কোভিড-১৯ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মহামারির শেষ কবে এ প্রশ্নের বিশ্বজুড়ে এখনো কোন উত্তর অজানা থাকলেও এর মধ্যেই দেশে সময় ঘনিয়ে আসছে পৌরসভা নির্বাচন। গত ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়। নিয়মানুযায়ী এ বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে এসব পৌরসভার মেয়াদ শেষ হবে। পৌরসভা নির্বাচন বিধি অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বেই ওইসব পৌরসভায় নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রস্তুতি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। দুর্গাপুর পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর। নৌকা প্রতীকের বিজয়ী প্রার্থী হাজী আবদুস ছালাম শপথ গ্রহণ করেছিলেন ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি। আর মেয়াদোত্তীর্নের তারিখ ২০২১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের কোন এক সময়ে দুর্গাপুর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে (নিয়ন্ত্রণে থাকলে) এবং বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভাগুলোতে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে। ৪০ থেকে ৪৫ দিন সময় হাতে রেখে এসব পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন নির্বাচন কমিশন। এ বছরও দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
দুর্গাপুর পৌরসভার নির্বাচনে ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌঁড়ঝাঁপ শুরু চলমান রেখেছেন। সম্ভাব্য মেয়র, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা করোনা পরিস্থিতির কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় এবং খোঁজ খবর নিচ্ছেন। মহামারি করোনাকালীন সময় কেউ কেউ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করছেন। পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের করোনার সময় খাদ্য সামগ্রী হিসেবে চাল, ডাল, আলু, তেল, পেয়াঁজ, রসুন এবং মাস্ক,সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার,পানির ট্যাঙ্ক বিতরণ করতে দেখা গেছে। তবে করোনার কারণে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুক ও মোবাইল ফোনে খোঁজ খবর নিতেও দেখা যায়। এমনকি ধর্মীয় উৎসবে দুর্গাপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী আলাল উদ্দিন আলাল দরিদ্র ও অতিদরিদ্র পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রী ও বস্ত্র বিতরণ করেছেন।
আসন্ন দুর্গাপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে ৮ জন, বিএনপি থেকে ২ জন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার সর্বস্তরের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব,বীরমুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তান,সমাজ সেবক,মানবতায় নিবেদিত প্রাণ আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হেভিওয়েট প্রার্থী আলাল উদ্দিন আলাল, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব আবদুস ছালাম, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান কামাল পাশা,সাবেক পৌর মেয়র শ.ম জয়নাল আবেদিন, জেলা পরিষদ সদস্য আওয়ামী লীগ সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সফিকুল ইসলাম সফিক, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য আবদুল হান্নান, তরুণ সমাজসেবক ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সজয় চক্রবর্তী, পৌরসভা ৩নং ওয়ার্ড আ.লীগ সভাপতি নিজাম উদ্দিন নিজাম, উপজেলা যুবলীগ সহ-সভাপতি সুমন চৌধুরী পাভেল দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রার্থীরা জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের সাথে জোড় লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন হাজী জামাল উদ্দিন, প্রাক্তন পৌর চেয়ারম্যান শুভেন্দু সরকার পিন্টু। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় বিএনপি থেকে সম্ভাব্য এ উভয় প্রার্থীই দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যার যার অবস্থান তুলে ধরছেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আরো কয়েকজনের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বীরমুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তান,সমাজ সেবক,মানবতার নিবেদিত প্রাণ আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আলাল উদ্দিন আলাল মেয়র পদে নির্বাচনে মতামত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির জনগণের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে আমার। কথায় নয় আমি কাজে বিশ্বাস করি এবং নির্বাচিত হলে মুরব্বীদের যথোপযুক্ত সম্মান প্রতিষ্ঠা করবো। আল্লাহ যদি আমাকে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত করেন তবে জনসাধারণের কোনো কাজের জন্য বেগ পেতে হবে না। তিনি আরো বলেন, সকল ওয়ার্ডের জনসাধারণ আমাকে মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য আশ্বস্ত করেণ এবং জনসাধারণের আন্তরিক ভালোবাসা ও স্নেহভাজন আলাল হয়ে সব সময় তাদের পাশে থাকতে চাই। আমি ইতোমধ্যে তাঁদের পাশে থেকে সর্বাত্বক সহযোগিতা ও ভালবাসা দিতে বিন্দু মাত্র কুন্ঠাবোধ করিনি। সবার পাশে, সুখে, দুঃখে সর্বদাই নিবেদিত থাকবো এটা আমার নির্বাচনী প্রতিজ্ঞা।
আওয়ামী লীগ থেকে অপর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব আবদুস ছালাম পৌরসভায় উন্নয়নের কাজ করেছেন দাবি করে বলেন, দুর্গাপুর পৌরসভাকে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করেছি। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলমান। তিনি আরো বলেন, দল ও জনগণ যদি সুযোগ দেয় তবে আমি অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করবো।
বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক জানান, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। চিন্তা, চেতনা আর মননে আওয়ামী লীগের নিবেদীত কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। আমি কারও সাথে ক্ষমতার অপব্যবহার করিনি। আমি দলীয় মনোনয়ন পেতে সর্বাত্বক চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি দলীয় মনোনয়ন পাবো। দুর্গাপুর পৌর সদরে একটি লোকের সাথেও কালো মুখে কথা বিলিনি। পৌরসদরের সর্বস্থরের ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি।
প্রাক্তন মেয়র শ.ম জয়নাল আবেদীন দাবি করে বলেন,আমি বিগত সময়ে পৌরসভাকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করেছি। আবারও এ পদে নির্বাচিত হলে একটি উন্নত পৌরসভায় রুপ দিবো ইনশাল্লাহ।
উপজেলা যুবলীগ সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্য আবদুল হান্নান এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি সারাটা জীবন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছি। আমি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে একটি আদর্শ ও সমৃদ্ধ পৌরসভা গঠন করাই হবে আমার প্রথম লক্ষ্য। আমি আপাদমস্তক আওয়ামীলীগার হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পাবো আশা করছি। দলের ত্যাগী একজন কর্মী হিসেবে মাননীয় নেত্রীর কাছে প্রত্যাশা করবো নৌকার টিকিট পেতে।
মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষিত আ.লীগ তরুণ নেতা, উদার, বিনয়ী ও সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী সজয় চক্রবর্ত্তী মেয়র পদে নির্বাচনের মতামত ব্যক্ত করে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের নিয়ে গ্রুফওয়ার্ক কাজ করছি। জনবান্ধব, ডিজিটাল ও আধুনিক মানের পৌরসভা গঠনই হবে আমার টার্গেট জনগন তার সুফল ভোগ করবে। জনভোগান্তি লাগবে আমি নিরন্তর উদার, জনসেবাই আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে কাজ করে।
বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে চান পৌরসদরের দশভূজা বাড়ি মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন পৌর চেয়ারম্যান শুভেন্দু সরকার পিন্টু বলেন, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ আমাকে মূল্যায়ন করবে এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো।
এদিকে, বিএনপি থেকে অপর প্রার্থী হাজী জামাল উদ্দিন মাস্টার দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে মতামত প্রকাশ করেন। তিনি গত নির্বাচনেও বিএনপি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, দল ও জনগণ আমাকে সমর্থন দিলে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি জয়লাভ করবো। তিনি আরো বলেন, পৌরসভার জনগণের প্রতি আমার শতভাগ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে এবং নির্বাচিত হলে জনসাধারণের সকল প্রকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে।
উপজেলা যুবলীগ সহ-সভাপতি সুমন চৌধুরী পাভেল দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রগণে আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি দলীয় সমর্থনে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হলে আমি জয়লাভ করবো এবং আমার জনগেণের প্রতি আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। জনগণ আমাকে মূল্যায়ন করে নির্বাচিত করবেন বলে আশা রাখি।
উল্লেখ্য যে ১৯৯৪ সালে দুর্গাপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৯ সালে প্রথম নির্বাচনে মোঃ কামাল পাশা ও ২০০৪ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনে শুভেন্দু সরকার পিন্টু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ২০১১ সালে তৃতীয় নির্বাচনে শ.ম জয়নাল আবেদীন ও ২০১৬ সালে চতুর্থ নির্বাচনে মোঃ আবদুস ছালাম মেয়র নির্বাচিত হন। বর্তমানে পঞ্চম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রার্থীরা।