নেত্রকোনা দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী পর পর বন্যায় নদী তীরবর্তী কামারখালী গ্রাম সহ আশ-পাশের এলাকা গুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ফলে ঐ গ্রামের অন্তত ৩০টি পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। রাস্তাঘাট সহ অনেক বাড়ীঘর নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। সরকারি ভাবে উল্লেখযোগ্য কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় সেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমেই শেষ আশ্রয় রক্ষার যুদ্ধে নেমেছেন এলাকাবাসী। প্রায় প্রতিদিনই এলাকার নারী-পুরুষ সকলেই কাজ করতে এগিয়ে আসছে। গ্রামবাসীদের স্ব-উদ্যোগ নদী ভাঙন রোধে ব্যাপক সারা ফেলেছেন।
নদী ভাঙ্গন নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রখর রোদ উপেক্ষা করে কামারখালী গ্রামের শতশত আদিবাসী নারী-পুরুষ নদীর ভাঙন ঠেকাতে নিজস্ব অর্থায়নে বস্তা কিনে বালু ভর্তি করে এ কাজে অংশ নিচ্ছেন অনেকেই। সময়ের বাতিঘর, ব্যবসায়ি আলা উদ্দিন আলাল, ওয়াইডব্লিউসিএ, কারিতাস ময়মনসিংহ, মাস্টার এপ্রিল বনোয়ারী ফাউন্ডেশন, ইউপি চেয়ারম্যান শুব্রত সাংমা, সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান, ডন বসকো কলেজ, সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল সহ অনেক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি উদ্যোগে নগদ অর্থ ও প্লাস্টিক ব্যাগ, কেউ বা মুড়ি, চিড়া শুকনো খাবার সহায়তা দিচ্ছেন কামারখালী নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির কাছে। এলাকাবাসীর লক্ষ্য একটাই, নদীরপাড় ভাঙন থেকে নিজের বসতভিটা রক্ষা করতে হবে। এ কাজে গ্রামের আবাল বৃদ্ধবণিতা যুবক ও কিশোর-কিশোরীরাও নেমে এসেছে। প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর কাছে মোনাজাত, কেউবা মোমবাতি জে¦লে যিশু খৃষ্টের কাছে প্রার্থনা করে সেচ্ছাশ্রমের কাজ করেন।
নদী ভাঙ্গন কমিটির আহ্বায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক জানান, নদীর দুই পাড়ে স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মানের দাবীতে বেশ কয়েক বার মানববন্ধন করেছি, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে সরেজমিনে তদন্তও করে গেছেন বেশ কয়েকবার, এখন পর্যন্ত কোন স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। নদীতে তৃতীয় বারের মতো পানি হওয়ায় এবং নৌকায় বাংলা ড্রেজার বসিয়ে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে নদীর দুই পাড়ে তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই বিলীন হয়ে যাবে অত্র এলাকার নানা স্থাপনা। ইতোমধ্যে ভাঙ্গন প্রতিরোধে সহায়তা করতে অনেক প্রতিষ্ঠানই এগিয়ে এসেছেন, আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো)নেত্রকোনা জেলার উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান প্রতিবেদক’কে বলেন, অল্প দিনের ব্যবধানে অত্র এলাকায় পর পর বন্যা হওয়ায় পানির চাপে বেশ কিছু এলাকা ভেঙে গেছে। ইতোমধ্যে অত্র এলাকায় স্থায়ীবাঁধ নির্মানের জন্য প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানম বলেন, সোমেশ্বরী নদীর ভাঙন ঠেকাতে ইতোমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন সহ পানি উন্নয়ন রোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েক বার এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ নিয়ে স্থানীয় বাঁধ নির্মানের বড় প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু বরাদ্দও পাওয়া গেছে। নদীর পানি কমে কাজের পরিবেশ হলেই রক্ষা কাজ শুরু করা হবে।