সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে গ্রাম পর্যায়ে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নেয়া হয়েছে ব্যাপক পরিকল্পনা। নতুন ডিজাইনে প্রতিটি রাস্তা হবে আরো চওড়া, টেকসই ও মানসম্মত। আর কাজে গাফিলতি হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মূলত যে কোন অবস্থায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্জিত সাফল্য বজায় রাখতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেজন্যই গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গ্রামীণ জনপদে মানহীন দুর্বল রাস্তা নির্মাণ চলবে না। উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি গ্রাম পর্যায়ের প্রতিটি রাস্তাই হবে মানসম্পন্ন, উন্নত, টেকসই এবং আরো প্রশস্ত। নিম্নমানের কাজ করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে শাস্তি দেয়ার পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে রাস্তার প্রাক্কলিত ব্যয়ের দ্বিগুণ জরিমানা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এমন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে স্থানীয় সরকার (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়। আর ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন, এলজিইডি এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করবে। বর্তমানে মানহীন সড়ক বা স্থাপনা নির্মাণ করায় অনেক অবকাঠামোই তেমন স্থায়িত্ব পাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে একটি রাস্তা নির্মাণ করার পর কিছুদিনের মধ্যে ভেঙ্গে যাচ্ছে বা নানা রকম খানা খন্দকের সৃষ্টি হচ্ছে। আর ওসব সড়ক সংস্কারের মাধ্যমে প্রতিবছর সরকারকে ব্যয় করতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। পাশাপাশি মানহীন ভাঙ্গা রাস্তা বা ব্রিজের কারণে সময় মতো যাতায়াত করতে না পারা, কৃষক পর্যায়ের উৎপাদিত নানা কৃষিপণ্য সরবরাহ করতে না পারার কারণে সরকার সরাসরি মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একই সাথে প্রতিনিয়তই নাগরিক দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব সামগ্রিকভাবে সরাসরি দেশের অর্থনীতিতে পড়ছে। সেজন্যই সরকার বিশাল পরিমাণ অর্থের সাশ্রয় তথা উন্নত বাংলাদেশ গড়তে এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে সড়ক বিভাগের সকল রাস্তা প্রশস্ত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এখন স্থানীয় সরকার বিভাগের সকল রাস্তা প্রশস্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, এমনকি গ্রাম পর্যন্ত বর্তমানের তুলনায় সকল পুরনো ও নতুন গ্রামীণ সড়ক প্রশস্ত করা হবে। ওসব সড়ক মানসম্পন্ন উন্নত ও টেকসই করে নির্মাণ করা হবে। একই সাথে মানহীন দুর্বল বা কম সময়েই নষ্ট হয়ে যায় এমন রাস্তা তৈরি করা চিরতরে বন্ধ করা হবে। সেজন্য রাস্তা-সেতু কম খরচে নির্মাণ করা বন্ধ করে স্থানীয় পর্যায়সহ সকল সড়ক টেকসইভাবে নির্মাণের জন্য সঠিক প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ করা হবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) দিয়ে গ্রামীণ সড়কের ডিজাইন সংশ্লিষ্ট সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী গ্রামীণ রাস্তা ১০ ফুট, ইউনিয়ন পর্যায়ে ১২ ফুট, উপজেলা পর্যায়ে ১৮ থেকে ২০ ফুট এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকার জন্য ১৮ থেকে ৩৬ ফুট করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী তার নির্দেশে বলেছেন, দেশের উন্নয়ন করতে হলে প্রথমে যোগযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এজন্যই দেশের সকল সড়ক ও মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এখন গ্রামীণ জনপদের সকল রাস্তার উন্নয়ন করতে হবে। নির্দেশ অনুযায়ী দেশের প্রতিটি গ্রাম পর্যন্ত উন্নত সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সকল সড়ক টেকসইভাবে নির্মাণ করা হবে। সেজন্য চলমান ডিজাইন বাদ দিয়ে সকল পর্যায়ের রাস্তাই নতুন ডিজাইন অনুযায়ী নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সরকারের বিশেষ দক্ষতায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্জিত সাফল্য সর্বাবস্থায় বজায় রাখতে ও তার মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তেই এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে। তার অংশ হিসেবে সকল গ্রামীণ সড়ক ও উপজেলা সড়ক থেকে জেলা পর্যন্ত সংযোগ সড়ক চওড়া করতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। আর