বিস্তার সমাজে যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সচেতন অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৮ বছরের ওপরে শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ মানুষ মাদকাসক্ত। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮৫ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। না বুঝেই অনেক তরুণ এ পথে পা দিয়ে বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, মাদক সেবনের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ৮০ লাখ মানুষ এবং বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষ মারা যায়। বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি। মাদকাসক্ত সন্তানের কারণে এক একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মাদকাসক্ত সন্তানকে নিয়ে পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়ছে। পথশিশুরাও আজ ভয়াবহ নেশায় আসক্ত হচ্ছে।
সমাজসেবা অধিদফতরের এক গবেষণায় দেখা যায়, শহর, গ্রাম থেকে নিয়ে স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও মাদকাসক্ত হচ্ছে। যত্রতত্র চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। প্রতিনিয়িত বসছে নেশার আড্ডা। অনেকে নেশার টাকা জোগাড় করতে নেমে পড়ছে অপরাধ জগতে। মাদকের চাহিদা মেটাতে তরুণ-তরুণীরা ক্রমেই অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। অনেক শিক্ষার্থী নেশার মোহে পড়ে সম্ভাবনাময় জীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে একজন মানুষ যখন অপরাধজগতে পা বাড়ায়, প্রথম সিঁড়িটি হলো মাদকদ্রব্য। সিগারেট হলো মাদকাসক্তির মূল কারণ। একজন মানুষ প্রথমেই কিন্তু মাদক সেবন করে না। প্রথমে যেটা করে সেটা হলো সিগারেটের নেশা। এই নেশা থেকে আস্তে আস্তে মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। মাদকের নেশায় আসক্ত বেশির ভাগই শুরু হয় বন্ধুবান্ধবের সাহচর্যে। মাদক গ্রহণের ফলে প্রাথমিক সাময়িক স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই ক্ষণস্থায়ী স্বস্তির আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর মরণ ফাঁদ। এই মরণ ফাঁদে একবার পড়লে স্বাস্থ্যহানি ঘটে, সৃজনীশক্তি শেষ হয়ে যায়। স্বাস্থ্যহানি বলতে কেবলই দৈহিক স্বাস্থ্যের কথা বলা হচ্ছে না। দেহের পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা ও বিধ্বস্ত হয় মনের স্বাস্থ্য, ক্ষয় হয় নৈতিক মূল্যবোধ, মাদক কেড়ে নিচ্ছে তরুণদের একাংশের সুবুদ্ধি ও সুবিবেচনা। যার ফল সমাজ-জীবনে দুর্যোগ নেমে আসে। মাদকাসক্তি দেশে সংঘটিত অপরাধের একাংশের প্রধান নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারিবারিক বিপর্যয়গুলো বিশেষজ্ঞদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। এই সর্বনাশ মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রকে মোটেও বিচলিত করে না। তারা কেবলই বোঝে ব্যবসা। তরুণ প্রজন্মের হাতে তুলে দিচ্ছে মরণনেশার উপকরণ মাদক। তরতাজা তরুণদের মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্ব সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে ইয়াবার ভয়াবহ নেশা। বিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ, মায়া, ভালোবাসা, পারিবারিক সুবন্ধন। মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে অহরহ বাবা-মা, ঘনিষ্ঠ স্বজন নির্মম হত্যার শিকার হচ্ছে। নেশাখোর বাবা মাদক সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে কান্ডজ্ঞান হারিয়ে প্রিয় সন্তানকে খুনও করছে অবলীলায়। নেশার টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, মাকে জবাই করা, আদরের সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার মতো জঘন্য ঘটনাও ঘটছে।
র্যাবের সূত্রমতে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ মাদকসেবী রয়েছে। মাদকসেবীদের শতকরা ৯১ ভাগই কিশোর ও তরুণ। এরমধ্যে ৪৫ দশমিক ৭৪ ভাগ বেকার, ৬৫ দশমিক ১ ভাগ আন্ডার গ্র্যাজুয়েট, ১৫ ভাগ উচ্চ শিক্ষার্থী, ২২ দশমিক ৬২ ভাগ ব্যবসায়ী, ১০ দশমিক ৬৭ ভাগ চাকরিজীবী, ৬ দশমিক ৬৭ ভাগ ছাত্র এবং ৬ দশমিক ৮০ ভাগ শ্রমিক। এর পেছনে ব্যয় হওয়া টাকার অংশও কম নয়। ৬০ লাখ মাদকসেবীর পেছনে খরচ করে ৯১,১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তন্মধ্যে কেবলমাত্র ফেনসিডিলই বছরে আমদানি হয় ১৭০০ কোটি টাকার, যা সীমান্ত পথে, যশোর, রাজশাহী, বেনাপোল, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, কুমিল্লা, আখাউড়া ও সিলেট হয়ে দেশে ঢুকছে।
মাদকাসক্তির বহু কারণের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় অন্যতম। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা, দারিদ্র্যের কষাঘাত, বেকারত্বের নৈরাশ্যও কম দায়ী নয়।
মাদকের ছোবল থেকে দেশের তরুণ ও যুব সমাজকে বাঁচাতে সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ তৈরি ও মটিভেশনাল প্রোগ্রামসহ মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করতে হবে। তরুণ ও যুবসমাজের মনে মাদকের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করতে হবে। ইসলামি জীবন যাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে। মাদকের আগ্রাসন প্রতিরোধে মাদক পাচারের সাথে সংশ্লিষ্ট ও ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মাদক পাচার রোধ ও মাদকের সহজপ্রাপ্যতা বন্ধ করতে হবে। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে মাদকের উৎপাদন এবং পার্শ্ববর্তী দেশের মাদক চোরাচালানের সব পথ বন্ধ করতে হবে। অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের প্রতি যতœশীল হতে হবে। শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কেবল রাষ্ট্রীয়ভাবে নয়, সামাজিক ও পারিবারিকভাবেও সচেতন হতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যায় পর্যন্ত সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মাদকের হাত থেকে তরুণদের মুক্ত করা সমাজের দায়িত্ব। আর এজন্য যথাযথ পদক্ষেপের বিকল্প নেই। আমাদের সবাইকে নৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
মুক্ত করতে হবে দেশের যুবসমাজকে। মাদকাসক্তি শুধু ব্যক্তির শারীরিক অবস্থারই অবনতি ঘটায় না বরং একটি সমাজের প্রচলিত মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা, সংস্কৃতি ও সভ্যতাকেও ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে। তাই আমাদের উচিত মাদকবিরোধী তীব্র আন্দোলনে সোচ্চার হওয়ার মধ্য দিয়ে যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করা। নয়ত মাদকের ভয়ঙ্কর থাবায় ধ্বংস হবে আমাদের সমাজব্যবস্থা সর্বোপরি রাষ্ট্রব্যবস্থা।
মো: হায়দার আলী সভাপতি জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা