প্রাণঘাতি করোনা মহামারি দুর্যোগে থমকে গেছে সারা বিশ^। করোনার ঢেউ লেগেছিল আমাদের দেশেও। সকল শিক্ষার্থীদের করোনার থাবা থেকে রক্ষায় সরকার গত ১৭মার্চের পর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক যোগে বন্ধ ঘোষনা করে। বর্তমানে গৃহবন্দি শিক্ষার্থীরা। তাই স্থবির হয়ে পড়েছে শিক্ষা খাত। করোনা সংক্রমণ দ্বিতীয় ঢেউ আবারও বাড়বে বলে সরকারি দপ্তরগুলোর পক্ষ থেকে এমন ইঙ্গিত দিচ্ছেন। অতি সম্প্রতিক এইচ এসসি পরীক্ষা না নিয়ে ফলাফল দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ৫ম শ্রেণির শিক্ষা সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণির জেএসসি এবং সমমানের পরীক্ষাগুলো সরকার ইতিমধ্যে বাতিল করেছেন। প্রথম শ্রেনী থেকে চতুর্থ শ্রেনী এবং ষষ্ঠ শ্রেনী থেকে নবম শ্রেনী পর্যন্ত ডিসেম্বরে শিক্ষাবর্ষ শেষ হওয়ার নিয়ম থাকলেও এবার কী হবে? এমন প্রশ্নের ঘোরপাক খাচ্ছেন শুধু প্রাথমিক/মাধ্যমিক নয়,বরং বিশ^বিদ্যালয়ের পডুয়া অনার্স/উচ্চ শিক্ষার শিক্ষার্থীরা। তারা জানে না কীভাবে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে? করোনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বন্ধ। অনলাইন ক্লাসও নেই। শিক্ষার্থীদের স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট দেওয়ার কথা থাকলেও সব মোবাইল অপারেটরদের এ সেবায় আনা যায়নি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অপেক্ষা করছে বড় আকারের সেশনজট। এই জট মোকাবিলায় কী পরিকল্পনা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো? করোনায় স্থগিত হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শতাধিক পরীক্ষা। এই দীর্ঘ পরীক্ষা জট কমাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কী উদ্যোগ নেবে? এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার ভবিষ্যত্ কী হবে? এমন নানা প্রশ্ন ভিড় করছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মনে।
দিন দিন শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের শঙ্কা বেড়েই চলছে। ফলে অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা অনেকেই পত্রিকায় পাতায় টেলিভিশনের পর্দায়,সোশ্যাল মিডিয়া ঘেঁটে এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করছেন। অভিভাবক- শিক্ষার্থীরা বলছেন, স্কুল কবে খুলবে, পরীক্ষা কবে হবে, কীভাবে নেবে, সেটার ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু শিক্ষা বিভাগ থেকে এখন পর্যন্ত সকল বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কিছু সংখ্যক গণমাধ্যম পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ার বিভ্রান্তকর প্রতিবেদন আসছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বিবেচনা করে এমন পরিস্থিতিতে যদি ছুটি আরো বাড়ানো হয়, তা’হলে এই শিক্ষাবর্ষ কি ভাবে সমাধান হবে এ নিয়েও শিক্ষা কর্তৃপক্ষের আলোচনা চলছে। চলতি শিক্ষাবর্ষ বাড়ানো হলে আগে যেমন নভেম্বর-ডিসেম্বরে সমাপনী পরীক্ষা হতো, সেই পরীক্ষা হবে সামনের বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চে। অন্যদিকে সামনের শিক্ষাবর্ষ ১২ মাস থেকে ৯ মাসে নামিয়ে আনার কথাও ভাবা হচ্ছিল। কিন্ত এখন আবার ভিন্ন খবর প্রচারিত হচ্ছে। এখন বলা হচ্ছে, ডিসেম্বরেই শিক্ষা বর্ষ শেষ করতে হবে। অভিভাবকদের অভিমত, আসলে কী হবে, এটা এখনই পরিস্কার করা দরকার। এসব বিষয়ে শিক্ষা বিভাগের/শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য শুনতে চায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। কারণ এ বছর স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মোটেও হয়নি। যতই দিন যাচ্ছে ততই শিক্ষার্থীদের টেনশন বাড়ছে। পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান গুলোতে মূল্যায়নের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এই মূল্যায়ন কীভাবে হবে? বলা হচ্ছে গাইড লাইন তৈরি করা হবে। কিন্তু তৈরি করতে এত বিলম্ব কেন ? তাই এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে পারছেনা শিক্ষার্থী-অভিভাবক বৃন্দ।
আবার কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করোনা কালে অনলাইন ক্লাস চালু করেছে। কিন্তু বিভাগীয় শহর গুলোতে এখনও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইন শিক্ষায় আওতায় যেতে পারেনি। এমতাবস্থায় গ্রাম পর্যায়ে এই ধরণের ক্লাস করা কি আদৌ সম্ভব? টেলিভিশনের যে পাঠদান চলছে তার সুফল পাচ্ছে না মাঠ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। আবার অনলাইন ক্লাস পাওয়া কিংবা না পাওয়াদের মধ্যে এক ধরণের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা আরো পিছিয়ে পড়ছে। এই সমস্যা সমাধান করা কী আদৌ সম্ভব?
অপর দিকে মরার উপর খাড়া গা স্কুল বন্ধ থাকলেও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পুরো টিউশন ফি পরিশোধের জন্য অভিভাবকদের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। অথচ করোনাকালে অনেক অভিভাবক চাকরি হারিয়েছেন। কারো বেতন কমেছে। আবার কারো ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যে অভিভাবকরা পুরো টিউশন ফি কীভাবে পরিশোধ করবে? টিউশন ফি না দিলে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণের সুযোগ দেওয়া হবে না বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এমন হুমকি দিচ্ছে। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে নীরব। এদিকে নভেম্বর মাসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসছে। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সকলকে আগাম প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তাই শীতের প্রথমার্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হবে কি’না তা’অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে দেশের মোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী প্রায় পৌনে দুই কোটি। মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সোয়া কোটির কিছু বেশি। বাকিরা অন্যান্য স্তরে পড়ছেন। এমন অবস্থায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জিজ্ঞাসা ছিল ছুটি কি আরও বাড়বে, নাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।
এসএম হালিম দুলাল