বৃহত্তর পাবনা জেলাকে বন্যা থেকে রক্ষা করতে ‘মুজিব বাঁধ’ যেন পাবনা জেলাবাসীর জন্য আশীর্বাদ হয়েছে। এই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময় পাবনা জেলার বেশির ভাগ অংশ বন্যায় প্লাবিত হত। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি ইশতিহারে তিনি পাবনা বেড়া উপজেলার যমুনা নদীর তীর ঘেষে বাঁধ নির্মাণের ঘোষণা দেন।
সরেজমিনে ঘুরে এলাকার প্রবীণ ব্যাক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে মাটি কেটে বেড়া উপজেলায় ১৫৭.৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। পরে এলাকাবাসী বাঁধটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন এবং পরবর্তীতে এলাকাবাসী নিজেরাই এই বাঁধের নামকরণ করে ‘মুজিব বাঁধ’।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী হেলিকপ্টারযোগে পাবনার বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়নের নগরবাড়ী এলাকার বসন্তপুর গ্রামে এক সংক্ষিপ্ত জনসভায় উপস্থিত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর পাবনায় আসার খবরে দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এসে জড়ো হতে থাকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত নগরবাড়ী এলাকায়। বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখতে আসা মানুষের কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় নগরবাড়িসহ এর আশপাশের এলাকা। জনসভা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। সেই ঐতিহাসিক সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধু মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় নির্যাতনের শিকার নারীদের বীরাঙ্গনা খেতাবে ভূষিত করেন।
বাঁধটি নির্মাণের পর জেলার সুজানগর ও বেড়া উপজেলায় পদ্মা ও যমুনা নদীর পার বরাবর বাঁধ নির্মাণের পর থেকে জেলার ৯০ ভাগ এলাকা বন্যামুক্ত হয় এবং পাবনার মানুষের জন্য তা আশীর্বাদে পরিণত হয়। একইসঙ্গে যাতায়াতের জন্য তৈরি হয়েছে প্রশস্ত সড়ক। এলাকার এক ফসলি জমি থেকে এখন পাওয়া যায় তিন ফসল।
প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হচ্ছে মৌসুমি সবজি, ধান, পাট, আঁখ, চিনাবাদাম, আলু, পটল, রসুনসহ অন্যান্য অর্থকরী ফসল। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজসহ কাঁচা তরকারি এক তৃতীয়াংশ সরবরাহ হয় পাবনা থেকে। পদ্মা, যমুনা, হুরাসাগর ও বড়াল নদীর বন্যা থেকে রক্ষা করতে নির্মিত এই বাঁধ পাবনার ৯টি উপজেলা, নাটোরের দুটি এবং সিরাজগঞ্জের একটি উপজেলার আংশিক এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত।
বেড়া পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হামিদ বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে মাটি কেটে বাঁধ দেয়া সেই বাঁধের উপর তাঁর সৃতি নামফলক উম্নচোন করা হয়েছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য ঐতিহাসিক বাঁধটি নির্মাণের ৪৮ বছরেও এখানে কোনও স্মৃতিফলক ছিল না। বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে দীর্ঘদিন পর মহান নেতার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এ বছর নগড়বাড়িতে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়। যাতে করে নতুন প্রজন্ম মুজিব বাঁধের নামটা স্পটভাবে জানতে পারে। বাঁধ নির্মানের পর থেকে জেলার কৃষক পরিবারগুলো কৃষিপণ্যের উৎপাদন ঘাটতি কাটিয়ে উঠেছে। কৃষি সমৃদ্ধ জেলা হয়ে উঠেছে পাবনা।