সংসদে বিরোধী দলের গুরুত্ব ও ভূমিকা অপরিসীম। এটাকে কোনো মতেই বিরোধী দলের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। সংসদে বিরোধী দল থেকে মন্ত্রীর মর্যাদায় সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করাই বড় কথা নয়। দেশের জনগণের অভাব, অভিযোগ, সুখ, দুঃখ, সুযোগ সুবিধা ও অসুবিধার কথা তুলে ধরাও বিরোধী দলের দায়িত্ব কর্তব্যেরই অংশ বিশেষ। বর্তমান সরকারি দল ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপিও বেশ কয়েকবার সংসদের বিরোধী দলে ছিল। তারা বিরোধী দলে থেকেও সংসদের আলোচনায় দেশের মানুষের সুযোগ সুবিধা, অসুবিধা ও দুঃখ কষ্ট কম আলোচনা করেনি। যা সংসদ অধিবেশনের প্রসিডিংয়ে দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনের পর সংসদে বিরোধী দলের নেতা হয়ে আসা বর্তমান সংসদের বিরোধী দলের মধ্যে তা পরিলক্ষিত হয়নি। অনেক সময় সরকারি দলের অনেক সংসদ সদস্যদের মুখে জনগণের সমস্যার কথা বলতে শুনা যায়। অপরদিকে বিএনপি ও গণফোরাম থেকে নির্বাচিত হয়ে সংসদে রয়েছে তাদের কথা নাই বা বললাম। তাদের মধ্যে অনেকেই ফ্লোর নিয়ে দুকথা বলার সময় যে অবতারণার সৃষ্টি হয় তা কারও কম লক্ষণীয় নহে।
বর্তমান সংসদের বিরোধী দল ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর সংসদের শুধু বিরোধী দলেই ছিল না তাদের মধ্যে কয়েকজন সরকারের মন্ত্রী পরিষদেও ছিল। তখন তাদেরকে সংসদে ও সংসদের বাহিরে জনগণের জন্য তেমন কথা বলতে দেখা যায়নি। তবে মাঠের বিরোধী দল হিসেবে বিএনপিকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। একটার পর একটা ইস্যু নিয়ে ওরা জনগণের কাতারে রয়েছে। তদোপরি জনগণের কাছে সংসদের বিরোধী দলের বদনাম কেটে যায়নি। বর্তমান সংসদের বিরোধী দলকে অনেকেই গৃহপালিত বিরোধী দল বলতে কুন্ঠাবোধ করেনি। সংসদের এই বিরোধী দল বাংলাদেশের রাজনীতিতে কত ধরণের বিভূতিভূষনের খেলায় যে অবতীর্ণ হয়েছে তার যেন শেষ নেই। ওরা সংসদের বিরোধী দলে থেকেও সরকারের মন্ত্রী হওয়ার খায়েশকেও বাদ দিতে চায় না। অনেকেই বলে থাকে হায়রে বিরোধী দল।
১৫ দল, ৭ দল, ৫ দল ও ছাত্র জনতার লাগাতার আন্দোলনে ৯০ এর ৬ ডিসেম্বর এই দলের নেতার পতন হলে তাদেরকে গণদুশমন হিসেবে যেমন আখ্যায়িত করা হয়, তেমনি এই নেতার নির্বাচনে ডিগবাজির কারণে থুথু বাবা উপাধিতেও ভূষিত করা হয়ে থাকে। ভাগ্যিস আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের কাতারে এসে এই দলটি সংসদের বিরোধী দলে আসতে পারলেও তাদের দুর্নাম আজও অবলুপ্ত হয়নি বলে অনেকেই মনে করে থাকে। অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের ধারণা, এই দলটি যদি কোনো কারণে ১৪ দলীয় মহাজোট থেকে বাদ পড়ে যায় এবং নতুন করে যদি কোনো জনসমর্থন পুষ্ট জোটের আশ্রয় না পায়, তবে মুসলীম লীগের মতো এক সময় তাদের দলের অস্থিত্ব রক্ষাও কঠিন হয়ে পড়বে। এ কলামে আমি সেদিকে যেতে চাচ্ছি না। হয়তো ভবিষ্যতই তা বলে দিবে।
