কুড়িগ্রামে কয়েক দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক ও ব্রীজ-কালভার্ট মেরামতে কোন বিশেষ বরাদ্দ না থাকায় এখনও শুরু হয়নি ওই সব ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক ও ব্রীজ কালভার্টের সংস্কারের কাজ। এ অবস্থায় এখনও ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে বন্যা কবলিত এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। তবে নিয়মিত সংস্কারের আওতায় ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক ও ব্রীজ-কালভার্টের দরপত্র আহবান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দফা বন্যায় কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলায় শুধুমাত্র এলজিইডির ১৭৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। এরমধ্যে সম্পুর্ণরুপে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে ২৮ কিলোমিটার পাকা সড়ক। আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলো আরইএমপি প্রকল্পের আওতায় জেলায় কর্মরত ৫শ ৯০ জন মহিলা শ্রমিকের মাধ্যমে সংস্কার করে সাধারণের চলাচলের উপযুক্ত করা হয়েছে। আর দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সম্পুর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলোতেও মেরামত কাজ শুরু হবে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, এবারের দেড় মাসের দীর্ঘ বন্যায় প্লাবিত হয়ে পড়ে কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার ৫৬ ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা। এতে করে এলজিইডিসহ অন্য দপ্তরের ১৯১ কিলোমিটার পাকা সড়ক সম্পুর্ণ ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে ৬৩টি ব্রীজ, ১৮১ টি কালভার্ট, ১১৪৫ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক ও ১৩৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
এদিকে ২৪অক্টোবর শনিবার সরেজমিনে বন্যা দূর্গত কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্থ কাঁচা-পাকা সড়কগুলোতে দুর্ভোগ নিয়েই চলাচল করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পানি তোড়ে ভেঙ্গে যাওয়া সড়কের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় মানুষেরা বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল করছেন।
অন্যদিকে কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কের শুলকুর বাজার এলাকায় নির্মাণাধীন ব্রীজটি বন্যার কারণে সময়মত কাজ শেষ না হওয়ায় জন দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চরাঞ্চলের এই গুরুত্বপুর্ণ হাটে ভাঙ্গা বীজের পার্শ্ববর্তী সংযোগ সড়কে দুর্ভোগ নিয়েই যাতায়াত করছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রীজটি নির্মাণের চুক্তির মেয়াদ গত মার্চ মাসে শেষ হয়েছে। ইতো মধ্যে ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বন্যার কারণে নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্থ হওয়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা জিবি সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হবে।
শুলকুর বাজার এলাকার হাবিবুর রহমান মিন্টু জানান, এমনিতেই বন্যায় অনেক সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ভেঙ্গে যোগযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। তার উপর এই ব্রীজটি সঠিক সময়ে নির্মিত না হওয়ায় যাত্রাপুর, পাঁচগাছী, বেগমগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের মানুষের খুব সমস্যা তৈরি হয়েছে। কেন না এই সড়কে এসব এলাকার মানুষজনকে শহরে যেতে হয়, মালামাল পরিবহন করতে হয়। এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না।
শুলকুর বাজার এলাকার এই ব্রীজের কাজ করা ঠিকাদার গোলাম রব্বানী জানান, ব্রীজের পিলালের কাজ প্রায় শেষের দিকে। বন্যার সময়টাতে কাজ করতে পারিনি। তবে এখন বন্যার পানি শুকিয়ে গেছে। দ্রুত কাজ শেষ করা হবে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে জেলার রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। গ্রামীণ এলাকার বেশিরভাগ সড়ক বিদ্ধস্থ হয়ে পড়ে থাকায় চরম দুর্ভোগ নিয়ে পায়ে হেটে চলাচল করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
রৌমারী উপজেলার সুজাউল ইসলাম সুজা জানান, বন্যায় উপজেলার বেশিরভাগ সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। এক কথায় ইউনিয়নগুলোর সাথে উপজেলা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন। অনেক ইউনিয়নে পায়ে হেটে ছাড়া চলাচলের উপায় নেই। কিন্তু বন্যার পার হওয়ার প্রায় ৩ মাস হতে চললেও এখনও কাজ শুরু হয়নি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশরী সৈয়দ আবদুল আজিজ জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ সড়কের তালিকা করে অনেক আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এসব সড়ক মেরামতের জন্য বিশেষ কোন বরাদ্দ না পাওয়ায় নিয়মিত সংস্কার কাজের আওতায় দরপত্র আহবান করা হয়েছে। দরপত্রের কার্যক্রম সম্পন্ন হলে দ্রুত কাজ করা হবে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগে ২৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াও শেষের পথে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু করার বিষয়ে মাসিক সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও স্থানয়ি সরকার বিভাগ থেকে প্রত্যেকটি উপজেলা পরিষদের এডিবি বার্ষিক উন্নয়ন তহবিলে প্রথম কিস্তির টাকা দেয়া হয়েছে। এটাও গ্রামীন অবকাঠানো উন্নয়নে কাজ করা হবে।