এখনো বাস্তবায়িত হয়নি করোনা রোগীদের সরাসরি সেবাদানকারী সরকারি চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রণোদনা প্যাকেজ। স্বাস্থ্য খাতের সম্মুখযোদ্ধাদের তালিকা ও অর্থ বিতরণ সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় ৩ মাস ধরে তা ঝুলে রয়েছে। অথচ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সরাসরি সেবা দিচ্ছে। অনেক কর্মী সেবা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। আবার আক্রান্তের পর সুস্থ হয়ে অনেকে কাজে ফিরেছে। তাদের এই ত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের সম্মুখযোদ্ধা (যারা সরাসরি চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন) ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ প্রণোদনার ঘোষণা দেন। স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ৯ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে অতিরিক্ত দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ এককালীন স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ সম্মানী দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। সরকারি চাকরিজীবীদের গ্রেড অনুযায়ী দেয়া হবে। কিন্তু তিন মাসেও তার বাস্তবায়ন নেই। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রণোদনা প্যাকেজ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়, সম্মানী বাবদ ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অনুকূলে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিশেষ সম্মানীর আওতায় শুধু করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের সেবাদানে সরাসরি কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। এককালীন বিশেষ এ প্রণোদনা পেতে আবেদনে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নাম এবং আইডি নম্বর উল্লেখ করতে হবে। তাছাড়া পদবি, অফিস ও বেতন গ্রেড, মূল বেতন এবং এককালীন বিশেষ সম্মানীর পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে।
সূত জানায়, প্রণোদনা পেতে স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবায় কোন হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ছিলেন তার নাম ও ঠিকানাও লিখতে হবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবায় সরাসরি নিয়োজিত ছিলেন-এ মর্মে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রত্যয়নপত্র আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি মূল বেতনের সঙ্গে চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসার বা ডিএও বা ইউএও বা ডিসিএওর প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করতে হবে। বিশেষ প্রণোদনা পেতে আগ্রহীদের নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর বা নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরে পাঠাতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বা নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর প্রাপ্ত আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে সম্মানীর জন্য উপযুক্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর নামের তালিকা তৈরি করবে। পরে এ নামের তালিকা পাঠানো হবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে। সেখানে আরেক দফা যাচাই-বাছাই হবে।
সূত্র আরো জানায়, চূড়ান্ত ধাপে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ অর্থ বিভাগের কাছে নামের তালিকা পাঠাবে। অর্থ বিভাগ ওই তালিকায় সম্মতি দিলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সরকারি আদেশ জারি করবে। তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ চাওয়া হয়নি। তাছাড়া কারা অর্থ পাবেন এসব সুবিধাভোগীর তালিকাও তৈরি করা হয়নি। নীতিমালা না এলে এ অর্থ ছাড় করা সম্ভব নয়। যদি করোনাকালীন সরকারের ঘোষিত অন্য প্যাকেজগুলো বাস্তবায়ন অনেক আগেই শুরু হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) এবং সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ পর্যন্ত সারা দেশে ৭ হাজার ২৪৯ জন চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে ১০০ জন চিকিৎসক ও ১০ জন নার্স মারা গেছেন।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান জানান, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রণোদনা প্যাকেজ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা এখন পর্যন্ত স্বাস্থসেবা বিভাগে আসেনি। তাছাড়া এখনও বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতি আছে। এ পরিস্থিতি যখন উন্নতির দিকে যাবে তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।