বর্তমান সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ একজন সজ্জন মহিলা। তার আচার আচরণ ও কথাবার্তাও মার্জিত ও সহনশীল। এ.এইচ.এম এরশাদের জীবদ্দশায় এবং পরবর্তী সময় সীমাহীন প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি টিকে আছেন। এরই
মধ্যে এরশাদের ভাই ও বর্তমান দলের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) ও রওশন এরশাদকে কম চাপে রাখেনি। এছাড়া প্রায় সময়ই এরশাদের তালাক প্রাপ্ত সাবেক স্ত্রী বিদিশা মাঝে মাঝে এরশাদের প্রতিবন্ধী সন্তান এরিক ও প্রসিডেন্ট পার্ক নিয়ে যে নাটকের অবতারণা হয়, গণমাধ্যম, মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে প্রকাশিত, প্রচারিত ও ভাইরাল হয় এটাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এরই মধ্যে রওশন এরশাদের ছেলে এমপি সাদ এরশাদ রংপুরের পল্লী নিবাসে এরশাদের কবর জিয়ারত করতে গিয়ে স্থানীয় নেতাদের একাংশের তোপের মুখে পড়ে। তাহাও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের জন্য সুখকর নহে। এমনিভাবে এক সময় লন্ডন প্রবাসী জনৈক ব্যাংকারের স্ত্রী মরিয়ম মমতাজ মেরী, জিনাত, বিদিশাসহ আরও অনেক মহিলার অপবাদ সহ্য করতে হয়েছে রওশন এরশাদকে। তিনি এরশাদের মৃত্যুর পর দলের সভাপতি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আজ তিনি সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা। তিনি সংসদের বিরোধী দলের আসনে বসে দেশের মানুষের জন্য কি করতে পারছেন, তাহাই দেশের জনগণের দেখার বিষয়।
যাক, যে কথা বলতে ছিলাম, তা হলো সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা ও জনভাবনা প্রসঙ্গে। পার্লামেন্ট গণতন্ত্রের পাদপীঠ ও দেশের জনগণের সুবিধা, অসুবিধা ও সুখ, দুঃখ তুলে ধরার একমাত্র জায়গা। সংসদের বিরোধী দলে থেকে এ পর্ষদেও যদি কোনো ভূমিকা রাখা না হয়, তবে দেশের মানুষকে প্রবোধ দেয়ার মতো কোনো উপাখ্যান অবশিষ্ট না থাকারই কথা। এ ব্যর্থতাকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো কোনো সুযোগ না থাকারই কথা। এ প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ তুলে না ধরলেই নয়। ১৯৭৯ সালের সংসদ অধিবেশনে বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা দ্বীপ তালপট্টি বা পূর্বাসার দাবী নিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা সংসদে প্রস্তাব করলে সংসদে সরকারি দল ও বিরোধী দলের কন্ঠভোটে তা পাস হয় (পার্লামেন্ট প্রসিডিং ১৯৭৯)।
বর্তমানে যেভাবে বিভিন্ন সেক্টরে হাজার হাজার কোটি টাকার বেসামাল দুর্নীতি, অনিয়ম, অপচয়, নারী, শিশু নির্যাতন ও নারী ধর্ষণ দৃশ্যপটে আসছে এ ব্যাপারে সংসদের বিরোধী দল যতটুকু গুরুত্ব দেয়ার কথা তা হচ্ছে না। এমনিভাবে দেশে অগনিত সমস্যা বিরাজমান। এমনিভাবে যদি পার্লামেন্টে সংসদের বিরোধী দল সংসদে বধির হয়ে বসে থাকে তবে জনগণের যাওয়ার পথই বা কোথায়।
