জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার তারাকান্দি অবস্থিত যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (জেএফসিএল)-এর ডিলাররা গত ৬দিন যাবত কারখানা থেকে সার উত্তোলন বন্ধ রেখেছে। ডিলারদের অভিযোগ,আমদানীকৃত নিম্নমানের জমাটবাধা, ছেড়া-ফাটা বস্তায় ওজনে কম থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত তাই তারা সার উত্তোলন বন্ধ রেখেছে। অপরদিকে সার সরবরাহ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন এলাকার কৃষকসহ সার সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত শত শত ট্রাক পরিবহন শ্রমিকসহ ট্রান্সপোর্ট এজেন্সীগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমদানীকৃত নিম্নমানের জমাটবাধা, ছেড়া-ফাটা বস্তায় ওজনে কম থাকায় ডিলাররা গত গত ২৩ সেপ্টেম্বর বুধবার থেকে ৬দিন কারখানা থেকে সার উত্তোলন বন্ধ রেখেছে। দেশের উত্তরবঙ্গসহ ১৯ জেলার প্রায় ২১শ' ডিলার যমুনা সার কারখানা থেকে ইউরিয়া সার উত্তোলন করে ১৯ জেলায় সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু গত ৬দিন যাবত যমুনা সার কারখানার প্রায় ২১শ নিবন্ধিত ডিলার তারা সার উত্তোলন না করে বন্ধ রেখেছেন। অতিসম্প্রতি ঘাটে ঘটে চাঁদাবাজিসহ একই অভিযোগে ডিলাররা সার উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। পরে ডিলারদের সাথে করখানা কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়। ওই আলোচনায় প্রতি ট্রাকে ১২ মেট্রিকটন সার এর মধ্যে ১০মেঃ টন যমুনা ইউরিয়া সারের সাথে ২ মেঃ টন আমদানি করা জমাট বাধা সার দিবে ডিলারদের এই সমঝোতায় সার উত্তেলন শুরু করে ডিলাররা। কিন্তু ৩৫ দিন যেতে না যেতেই আবারোও একই অভিযোগে গত বুধবার থেকে সার উত্তোলন বন্ধ করে দেয় ডিলাররা। এতে করে বিপাকে পড়েছে এলাকার কৃষকসহ সার সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত শত শত ট্রাক ড্রাইভার-হেলপার, কুলি শ্রমিকসহ ট্রান্সপোর্ট এজেন্সীগুলো।
এ বিষয়ে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জগন্নাথগঞ্জ ঘাট বণিক সমিতির সভাপতি আলহাজ মোজাম্মেল হক (মুকুল)-এর সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি কারখানা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তোলে বলেন- কারখানা কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতি বছর হাজার হাজার মে.টন সার খোলা আকাশের নীচে রেখে রোদ পুড়ে- বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট করে কোটি কোটি টাকা ক্ষতি করে থাকে কারখানা কর্তৃপক্ষ। একদিকে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অপরদিকে ডিলার এবং প্রন্তিক কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক কথায় সার সংরক্ষণ চরম উদাসিনাতার রয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষের। প্রতি বর্ষা মৌসুমে খোলা আকাশের নীচে রাখা সার পঁচে গলে নষ্ট হয়ে সারের পানিতে ভেসে কারখানা আশপাশের হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। মরে যায় গাছপাতা পুকুর ও নদীর মাছ। কারখানা কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতায় হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্র। তিনি আরো বলেন,যেহেতু কারখানা এলাকায় প্রচুর খালী জায়গা রয়েছে সেইসব স্থানে গোডাউন নির্মাণ করে সার সংরক্ষন করলে একদিকে সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হবে না। অন্যদিকে কৃষকসহ সার বিক্রেতাগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বাঁচবে কারখানার আশপাশের কৃষকের ফসল। বাঁচবে প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্র।
এ ব্যাপারে যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী সুদীপ মজুমদার-এর সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমরা সার নিয়ে বসে আছি। ডিলাররা না নিলে কী করতে পারি? তিনি আরো বলেন- সার জমাট বাধঁলেই গুনগত মান নষ্ট হয় না। জমাটবাধা, ছেড়া-ফাটা বস্তার সার রি-ব্যাগিং করে সরবরাহের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি ডিলারদের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে সার সরবরাহের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।