ওসব সড়ক যাতে টেকসই ও উন্নত মানের হয় সেজন্য চাহিদা অনুযায়ী তালিকা করতে মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে। এলজিইডি কোন কোন সড়ক কতো ফুট চওড়া করা যায় ও কোন কোন এলাকার সড়কগুলো চওড়া করলে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে তার জরিপ সম্পন্ন করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এমন টেকসই রাস্তা তৈরি করা হবে যাতে অতি কম সময়ের মধ্যে সংস্কারের কোন প্রয়োজন না হয়। সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে গত অক্টোবর মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন, এলজিইডি এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ বিভাগের সমন্বয়ে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে সভা করা হয়। সভা বা হয়, গ্রামীণ, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে টেকসই সড়ক নির্মাণের জন্য ডিজাইন পরিবর্তন করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে গ্রামীণ, ইউনিয়ন, উপজেলা ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ার সড়ক টেকসইভাবে নির্মাণের জন্য গুরুত্ব দেয়া জরুরি। মূলত দেশে এক সময় রাস্তা- সেতু কম খরচে নির্মাণ করার ফলে ওসব রাস্তা- সেতু টেকসই হতো না।
এদিকে এ প্রসঙ্গে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ জানান, বর্তমানে এলজিইডি অধিদফতর দেশের সকল গ্রামীণ সড়ক এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ দেশের সকল মহাসড়ক নির্মাণ করে থাকে। কোন কোন স্থানে সড়ক বিভাগ তুলনামূলক ছোট রাস্তা তৈরি করে। আবার কোন কোন স্থানে বড় রাস্তা তৈরি করে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এলজিইডি অধিদফতরও তাদের সকল রাস্তা বর্তমানের তুলনায় বড় করতে চায় এবং তা হবে অবশ্যই মানসম্পন্ন ও টেকসই। সেজন্য দুই বিভাগের রাস্তার মাপের জন্য সম্মিলিতভাবে পরিমাপ নির্ধারণ করা প্রয়োজন। গ্রামীণ কোন রাস্তা কতটুকু বড় হবে তাও নির্ধারণ করতে হবে। বর্তমানের রাস্তার দৈর্ঘ্য সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রায় ১৬ বছর আগের তৈরি। বর্তমান দেশের অর্থনীতির পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশ অতি দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় প্রয়োজন বুঝে কোন এলাকার রাস্তা কেমন হওয়া উচিত তা বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খুঁজে বের করতে এলজিইডিকে ফিজিবিলিটি দায়িত্ব প্রদান করা হয়েঝে। ইতোমধ্যেই তারা বুয়েটকে দিয়ে তা সম্পন্ন করেছে। এই স্টাডি অনুযায়ী দেশের সকল প্রান্তের গ্রামীণ সড়ক অবশ্যই অনেক চওড়া করে নির্মাণ করা হবে। এলজিইডি এ সম্পর্কে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব দিয়েছে। বর্তমানে তা মন্ত্রীর মতামতের অপেক্ষায় রয়েছে। মন্ত্রীর মতামত প্রাপ্তিসাপেক্ষে রাস্তার পরিমাপ নির্ধারণ করে সার্বিক বিষয় নিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হবে। গ্রামীণ তথা দেশের অর্থনীতির সার্বিক উন্নতির জন্য নতুন পদ্ধতিতে উন্নতমানের টেকসই চওড়া রাস্তা নির্মাণ করে তা কার্যকর করা হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানান, দেশের প্রতিটি গ্রাম পর্যন্ত উন্নত সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের বিকল্প নেই। বর্তমান সরকারের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্প বাস্তবায়ন করা ছিল বিশেষ অঙ্গীকার। সেজন্যই স্থানীয় পর্যায়সহ সকল সড়ক টেকসইভাবে নির্মাণ করা হবে। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে ও গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতেই এমন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেজন্য সরকার ১৬ বছর আগের সড়ক ডিজাইন পরিবর্তন করতে চায়। আর চলমান ডিজাইন বাদ দিয়ে সকল পর্যায়ের রাস্তাই নতুন ডিজাইন অনুযায়ী নির্মাণ করা হবে। মূলত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি গ্রাম পর্যন্ত উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করার নির্দেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই এমন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। বুয়েটের সমীক্ষা অনুযায়ী গ্রামীণ রাস্তা ১০ ফুট, ইউনিয়ন পর্যায়ে ১২ ফুট, উপজেলা পর্যায়ে ১৮ থেকে ২০ ফুট এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকার জন্য ১৮ থেকে ৩৬ ফুট করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।