দেশের বিপুলসংখ্যক শিল্প প্রতিষ্ঠান লাভে পরিচালিত হলেও শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে শিল্পমালিকরা নির্ধারিত অর্থ জমা দিচ্ছে না। বিধান রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লাভে পরিচালিত হলে লভ্যাংশের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ টাকা শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে জমা দিতে হবে। কিন্তু বেশির ভাগ শিল্পপতিই বিদ্যমান ওই বিধানের তোয়াক্কা করছে না। এমন পরিস্থিতিতে অবস্থায় লভ্যাংশের নির্দিষ্ট অর্থ কল্যাণ তহবিলে জমার তাগিদ দিয়ে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন ২২৫টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছে। তাগিদপত্র দেয়ার পরও যদি লাভে পরিচালিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান কল্যাণ তহবিলে অর্থ জমা না দেয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ১০০ টাকা লাভের বিপরীতে ৫ টাকা শ্রমিক কল্যাণে ব্যয়ের বাধ্যবাধকতা ছিল। আইনে ওই ৫ টাকার ৮০ শতাংশ শ্রমিকদের সঙ্গে ভাগাভাগি এবং ২০ শতাংশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে জমা দেয়ার বিধান রাখা হয়। বিগত ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধন করে ১০ শতাংশ সরকারের বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে এবং বাকি ১০ শতাংশ কল্যাণ তহবিলে জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়। এর ব্যত্যয় হলে সংশোধিত শ্রম আইনে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। তারপরও অনেক প্রতিষ্ঠানপ্রধান শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে অর্থ জমা দিচ্ছে না।
সূত্র জানায়, শ্রমিক কল্যাণ তহবিল নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনিয়ম বন্ধে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে গত বছর একটি সাব-কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। ওই কমিটি শ্রম মন্ত্রণালয়, ফাউন্ডেশন ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে গত ফেব্রুয়ারিতে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। ওই প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশও উঠে এসেছিল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সাব-কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ে একটি প্রতিবেদন সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপন করে শ্রম মন্ত্রণালয়। ওই প্রতিবেদনে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে অর্থ জমা না দেয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। সংসদীয় সাব-কমিটির সুপারিশ ছিল লাভজনক সব প্রতিষ্ঠানকে লভ্যাংশের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমিক প্রদানসংক্রান্ত বিধানের আওতায় আনার জন্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান। সেক্ষেত্রে শতভাগ রফতানিমুখী সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কার্যাদেশের বিপরীতে প্রাপ্ত মোট অর্থের দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ জমা প্রদানের কথা বলা হয়। কিন্তু ওই সুপারিশের অগ্রগতি সম্পর্কে মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটিকে জানায়, বিষয়টিতে পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রণালয়ের সচিব বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ইতিমধ্যে তিনটি চিঠি পাঠিয়েছে। সংসদীয় সাব-কমিটির আরেকটি সুপারিশ ছিল স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেটের যেসব প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ফান্ড এবং কল্যাণ তহবিলের তালিকাভুক্ত, তাদের লভ্যাংশের নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের জন্য চিঠি দেয়া। ওই বিষয়ে উদ্যোগ নিতে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের কল্যাণ সাধন, অসুস্থ ও অক্ষম বা অসমর্থ শ্রমিকদের আর্থিক সাহায্য প্রদান, দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে সাহায্য প্রদান, শ্রমিকদের জীবন বীমার জন্য যৌথ বীমা ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং শ্রমিকের পরিবারের মেধাবী সদস্যদের শিক্ষাবৃত্তি দেয় শ্রমিক কল্যাণ তহবিল। বর্তমানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ফাউন্ডেশনের ২০ সদস্যের একটি পরিচালনা বোর্ড রয়েছে। পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, ভাইস চেয়ারম্যান মন্ত্রণালয়ের সচিব। তাছাড়া শ্রমিক ও মালিকপক্ষের ৫ জন করে প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৭ জন যুগ্ম সচিব এ বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের প্রধান উৎস হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মুনাফার অংশ। তাছাড়া এ তহবিলে সরকারও অনুদান দেয়। ফাউন্ডেশনের তহবিলে অর্থ আসে বিনিয়োগ থেকে এবং ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে।
এদিকে শ্রমিক প্রতিনিধিদের দাবি, প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশে শ্রমিকদের অংশীদারিত্বের বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সহজভাবে নিচ্ছে না। এক ধরনের অনীহা থেকেই তারা সরকারি তহবিলে অর্থ জমা দেয় না। ওই কারণে শ্রমিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে গঠিত এ তহবিলটি আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছে না।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে শ্রম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. মুজিবুল হক এমপি জানান, শ্রমিকদের কল্যাণের জন্যই শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের অর্থ ব্যবহার করার সুপারিশ করা হয়েছে। তাছাড়া শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের অর্থ ন্যায়ভিত্তিক সমহারে বণ্টনের জন্যও সংসদীয় কমিটির বৈঠক থেকে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।