বিদেশ ফেরত বাংলাদেশী কর্মীরা নানা শর্তের কারণে নিজেদের পুনর্বাসনে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ পাচ্ছে না। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক বলছে, নীতিমালা না মেনে ঋণ দেয়া সম্ভব নয়। আর প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় বলছে, ঋণ বিতরণ সহজ করতে অতিসম্প্রতি নীতিমালা নমনীয় করা হয়েছে। করোনায় কাজ হারিয়ে দেশে ফেরা এবং বিদেশে মৃত্যুবরণকারীদের পরিবারের জন্য সরকার গত এপ্রিলে ২০০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করে। কর্মী বিদেশ যাওয়ার সময় দেয়া ফি থেকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিলে জমা টাকা থেকে ওই প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। ৪ শতাংশ সুদে বিদেশফেরতদের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে গত ১৩ জুলাই প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সরকার মালিকানাধীন প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে। তার মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ পাওয়ার কথা। গত ১৫ জুলাই থেকে ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু হলেও গত দুই মাসে একজনও ঋণ পায়নি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ভুক্তভোগীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা মহামারীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মী দেশে ফিরে এসেছে। তারা এখন নিজেদের পুনর্বাসনে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সরকারও তাদের সহায়তায় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। ওই ঋণ পেতে অনেক প্রবাস ফেরত কর্মী ঋণের জন্য আবেদন করলেও প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের নানা শর্তের বেড়াজালে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ প্রণোদনা প্যাকেজে টাকার পাহাড় জমেছে। আগের নীতিমালা অনুযায়ী গত ১ মার্চের পর যারা দেশে ফিরেছে তাদের ঋণ পাওয়ার যোগ্য মনে করা হয়। তবে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী গত ১ জানুয়ারি থেকে যারা ফিরেছে তারাও ঋণ পাবেন। পাশাপাশি ঋণ পাওয়ার জন্য জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয় থেকে প্রত্যয়নপত্র নেয়ার বাধ্যবাধকতা বাতিল করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, আগের নীতিমালার ৪(ঘ) শর্তাবলিতে বলা হয়েছিল, ঋণের আবেদনকারী ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসী কর্মী প্রমাণে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয় থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। তাতে অনেক আবেদনকারীরাই নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মী প্রমাণ করতে পারছিল না। কারণ দেশে ফেরত আসাদের কেউ চাকরি হারানোর সনদ দেখাতে পারেনি। তবে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের জারি করা সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী বিদেশ গমন ও দেশে ফেরতের পাসপোর্টের ফটোকপি অথবা বিএমআইটির স্মার্টকার্ড সনদ অথবা বিদেশে চাকরির চুক্তিপত্র দিয়ে ঋণের আবেদন করা যাবে।
সূত্র আরো জানায়, ঋণ পেতে আগ্রহীদের ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনেক ক্ষেত্রে নীতিমালার বাইরে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয়া হচ্ছে। নীতিমালায় কোথাও বলা হয়নি আগে ব্যবসা চালু করে তারপর ঋণ নিতে হবে; বরং নীতিমালায় প্রকল্প ঋণ ও চলতি পুঁজি- দুই ধরনের ঋণের সুযোগই রাখা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় ঋণের আরো ৮টি শর্ত শিথিল করেছে। তবে এর ৭টিতে সামান্যই পরিবর্তন এসেছে। উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে সংশোধিত নীতিমালায় বিভিন্ন কাগজপত্রের সত্যায়িত কপির বদলে ফটোকপি দিয়ে ঋণ আবেদন করা যাবে। প্রশিক্ষণ সনদের পরিবর্তে প্রশিক্ষণ গ্রহণের অঙ্গীকার দিয়ে আবেদন করা হবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহতাব জাবীন জানান, ঋণ আবেদনকারীদের অনেকের প্রস্তাবনাই পূর্ণাঙ্গ নয়। ঋণগ্রহীতা কিসের ব্যবসা করবে, কত টাকা ঋণ লাগবে আবদনে এসবের বিস্তারিত থাকতে হবে। এসব কারণে ঋণ বিতরণে বিলম্ব হচ্ছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক একটি নতুন ব্যাংক। করোনা আসবে তা কারোর জানা ছিল না। ব্যাংকেরও ঋণ বিতরণের মতো তেমন প্রস্তুতি ছিল না। এমন তাড়াও ছিল না। এখন ঋণের শর্ত অনেক শিথিল করা হয়েছে। নীতিমালা নমনীয় করা হয়েছে। এখন থেকে ঋণ পাবেন প্রবাসীরা। ২০০ কোটির প্যাকেজের সঙ্গে আরো ২৫০ কোটি টাকা যোগ হয়েছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে আরো ২৫০ কোটি টাকা আসবে। সব মিলিয়ে ৭০০ কোটি টাকার প্যাকেজ। আশা করা যায় আগামী মার্চ-এপ্রিলে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আরো ৪৫০ কোটি টাকার তহবিল পাওয়া যাবে। ফলে বিদেশফেরতদের পুনর্বাসনে টাকার অভাব হবে না।