কিছুদিন আগে কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারচড়ায় মেজর (অবঃ) সিনহাকে নির্মমভাবে পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা করে থাকে। এ ব্যাপারে মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ সামাজিক, পেশাজীবী সংগঠন, দেশের সাধারণ মানুষ এমনকি সরকারি দল এ ন্যাক্কারজনক ঘটনায় যেভাবে সোচ্চার হতে দেখা যায়, সংসদের বিরোধী দলকে এ ব্যাপারে তেমন সোচ্চার হতে দেখা যায় নি। যা কারও কাম্য নহে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন একটি মানবিক সমস্যা। ২০১৮ সালের আগে ও পরে এদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে এবং এখনও নির্যাতিত হয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের আসা অব্যাহত রয়েছে। এ ব্যাপারেও সংসদ ও সংসদের বাহিরে সংসদের বিরোধী দলের যতটুকু সোচ্চার হওয়ার কথা, দেশের মানুষ তা একেবারেই দেখছে না। করোনা ভাইরাস কোভিড- ১৯ বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য একটি ভয়াবহ সমস্যা। এ করোনা ভাইরাসকে পুঁজি করে করোনা ভাইরাসের স্বাস্থ্য সামগ্রী নিয়ে দুর্নীতির মহাযজ্ঞ শুরু হলেও এ ব্যাপারে সংসদের বিরোধী দলের যেভাবে এগিয়ে আসার কথা সেভাবে দেশের মানুষের নজরে আসছে না। এছাড়া জনসম্পর্কিত আরও অসংখ্য সমস্যা বিদ্যমান থাকলেও সংসদের বিরোধী দল এসবের উত্তরণে ধারে কাছেও নেই। বরং এখনও সংসদের বিরোধী দলের অনেকেই বসে আছে আবার কবে মন্ত্রী হবে।
ময়মনসিংহ বিভাগ হওয়ার পর অনেক সমস্যাসহ শহরের ব্রহ্মপুত্র নদের পাশে গড়ে ওঠা বাস্তহারাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা স্থানীয় সংসদ সদস্য হওয়ার পরও আজও এ সমস্ত সমস্যার তিরোধানে সংসদের ভেতরে ও বাহিরে দৃশ্যমান কিছু পরলক্ষিত হয়নি।
যে কোনো গণতান্ত্রিক সংসদে আজ্ঞাবাহী বিরোধী দল না থেকে গঠনমূলক আলোচনা, সমালোচনা ও সমস্যা সমাধানকল্পে বিরোধী দলের ভূমিকা অপরিসীম ও তাৎপর্যপূর্ণ। বিরোধী দল একেবারে চোখ মুঝে সংসদে প্রতিবন্ধীর মতো বসে থাকুক এবং মাঝে মাঝে টেবিলে হাত চাপড়িয়ে হ্যাঁ বলুক তা কারও কাম্য নহে। এছাড়া বর্তমান সরকার যে নিরংকুশ আসন নিয়ে সংসদে এসেছে, তাতে সংসদের বিরোধী দল বা অন্য কেহ টেবিল চাপড়িয়ে স্পীকারের সাথে সুর মিলিয়ে হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে, হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে তালি না দিলেও কোনো অসুবিধা নেই।
বর্তমানে সংসদের বিরোধী দলের যে ভূমিকা তা কারও দৃষ্টিতে না আসার কথা নহে। মনে রাখা দরকার একদিন তাদের দেশের জনগণের কাছে কৃতকর্মের জবাব দিতেই হবে। তাছাড়া ইতিহাস বড়ই নির্মম ও নিষ্ঠুর কাহাকেও ক্ষমা করে না। সংসদের বিরোধী দল থেকে বিরোধী দলীয় নেতা ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা জনগণের কষ্টার্জিত ঘামের অর্থের যেভাবে বেতন, ভাতা, সরকারি গাড়ী, বাসভবনসহ যে যে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে, একদিন এরও জবাব না দেওয়ার কথা নয়। এদেশের মানুষের মন যেমনি নরম তেমনি ঋতুচক্রের আবর্তনে চৈত্র বৈশাখের মাটির মতো কঠিনও বটে। তাই সাধু সাবধান। বিরোধী দলের আসনে থেকে মানুষের ন্যয় সংগত অধিকারকে পাশ কাটিয়ে যা ইচ্ছা তা করার সুযোগ একেবারেই পরাহত।
