অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে গণপূর্ত বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে। ওই লক্ষ্যে গণপূর্ত অধিদফতরে শুদ্ধিকরণ কর্মসূচী চলছে। সেজন্য একটি দুর্নীতিবিরোধী কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনিয়ম দুর্নীতির দায়ে গত কয়েক মাসে ১৪ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন এক জায়গায় থাকা অনেক কর্মকর্তার দফতর বদল করা হয়েছে। তাছাড়া বহুল আলোচিত বালিশকান্ডে যেসব কর্মকর্তা সহযোগিতা দিয়েছে বর্তমানে তেমন ৩৪ কর্মকর্তার মধ্যে অনেকেই জেলে আছেন। বাকিরা জামিনে রয়েছে। তাদের বিচার হবে। গণপূর্ত বিভাগে আর দুর্নীতি করতে দেয়া হবে না। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে বহুল আলোচিত বালিশ কা-ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ৩৪ কর্মকর্তা ও ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করে মামলা করেছে। ওই ঘটনায় ১৩ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। তারা জেল হাজতে আছেন। বাকি কর্মকর্তারা জামিনে আছে। দুদকের তদন্তে দেখা গেছে একটি বালিশের পেছনে ব্যয় করা হয়েছে ৬ হাজার ৭১৭ টাকা। তার মধ্যে দাম বাবদ ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা আর বালিশটি নিচ থেকে ফ্ল্যাটে ওঠাতে ৭৬০ টাকা খরচ উল্লেখ করা হয়েছে। একটি বৈদ্যুতিক চুলা কেনায় খরচ দেখানো হয়েছে ৭ হাজার ৭৪৭ টাকা আর তা নিচ থেকে ফ্ল্যাটে তুলতে লেগেছে ৬ হাজার ৬৫০ টাকা। একটি ইলেকট্রিক কেটলি কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৩১৩ টাকায় এবং তা ফ্ল্যাটে নিতে লেগেছে ২ হাজার ৯৪৫ টাকা। একইভাবে একটি কক্ষ পরিষ্কারের মেশিন কিনতে ১২ হাজার ১৮ টাকা এবং ফ্ল্যাটে ওঠাতে ৬ হাজার ৬৫০ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের দুর্নীতি নিয়ে দিনে-দুপুরে ডাকাতি বলে বর্ণনা করেছিলেন সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীও। ওসব দুর্নীতির কারণে ক্ষমতাসীন দলের জন্য অনেক বেশি রাজনৈতিক মূল্য দিতে হয়। তাতে সরকার এবং দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা সরকারের অর্জন সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে, সরকারের অনেক সাফল্যে কালিমা লেপন করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, রূপপুরের ঘটনার পর থেকে গণপূর্ত অধিদফতর দেশের মানুষের কাছে একটি নেতিবাচক নাম হিসেবে পরিচিতি পায়। ওই পরিচিতি দূর করতে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী দুটি কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে ৩৪ কর্মকর্তা বা ব্যক্তি ওই ঘটনায় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তাদের বিষয়টি এখন আদালতের এখতিয়ারে রয়েছে। আর যাতে কখনো এ ধরনের কোন ঘটনা না ঘটে ওই বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগকে সচেতন করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চারটি ভবনে আসবাব ও ইলেক্ট্রনিক পণ্য সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- সাজিন এন্টারপ্রাইজ, মাজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও জিকেপিবিএল-পায়েল-এইচএল কনসোর্টিয়াম। তার মধ্যে সব থেকে নি¤œমানের মালামাল সরবরাহ করেছে সাজিন। অথচ ওই প্রতিষ্ঠানটি একাই পেয়েছে ১৪৬ কোটি টাকার তিনটি কাজ। আর অপর প্রতিষ্ঠান মাজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ করেনি। তবে জিকেপিবিএল-পায়েল-এইচএল কনসোর্টিয়ামের সরবরাহ অপেক্ষাকৃত ভাল ছিল। মূলত বালিশকান্ডে পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের অধীনে গ্রিন সিটি আবাসিক প্রকল্পের জন্য আসবাবপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়ে অস্বাভাবিক দুর্নীতির ঘটনা দেশব্যাপী পরিচিতি পায়। তাতে গণপূর্ত বিভাগের বড় বদনাম হয়। এখন ওই বদনাম মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। বর্তমানে গণপূর্ত বিভাগ ওই কাজটি করে যাচ্ছে।
এদিকে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, গণপূর্ত বিভাগে শৃঙ্খলা ফেরাতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি গোপনে কাজ করছে। কোন কর্মকর্তা কি ধরনের অনিয়ম করছে তার রিপোর্ট দিচ্ছে। রিপোর্ট অনুযায়ী অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আরো কয়েকজন কর্মকর্তার রিপোর্ট এসেছে। অচিরেই তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। গণপূর্তের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সব কর্মকর্তা কর্মচারীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে। কেউ দুর্নীতি ও অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ জানান, দুর্নীতি দমনে সরকার জিরো টলারেন্স অবস্থান নিয়েছি। গণপূর্ত বিভাগের অসৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করা হয়েছে। যারা বালিশকান্ডের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে বিচার চলছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের বিরুদ্ধেও চলছে অভিযান। যারা প্রভাব খাটাতে যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গণপূর্ত অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ রয়েছে কোন দুর্নীতিতে সহ্য করা হবে না। গণপূর্ত বিভাগ সরকারী কাজ করে। তারাই যদি সরকারের ক্ষতির কারণ হয় তা মেনে নেয়া যায় না।