তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) নালিশ করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ম্যাক্রোঁর মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন এমন মন্তব্য এবং ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক দেয়ার পর এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আর্জি জানিয়ে এ নালিশ করেছেন তিনি। একইদিন ইইউ কমিশন থেকেও এরদোয়ানকে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে এ বলে যে, তুরস্কের এ অবস্থানের জন্য দেশটির ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার পথ আরও কঠিন হয়ে গেল।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন মুখপাত্র বলেছেন, কোনো সদস্য রাষ্ট্রের পণ্য বর্জনের আহ্বান কমিশনের চেতনার পরিপন্থি এবং এই ধরনের পদক্ষেপ তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আরও দূরে নিয়ে যাবে।
কাতার এবং কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের কয়েকটি সুপারমার্কেট থেকে ফরাসী পণ্য সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এর জবাবে ফ্রান্স তুরস্কের বিরুদ্ধে পাল্টা বয়কটের ডাক দেবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ফরাসী বাণিজ্যমন্ত্রী বলেস, এমন কোনো চিন্তা তাদের এখনও নেই।
পণ্য বয়কট ফ্রান্সের রফতানিতে খুবই সামান্য প্রভাব ফেলবে দাবি করে দেশটির অর্থনীতিবিদ স্টেফানি ভিলার বলছেন, এর চেয়ে গতবছর ফরাসি ওয়াইনের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করায় বেশি ক্ষতি হয়েছিল। তিনি বলেন, যদি ফ্রান্সের অর্থনীতিকে আঘাত করার সত্যিকারের উদ্দেশ্য থাকে, তবে সব ধরনের ফরাসি পণ্য বয়কট করা হতো। তবে লাভজনক এভিয়েশন খাত ও বিলালসহুল খাতগুলোতে প্রভাব পড়ছে না।
এদিকে এরদোয়ানের মন্তব্য ও পণ্য বয়কটের ঘোষণা দেয়ার পর গত সোমবার ফ্রান্সে ইইউ নেতা ও কর্মকর্তারা ফ্রান্সের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে বলেন, বাক স্বাধীনতার পক্ষে এবং উগ্রবাদের বিরুদ্ধে তার দেশ ফ্রান্সের পাশে আছে।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস এরদোয়ানের আচরণের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, জার্মানি ফ্রান্সের প্রতি সংহতি জানিয়ে তার পাশে থাকবে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ কোঁতে টুইটারে এরদোয়ানের সমালোচনা করে বলেন, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ সম্পর্কে এরদোয়ানের এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। তার দেশ ফ্রান্সের পাশে আছে।
গ্রিক প্রেসিডেন্ট ক্যাটেরিনা বলেন, সভ্যতার নামে ধর্মান্ধতা এবং অসহিষ্ণুতাকে উসকে দেয়া সহ্য করা যায় না।
মত-প্রকাশের স্বাধীনতার শিক্ষা দিতে গত ১৬ অক্টোবর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের একটি স্কুলের শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে মহানবী (সা.) এর বিতর্কিত কার্টুন দেখিয়ে চেচেন বংশোদ্ভূত এক কিশোরের হাতে খুন হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ফ্রান্সে প্রকাশ্যে মহানবীর কাটুন প্রদর্শিত হয়। মহানবীর (সা.) কার্টুন প্রদর্শন ঘিরে বিশ্বজুড়ে ফ্রান্সের ইসলামবিরোধী অবস্থানের প্রতিবাদে ক্ষোভ দেখা দেয়। মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ফরাসী পণ্যসামগ্রী বর্জনের ডাক দিয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক দেশ।
পণ্য বয়কটের এ ডাকে শামিল হন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও। একইসঙ্গে ম্যাক্রোঁর মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।