সংসদের বিরোধী দলের আসনে বসে কোনো মতেই মানুষের সমস্যার দিকে না তাকিয়ে চুপ করে হাবা বোবার মতো বসে থাকার আদৌ সুযোগ নেই। তাদের দায়িত্ব সরকারি দলের সংসদ সদস্যের চেয়ে কোনো অংশেই কম নহে। সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা এলাকার রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য উন্নয়নসহ যে বরাদ্দ পেয়ে থাকে, সংসদের বিরোধী দলের
সদস্যরাও তা পেয়ে থাকে। এমনকি টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও জিআরের যে বরাদ্দ দেয়া হয়, তাহাও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদেরকেও দেয়া হয়ে থাকে। জানা যায়, সরকার এলাকার উন্নয়নের জন্য সংসদ সদস্যদেরকে ২০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ ঘোষণা করেছে। তাতেও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বাদ পড়েনি। তদোপরি বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা সরকারের ওপর দোষ চাপিয়ে রেহাই পাওয়ার সুযোগও পরাহত। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা কখন, কিভাবে সরকারে কাছ থেকে কি ধরণের সুযোগ সুবিধা করায়ত্ব করছে এসবের হিসেবও না থাকার কথা নহে। এত কিছু সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পরও সংসদের বিরোধী দল জনগণের অভাব অভিযোগ ও সুবিধার ব্যাপারে যদি সংসদে কথা না বলে হাবা বোবার মতো চুপ করে থাকে তবে এর চেয়ে জনগণের দুঃখ বেদনার আর কি বা অবশিষ্ট থাকতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী অহরহ দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরদের ব্যাপারে সংসদ ও সংসদের বাহিরে আপোষহীন কথা বললেও, বর্তমান সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা এমনকি দলীয় সংসদ সদস্যদের মুখেও তা লক্ষ্য করা যায়নি। এর বিরুদ্ধে যদি কেহ লেখে বা কথা বলে তবে মহাভারত কি অশুদ্ধ হয়ে যাবে ? বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে কোনো কিছু করার নামই আজ্ঞাবাহীতা। আজ্ঞাবাহীতা কারও জন্যেই, কখনও সুফল বয়ে আনে না। এর পরিনতি বা পরিনাম কারও জন্যেই ভালো হয় না। এ নিয়ে রয়েছে সিকিমের লেন্দুম দর্জিসহ আরও অনেকেরই উপমা ও উদাহরণ। অনেক সময় কাহাকে বোকা বানানো গেলেও দেশের সকলকে বোকা বানানো যায় না। আজ যারা বিরোধী দলের সংসদের আসনে উপবিষ্ট, একবার আপনাদের দলও আপনাদের নেতার কথা ভেবে দেখুন। ভেবে দেখুন কিভাবে আপনারা সংদের বিরোধী দলের আসনে উপবিষ্ট হয়েছেন। যার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। বিরোধী দলে থেকে অনেকেই আজও মন্ত্রী হওয়ার খায়েস ভুলতে পারেনি। সরকারি দলে মন্ত্রী হওয়ার মতো লোকের অভাব নেই। এমন ব্যক্তিও রয়েছে যিনি বর্তমানে কিশোরগঞ্জ- ২ আসনের সরকারি দলের সংসদ সদস্য, সাবেক আইজিপি, রাষ্ট্রদূত ও সচিবও ছিলেন।
