দুনিয়াতে এমন কিছু অমানবিক হত্যাকান্ড, বর্বরোচিত নৃশংসতা, পৈশাচিক, কাপুরোষিত, নিকৃষ্টতম ও নিষ্ঠুরতম ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকে যা পাষানের হৃদয়কেও হার মানায়। ইসলাম পূর্ব আরবে আইয়্যামে জাহেলিয়া বা অন্ধকারের যুগ (অমব ড়ভ ওমহড়ৎধহপব) বলতে আমরা যা বুঝি, তা আসলে যতটা অন্ধকারে ছিল, তুলনামূলক বিচারে দেড় হাজার বছর পর আমরা আরও অন্ধকারে পৌঁছে গেছি। তা ভেবে দেখার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
তৎকালীন জাজিরাতুল আরবের লোকেরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের পাশাপাশি হোবাল, লাত, উজ্জা, মানাতসহ ৩৬০টি মূর্তি পূজা করত। এ মূর্তিগুলোকে আল্লাহর কাছে পৌঁছার মাধ্যম মনে করত তারা। হজ্জের মৌসুমে কোরবানীর পশুর রক্ত দিয়ে মূর্তিসহ পুরো পবিত্র কাবাঘরকে ভাসিয়ে দেয়া হতো। দাস প্রথার প্রচলন ছিল। যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্য নারী পুরুষ উলঙ্গ হয়ে পবিত্র কাবা ঘর প্রদক্ষিণ করত। পতাকাবাহী পতিতালয়ের সঙ্গে মোড়ে মোড়ে সরাইখানা ছিল চোখে পড়ার মতো। ব্যভিচারের পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে উচ্চ বংশীয় রক্ত ধারা প্রবাহিত হওয়ার আশায় নারীদের অভিজাত গোত্রের নেতৃত্ব স্থানীয়দের কাছে পাঠানো হত। সন্তানদের চেহারার উপর ভিত্তি করে নারীরা তার পিতা নির্ধারণ করে দিত। আর এমন নির্ধারণকে পুরুষরা মেনেও নিত। পরিস্থিতিজনিত বাধ্যবাধকতায় কিছু কন্যা শিশুকে হত্যার পাশাপাশি নারীরাও নির্যাতিত হতো। আজ যেভাবে দেশে নৃশংস হত্যাকান্ড, নারী ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতন চলছে তা দেখে মনে হয় পনরশত বছরের আগে সংঘটিত আইয়্যামে জাহেলিয়ার যুগকেও আমরা হার মানাতে বসেছি।
মেজর (অবঃ) সিনহা রাশেদ খানকে যে নির্মম, আমনবিক ও নিষ্ঠুর কায়দায় হত্যা করা হয়েছে তা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে ০৮/১০/২০২০ ইং ও বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এমন যে, আরও কত ঘটনা ঘটেছে যা আলোর মুখ দেখেনি। যা আইয়্যামে জাহিলিয়ার যুগকেও ছাড়িয়ে যায়। রক্তমাংসের মানুষ নামীয় জীব এমন বর্বর, উজবক, কম্বক, কুলাঙ্গার ও নিষ্ঠুর হতে পারে যা সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায়না। মেজর (অবঃ) সিনহা রাশেদ খান ছিলেন, সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত চৌকস কর্মকর্তা। চাকরির বয়স থাকতেই তিনি স্বেচ্ছায় অবসরে চলে আসেন। সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন কালে তার পারফরম্যান্স ছিল অতুলনীয়। তার কমান্ড ও সহকর্মিরা ছিল তার আচার, আচরণ ও কার্যকলাপে গুনমুগ্ধ। তার সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, তাতে মেজর (অবঃ) সিনহা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গৌরবোজ্জল তারকা ছিল। এমনিতে নিষ্ঠুর, নির্মম ও মর্মান্তিকভাবে তার হত্যাকান্ড কেহই মেনে নিতে পারে না। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালনে পুলিশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আরেকটু সামনে এগুলে রবার্ট ফিলের ভাষায় “পুলিশ আর দি পাবলিক এন্ড পাবলিক আর দি পুলিশ” অর্থাৎ পুলিশই জনতা এবং জনতাই পুলিশ। পুলিশ মেজর (অবঃ) সিনহা রাশেদ খানকে হত্যা করে যে খারাপ নজির স্থাপন করেছে এবং পুলিশের মুখে কলংক লেপন করেছে। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পুলিশে
অনেক নিষ্ঠাবান ও ভালো লোকও রয়েছে। যারা একারণে দেশের মানুষের কাছে যথেষ্ট হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে। যে কারণে পুলিশের অনেকের কাছ থেকেই শুনা যায় ইজ্জত, সম্মান নিয়ে যাতে তাড়াতাড়ি অবসরে যেতে পারি ইহাই প্রত্যাশা। পুলিশের এ ধরণের অপরাধ কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। যদি এ সমস্ত হেনিয়াস অপরাধের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় তবে তা দেখে অনেক অপরাধীরা সাবধান হয়ে যেতে পারে। তা না হলে মেজন (অবঃ) সিনহা হত্যার মতো এমন ধরণের আরও বীভৎস ঘটনা আরও ঘটলে হয়তো করার কিছু নাও থাকতে পারে।
অনেক সময় লক্ষ্য করলে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না থাকা স্বত্বেও কিছু অতিলোভী ও অসাধু পুলিশ অনেক সময় এলাকার ছোট বিরোধকে কেন্দ্র করে এবং অনেক সময় জমিজমার বিরোধকে কেন্দ্র করে নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজির মামলা করে নীরিহ মানুষকে যার পর নাই হয়রানী করে থাকে। এ ব্যাপারে একশ্রেণীর অসাধু পুলিশ এসব সাজানো মামলায় ইন্ধন দিয়ে তিলকে তাল বানিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে সচেষ্ট হয় বলে জানা যায়। প্রায় ৮/৯ বছর আগে জমিজমার বিরোধকে কেন্দ্র করে পাকুন্দিয়া থানার সুখিয়া বাজার সংলগ্ন বড় আজলদী গ্রামের নজমুদ্দিন (৮৫), পিতা- মৃত আনিস, তার স্ত্রী (৭৫), মেয়ে (৩৪) এবং মেয়ের জামাতা আঃ রশীদ মেম্বার (৪৫), পিতা- মৃত জাফর আলী, গ্রাম- সুখিয়াকে মিথ্যা মিথ্যি চাঁদাবাজি ও সাজানো নারী নির্যাতন মামলায় সম্পৃক্ত করে পুলিশ তাদেরকে সীমাহীন নাজেহাল করে থাকে।
যা এলাকার জনগণ ও ভোক্ত ভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়। তাতে মামলা মোকদ্দমার জালে আটকিয়ে গোটা পরিবারকে সহায় সম্বলহীন করে ফেলে। অনেকেরই অভিমত এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পাকুন্দিয়া থানা কর্তৃপক্ষ সজাগ থাকলে কোনো অবস্থাতেই এমন ন্যাক্কারজনক ম্যানুফ্যাকচারিং মামলায় সম্পৃক্ত করার আদৌ কোনো সুযোগ থাকার কথা নয়। যদিও এসব ক্যামোফ্ল্যাক্সের সাথে প্রায় সময়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য ও সূত্র লক্ষ্য করলে দেখা যায় এসবের সাথে হাসপাতালের একশ্রেণীর অসাধু ও পেশাদারী চিকিৎসকদের যোগসাজস পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। আরও জানা যায়, মিথ্যা মিথ্যি এসব হয়রানীমূলক মামলায় তদন্ত রিপোর্ট (ঈযধৎমংযববঃ) দেয়ার পর আদালতে যেমন এসব মামলা নথিভূক্ত হয় তেমনি অনেক সময় উল্টো শাস্তির কথাও জানা যায়। অনেক সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চিকিৎসকের শাস্তি হওয়ার নজিরও দৃষ্টিতে আসে। যদি সংশ্লিষ্ট পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিরা সজাগ থাকে, তবে নীরিহ মানুষকে আইনের ফাঁকে ফেলে এ ধরণের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও হয়রানীমূলক সাজানো মামলার সুযোগ নেই বলে আইন বিশ্লেষকরা অভিমত ব্যক্ত করে থাকে।
মেজর (অবঃ) সিনহা রাশেদ খান হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তাতে দেখা যায় গুলি করার ২০-২৫ মিনিট পরও মেজর (অবঃ) সিনহা বেঁচে ছিলেন। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ অত্যান্ত নির্মমভাবে পা দিয়ে চেপে ধরে সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করে থাকে। এছাড়া সিনহাকে বহনকারী পিকআপ হাসপাতালে দেরীতে পৌঁছানোর পেছনেও দুরভিসন্ধিমূলক অপচেষ্টা ছিল। জাতীয় সংসদ ভবনে বুধবার ০৭/১০/২০ ইং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয় বলে জানা যায়। কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অবঃ) সুবিদ আলী ভূঁইয়া এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। তিনি বলেন সেনাবাহিনী মেজর (অবঃ) সিনহা হত্যাকান্ডের একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। কমিটি এই হত্যাকান্ডের বিচার দ্রুত শেষ করারও তাগিদ দিয়েছে। বৈঠকে কমিটির সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান, মোঃ ইলিয়াছ উদ্দিন মোল্লা, মোঃ মোতাহার হোসেন, মোঃ নাসির উদ্দিন, মোঃ মহিবুর রহমান ও মোঃ নাহিদ ইজাহার খান অংশ নেন। এছাড়া প্রতিরক্ষা সচিব, সেনা, বিমান, নৌবাহিনী ও সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তারা বৈঠকে ছিলেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন সিনহা হত্যায় জড়িত। তিনি ঘটনার শুরু থেকে তদন্তে বাধা দিয়ে আসছিলেন। ঘটনার পর পরই সিনহা পরিবার এসপি মাসুদের বদলির দাবী জানিয়ে আসছিলেন। সেনা তদন্ত টিমও সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাকে বদলীর মত ঘোষণা করে থাকে। পরে তাকে রাজশাহীতে বদলী করা হয়ে থাকে।
টেকনাফের বাহার ছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে ৩১ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সিনহা। এ ঘটনায় তার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ৫ জুলাই টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামী করা হয়ে থাকে। সিনহার মৃত্যুর পর ঘটনাটিকে বন্দুক যুদ্ধ বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল পুলিশ। পুলিশের পক্ষে নন্দলাল রক্ষিতের মামলাও হয়েছিল সেভাবেই। অন্যদিকে সিনহার বোন শারমিন সরাসরি হত্যার অভিযোগ এনে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেনকে সিনহা হত্যা মামলায় আসামী করতে আদালতে আবেদনও করেছিল সিনহার বোন। তবে বিচারক তা খারিজ করে দেয়। প্রতিবেদনে সেদিনের ঘটনার বিবরণও তুলে ধরা হয়।
তাতে বলা হয় ৩১ জুলাই রাতে সুটিং শেষে মেজর (অবঃ) সিনহার সঙ্গী সাহেজুল ইসলাম সিফাতকে নিয়ে মারিশ বুনিয়া পাহাড় থেকে নেমে নিজস্ব প্রাইভেট কারে মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা করে। পথে শামলাপুরের পূর্বে বিজিবি চেকপোষ্টে তাদের তল্লাশি করার জন্য থামানো হয় এবং পরিচয় পাওয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়। পরে আনুমানিক ৯টা ২৫ মিনিটে শামলাপুর পুলিশ চেকপোষ্ট অতিক্রমের সময় ইন্সপেক্টর লিয়াকত এপিবিএনের ফোর্সসহ সিনহার গাড়ী থামায়। সিনহা গাড়ী থামিয়ে তাদেরকে পরিচয় দিলে এপিবিএন সদস্যরা প্রথমে তাদেরকে যাওয়ার জন্য সংকেত দিলেও ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী তাদেরকে পুনরায় থামায় এবং তাদের দিকে পিস্তল তাক করে গাড়ী থেকে নামতে বলে। সিফাত হাত উঁচু করে গাড়ী থেকে নেমে পেছনের দিকে যায়। মেজর (অবঃ) সিনহা গাড়ী থেকে হাত উচু করে নামার পরপরই ইন্সপেক্টর লিয়াকত খুব কাছ থেকে সিনহাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এর আনুমানিক ২০-২৫ মিনিট পর টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অত্যান্ত নির্মম ও অমানবিক ও নিষ্ঠুরভাবে পা দিয়ে চেপে ধরে মাটিতে লুটিয়ে পড়া মেজর (অবঃ) সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয় ওসি প্রদীপ সেখানে পৌঁছার আগ পর্যন্ত ২০-২৫ মিনিট সিনহার আহত দেহ ঘটনাস্থলে পড়ে ছিল এবং সিনহা তখনও জীবিত ছিল। ইন্সপেক্টর লিয়াকত ও টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ঘটনাস্থলে উপস্থিতি ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা ও পূর্ব পরিকল্পনার ইঙ্গিত বহন করে থাকে। পরে রাত ১০টার দিকে একটি পিকআপে মেজর (অবঃ) সিনহাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়ে থাকে।
মেজর (অবঃ) সিনহা রাশেদ খানকে পুলিশ যে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে এ নিমর্মতা ও নিষ্ঠুরতার কথা দুকথা লিখে সমবেদনা জানানোর মতো ভাষা অনেকের মতো আমারও নেই। এ ব্যাপারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবি সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থা, সেনাবাহিনী প্রধান, পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদসহ সমাজের অনেকে দুঃখ ও নিন্দা জানিয়ে সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। মেজর (অবঃ) সিনহা রাশেদ খানের হত্যায় দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি হলে এমনিভাবে হয়তো কখনও কাহাকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার সাহস পাবে না কেউ। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী দেশের জন্য যে শ্রম, ত্যাগ ও সেবা দিয়ে যাচ্ছে তা কারও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। যার রয়েছে অসংখ্যা উপমা ও উদাহরণ। সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব ও অহংকার। যাদের মধ্যে মেজর (অবঃ) সিনহা রাশেদ খানও একজন। সিনহা রাশেদ খানের ওপর পুলিশ উল্টো দোষ চাপিয়ে ঘটনা অন্যদিকে ধাবিত করতে চেয়েছিল। ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত করলেও আজ সেনা তদন্তে গোমর ফাঁক হয়েছে এবং পুলিশই কৃতকর্মের জালে ধরা পড়ে গেছে। এমনি আর কারও মায়ের বুক খালি হোক তা কারও কাম্য নহে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেনা তদন্তে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এর বিশ্লেষণ পূর্বক মেজর (অবঃ) সিনহা হত্যাকারীদের যথোপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক দ্রুত বিচারই জনপ্রত্যাশা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ধৈর্য্য ও সহনশীলতায় দেশবাসী গর্বিত। সেনাবাহিনী এ ব্যাপারে যথেষ্ট ধৈর্য্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে। যদি কোনো কারণে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ধৈর্য্য ধারণ না করে চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করত তবে সাম্য, শান্তি ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হত। অতীতে খিলগাঁওয়ের আনসার বিদ্রোহ, পিলখানার বিডিআরের ঘটনা আজও ভুলে যাওয়ার নহে। পুলিশ বাহিনী ও সেনাবাহিনী সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ ঘটনার দৃশ্যপট প্রশংসনীয়। ভবিষ্যতে এহেন ঘটনার বিচার কাজ যাতে দ্রুত সময়ে সুন্দরভাবে সমাপ্তি ঘটে ইহাও দেখার বিষয়।
দেশের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার ভিডিপি ও সিভিল প্রশাসন সকল সময় একাত্ম হয়ে কাজ করে দেশের গৌরব ও উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়াটাই দেশের সম্মানকে বৃদ্ধি করে। গোঠা দুনিয়ার উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে গেলেও বাস্তব দৃষ্টিতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এখন আর সেদিকে না তাকিয়ে দেশকে উন্নতি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও প্রগতির দিকে নিয়ে যাওয়াটাই মুখ্যম। দেশের মানুষ আর পুলিশের লিয়াকত, প্রদীপ দাশ ও আকবর হোসেনের মতো এমন নরাদম, অপরিনামদর্শী, কুলাঙ্গার ও পুলিশের ভাবমুর্তি বিনষ্টকারী আর কাহাকেও দেখতে চায় না। পুলিশে এখনও গুড পারফরম্যান্সের অনেক কর্মকর্তা রয়েছে, যাদের প্রশংসার জুরি নেই। পরিশেষে রবার্ট ফিলের উক্তি টেনে আবারও বলব “পুলিশই জনতা এবং জনতাই পুলিশ” দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনই হোক পুলিশের গর্ব ও অহংকার। লিয়াকত, প্রদীপ ও আকবররা যেভাবে পুলিশের ভাবমুর্তিকে বিনষ্ট করেছে তাদের প্রেতাত্মা পুলিশে থাকুক তা কেহই প্রত্যাশা করে না।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট