দেশের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারে ক্রমেই গতিশীল হচ্ছে। এবার ভ্যাট ফাঁকি রোধে তথ্য যাচাইয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নতুন সফটওয়্যার ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বেচাবিক্রি অনুযায়ী যথাযথ ভ্যাট পরিশোধ করছে কিনা তা যাচাইয়ে বিজনেস ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে। ভ্যাট গোয়েন্দারা সম্প্রতি এই সফটওয়্যার ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে। ভ্যাট পরিশোধ সঠিকভাবে হয়েছে কিনা তা নতুন সফটওয়্যারের সাহায্যে খতিয়ে দেখা হবে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এনবিআর চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে কঠোর অবস্থানে থেকে কাজ করছে। নিয়মিত রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটনেও গুরুত্ব দিয়েছে। ওই লক্ষ্যে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে নতুন কৌশল নেয়া হয়েছে। সেজন্য ভ্যাট গোয়েন্দারা ব্যাংকিং লেনদেন হয়েছে এমন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংগ্রহ করেছে। ওই তালিকা থেকে যেসব প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়, রাজস্ব পরিশোধ, আমদানি-রপ্তানি, স্থানীয় বাজারে বিক্রির তথ্যের সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেনের তথ্যের সামঞ্জস্য পাওয়া যাবে না সেসব প্রতিষ্ঠানের গত ৩ বছরের ভ্যাট রিটার্নের তথ্য যাচাই করা হবে।
সূত্র জানায়, ১০০ কোটি টাকা বা তার বেশি লেনদেন হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকায় সিগারেট, সিরামিক, মোবাইল, অটোমোবাইল, তৈরি পোশাক খাত, জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ ভাঙা, ওষুধ, ইলেট্রনিকস, কোমল পানীয়, ব্যাংক, সিরামিক, টয়লেট সোপ, প্রাকৃতিক গ্যাসসহ অন্যান্য খাতের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অতীতে দেখা গেছে অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সারা বছর ভালো ব্যবসা করেছে, ব্যাংকেও কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। অথচ ভ্যাট রিটার্নে ওসবের কিছু উল্লেখ না করে মিথ্যা তথ্যে কম বেচাকেনা দেখিয়ে স্বল্প পরিমাণ ভ্যাট পরিশোধ করেছে। সেক্ষেত্রে ব্যাংকিং লেনদেন, আমদানি-রপ্তানির তথ্য, স্থানীয় বাজারে বিক্রি, উপকরণ ক্রয়সহ বিভিন্ন তথ্যের সঙ্গে রাজস্ব পরিশোধের তথ্যে বড় ধরনের অমিল থেকে যায়। নতুন এ সফটওয়্যারের সাহায্যে তা খতিয়ে দেখা হবে।
সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থাৎ ভ্যাট বাবদ এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক ৫৭ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা, আমদানি শুল্ক ৩৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক ৫৫ হাজার কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক ৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা আদায়ে হিসাব কষা হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে সরকারের কাছে সব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানই সমান। কাউকে হেয় করা সরকারের উদ্দেশ্য নয়। বরং সঠিক হিসাবে রাজস্ব আদায় এবং ব্যবসায় সহযোগিতা করাই সরকারের একমাত্র উদ্দেশ্য।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানান, এ দেশের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো রাজস্ব পরিশোধ করে বলেই প্রতিবছর এনবিআরের আদায় বাড়ে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই সৎ এবং হিসাবমতো রাজস্ব পরিশোধ করে থাকে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। ভ্যাট গোয়েন্দাদের উদ্দেশ্য ওসব রাজস্ব ফাঁকিবাজ প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে তাদের কাছ থেকে হিসাব মতো আদায় করা। সেক্ষেত্রে ম্যানুয়াল ও প্রযুক্তির সহযোগিতায় তদন্ত করা হবে। আর তদন্তে সহযোগিতা নিতে ইতিমধ্যে এসআইকুডা ওয়ার্ল্ড ও বিজনেস ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যার নামে একাধিক সফটওয়্যার সংযোজন করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ এবং অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করায় ব্যাংকিং লেনেদেনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা সহজ হবে।