যদি সংসদের বিরোধীদলের আসনে থেকে জনগণের আশা আকাংখার প্রতিফলন ও উত্তরন ঘটানো না যায় তবে সংসদের বিরোধী দল হিসেবে দেশের মানুষের কাছে হয়তো একসময় কিছু বলার নাও থাকতে পারে। আগামী সংসদ অধিবেশন থেকে বিরোধী দলের সংসদ নেতা ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্য হিসেবে জনগণের দাবী দাওয়া, সুযোগ সুবিধা, অসুবিধাকে সামনে নিয়ে এগুলে হয়তো তাদের ডুবে যাওয়া মর্যাদা কিছুটা হলেও টিকিয়ে রাখা যেতে পারে। আর যদি সংসদে তাদের ভূমিকা গতানুগতিক ও এমনিভবে চলতে থাকে, তবে দেশের মানুষ এক সময় ঘৃণাভরে হাইগো বলার খেতাব দিয়ে আখ্যায়িত করলে হয়তো বলার কিছু নাও থাকতে পারে। যদিও তাদের নেতাও এক সময় কর্মদোষে গণদুশমন ও থুথু বাবা হিসেবে আখ্যায়িত হওয়ার নজির রয়েছে। এখনও জনভাবনা ও জন অভিমতের নিরিখে যদি তাদের ভুল শুদরিয়ে কর্মের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়া হয় ততই শুভবুদ্ধির উদয় বলে দেশের মানুষ তা মনে করতে পারে। তারপরও যদি তাদের মধ্যে অনুতাপ ও সংশোধনী লক্ষ্য করা না যায়, তবে এমন বেরসিক, লারে লাপ্পা ও হাইগো বালার সংসদের বিরোধী দলের প্রতি জনগণ আস্থা হারালে যাওয়ার জায়গা নাও থাকতে পারে। সংসদে বিরোধী দলের প্রাঞ্জল ভূমিকায় সংসদ সামনে এগিলে চলুক ইহাই জনপ্রত্যাশা। তাদের মনে রাখা উচিত সময় ও নদীর ¯্রােত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। বিরোধীদল থেকে আজ্ঞাবাহী না হয়েও মন্ত্রীর আশা ছেড়ে দিয়ে জনগণের পাশে থেকে এখনই কথা বলার সুযোগ। এ সুযোগ হারালে তৃতীয় বারের মতো আবার সংসদের বিরোধী দল হিসেবে সুযোগ পাবে তা অনেকেই সপ্তম আশ্বর্যের মতো অষ্টম আশ্চর্যও মনে করে থাকে। অনেক অভিজ্ঞজনরা মনে করে তাকে ন্যাড়া বার বার বেলতলায় যায় না।
যদিও এইচ.এম এরশাদ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের আগে বহুবার বলেছিলেন, আমি আর সংসদের বিরোধী দলে থাকতে চাই না। আমিই সরকার গঠন করব। এ প্রত্যাশা রেখেই তিনি ইন্তেকাল ফরমাইয়াছেন। তবে এরশাদ এদেশের রাজনীতিকে যে জায়গায় রেখে গেছে একদিন ইতিহাস দেখে হয়তো অনেক অজানা কিছু জানা যেতে পারে।
অর্থবহ সংসদের বিরোধী দল জনগণের আশা আকাংখার বাতিঘর। এই বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করে সংসদের বিরোধী দলে থেকে যেভাবে সরকারের আজ্ঞাবাহী মন্ত্রী হওয়ার উদাহরণ রয়েছে তেমনি নামেমাত্র সংসদের বিরোধী দলে না থেকে সরকারি দলের সংসদদের কাতারে সামিল হওয়াটাকেও অনেকেই মুখ্যম বলে মনে করে থাকে। সংসদের আজ্ঞাবাহি বিরোধীদল জনগণের যেমন সহায়ক নহে, তেমনি কোনো সরকারের জন্যও গ্রহণযোগ্য নহে। সংসদের বিরোধী দল বাস্তবিক অর্থে সরকারের দোষত্রুটি ও সমস্যা চিহ্নিত করে সমস্যা সমাধানেরই অর্গানোগ্রাম।
পরিশেষে বলব, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে ৯৭৫ জন ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার ৪৩ জন এবং যৌন হয়রানীর শিকার হয় ১৬১ জন নারী। তাতে অন্যান্য রাজনৈতিক দল, পেশাজীবি, সামাজিক সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মীদের মতো সংসদের বিরোধী দলের কাছ থেকে দেশের মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল তাও সংসদের ভেতরে ও বাহিরে দেখা যায়নি।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট