মমতাময়ী মায়ের মতো পাশে এসে দাড়িয়েছেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয়ফুল দম্পতির পাশে। এ যেন মমতাময়ী মায়ের মতো সন্তানকে আগলে রাখা।
সম্প্রতি নিজেরাই তেলের ঘানি টানছেন ছয়ফুল দম্পতি একটি ছবি ফেসবুকে ফেসবুকে ভাইরাল হলে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। প্রতিবেদনটি চোখে পড়ার সাথে সাথে তিনি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসককে ছয়ফুল-মোর্শেদা দম্পতির পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেন। একই সময় লালমনিরহাট জেলা পুলিশ ও বসুন্ধরা গ্রুপও ওই দম্পতির পাশে এসে দাড়ায়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ছয়ফুল ইসলামের বাড়ি গিয়ে ঘানি টানার জন্য একটি গরু ও ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর। একই দিনে ছয়ফুল দম্পতিকে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি গরু উপহার দেন এসপি আবিদা সুলতানা। এর আগে, প্রতিবেদন প্রকাশের ওই দিনই ছয়ফুলের ঘর তৈরি ও সন্তানদের পড়ালেখার খরচের জন্য এক লাখ টাকা অনুদান দেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের সহধর্মিণী আফরোজা বেগম। একইসঙ্গে বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের পক্ষ থেকে তাদের দেয়া হয় আরও একটি গরু।
প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ঘানি টানার জন্য একটি গরু এবং আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার পর বেশ খুশি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউপির তেলিপাড়ার বাসিন্দা ছয়ফুল ইসলাম বলেন, নদীর স্রোতে যখন ভেসে যাচ্ছিলাম ঠিক সেই সময় বাচাঁর জন্য পাওয়া কাঠের গুড়ি বা খর কুটোর মতো পাশে এসে দাড়িয়েছেন মমতাময়ী মা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন থেকে আর নিজেদের ঘানি টানতে হবে না। যদিও তিনি বলেন যে গরু তিনি অনুদান হিসেবে পেয়েছেন সে গরুকে তেলের ঘানি টানার মতো তৈরী করতে প্রায় দুই মাস সময় লাগতে পারে। তাই এই দুই মাস সংসার চালাতে নতুন গরুর পাশাপাশি নিজেদেরও ঘানি টানতে হবে।
ঘানি টানতে তো আর তিনটে গরু লাগে না এমন প্রশ্নের উত্তরে ছয়ফুল বলেন, যে টাকা পেয়েছি তা দিয়ে চাষাবাদের জন্য একটু জমি বন্দক নিবেন। তেলের ব্যবসার পাশাপাশি সেই জমিতে চাষাবাদ করে সংসারে সচ্ছোলতা আনবেন। আর যারা তাকে গরু দিয়েছেন তাদের সাথে আলোচনার পর দুইটি গরু বিক্রি করে আরো একটি গরু কিনে যা টাকা থাকবে তা দিয়ে বাড়ি মেরামত ও সন্তানদের লেখা পড়া করার খরচ বহন করবেন।
তিনি আরও বলেন, প্রায়য় ২০ বছর থেকে ঘানি টানার জন্য তাদের গরু ছিল না, গরু কেনার টাকাও ছিল না। এ কারণে সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে স্ত্রী মোর্শেদা ও সন্তানদের স্কুলে যেতে না দিয়ে তাদের নিয়ে নিজেরাই ঘানি টানতাম। দির্ঘদিন পরে হলেও তার কষ্ট লাঘব হলো। এজন্য তিনি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া ও দির্ঘায়ু কামনা করেন। সেই সাথে বসুন্ধরা গ্রুপ ও লালমনিরহাট পুলিশ প্রশাসনকেও কৃতজ্ঞতা জানান তার পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য।
ছয়ফুলের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম বলেন, বাড়িতে ঘানি ভেঙে সরিষার তেল তৈরি ও বাজারে বিক্রি করা তার শ্বশুর বাড়ির বাব দাদার পেশা। ঘানি দিয়ে তেল বানানো শিল্পটি বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে। যদিও বর্তমানে ঘানি ভাঙা তেলের চাহিদা কম। তারপরেও তার স্বামী তাদের বাব দাদার পৈত্রিক পেশাটি প্রায় ২০ বছর ধরে আঁকড়ে রেখেছেন। আগের বাজারে ঘানির তেলের মুল্য না পাওয়ায় তার স্বামীর অন্য ভাইয়েরা এই পেশা ছেড়ে অন্য কাজ করেন। স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে যখন সংসার চলছিল ঠিক সেই সময় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মমতাময়ী মা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের পাশে এসে দাড়িয়েছেন। মায়ের মতো তার সন্তানদের আগলে রাখলেন। কথা গুলো বলতে বলতে তিনি কেঁদে ফেলেন। এজন্য তিনি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার দির্ঘায়ু কামনা করেন।
ছয়ফুলের স্ত্রী মোর্শেদা বলেন, ঘানি টানার জন্য গরু ও সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আর্থিক সহায়তা পেয়ে আমাদের ২০ বছরের কষ্ট লাঘব হলো। সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যৎ উপহার দিতে পারবো- ভাবতেই অনেক আনন্দ হচ্ছে।
মোর্শেদা বেগম আরও বলেন, ঘানি টানার জন্য গরু ও সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আর্থিক সহায়তা পেয়ে তাদের দির্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হলো। এভাবে কেউ তাদের পাশে এসে দাড়াবে তারা কোনদিন ভাবতেই পারেননি। এখন থেকে তাই আর সন্তানদের পড়া লেখার খরচের জন্য চিন্তা করতে হবে না। সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যৎ উপহার দিতে পারবো- ভাবতেই অনেক আনন্দ হচ্ছে।
ছয়ফুলের বড় ভাই শফিকুল ইসলাম বলেন, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউপির তেলিপাড়ায় আমরা যারা বসবাস করি আমরা সবাই সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত হয়ে আসছি। করোনা কালীন এই কঠিন সময়ে আমাদের তেলীপাড়ার কোন লোক সরকারী কোন সাহায্য পাইনি। এখানকার মেম্বার বা চেয়ারম্যান কোনদিন তাদের খোঁজ নিতে আসেনি। কিন্তু করুন সময়ে সরকার, পুলিশ প্রশাসন ও বসুন্ধরা গ্রুপ তার ভাইয়ের পাশে এসে দাড়ানোয় তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।