লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় অস্বচ্ছ মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। যাচাই কমিটিতে থাকায় ৩জন মুক্তিযোদ্ধা নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকাতে থাকায় ৩২ জনের মধ্যে ২০জনেই বিত্তশালী। এনিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধা সন্তানদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে সরকার অস্বচ্ছল মুক্তিযুদ্ধাদের আবাসন নির্মান করবে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ইউএনও তাপ্তি চাকমা, সমাজসেবা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল হাসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ ক ম রুহুল আমিন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার সালেহ আহম্মেদসহ পাঁচ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ৩২ জন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার নাম চুডান্ত করে।
একজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন,আমিসহ তিনজন মুক্তিযোদ্ধা স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও (ডিমান্ড অর্ডার) লেটার জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া তালিকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের ভাই, সাবেক ডেপুটি কমান্ডারের ভাই, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই, বর্তমান উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের বাবাসহ আত্মীয়স্বজন অনেকের নাম রয়েছে।
এমপি'র ডিও লেটারের মাধ্যমে বরাদ্দ পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আবুল হোসেন খান সুফি'র শাহরাস্তি উপজেলায় রাগৈ গ্রামে বাড়ী রয়েছে, তাঁর ছেলে সরকারি চাকুরী জীবি। মুকবুল আহম্মেদ দেড় একর কৃষিজমির মালিক। তোফায়েল আলম মনুর অবস্থাও মোটামুটি সচ্ছল পৌর এলাকা তার কৃষি জমি রয়েছে।
এছাড়া বরাদ্দ পাওয়া আবদুর রশিদ পাটওয়ারীর এক ছেলে প্রবাসে রয়েছে এবং তিনি সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ও বাছাই কমিটির সদস্য সালেহ আহম্মেদের ভাই। নুরুল আমিন দীর্ঘ দিন প্রবাসে ছিলেন তিনি বাছাই কমিটির সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আকম রুহুল আমিনের ভাই। সিরাজুল ইসলাম স্ব পরিবারে ঢাকায় থাকেন তাঁর একমাত্র ছেলে প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত তিনি
বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মনির চৌধুরীর ভাই।এছাড়া সাখাওয়াত উল্যা তিনি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুরাইয়া আক্তার শিউলীর পিতা। নুরুল ইসলামের ছেলেদের রামগঞ্জ বাজারে ২টি ঔষধের দোকান রয়েছে। আবদুল জলিলের দুই মেয়ে আমেরিকা প্রবাসী একমাত্র ছেলের নামে পৌর শহরে সরকারী এক একর সম্পত্তিসহ আরও অনেক সম্পদ রয়েছে। ইদ্রিস মিয়া পাইনের এক ছেলে প্রবাসে থাকে।
সিরাজুল হকের এক ছেলে সেনাবাহিনীতে এবং অপর ছেলে স্কুলে কর্মরত রয়েছে। আবদুল মান্নানের এক ছেলে প্রবাসে রয়েছে। তাজুল ইসলামের দুই ছেলে প্রবাসে থাকে। সেকান্তর ভূইয়া স্ব-পরিবারে খুলনা নিজেস্ব বাড়িতে থাকে। তোফাজ্জল হোসেনের প্রবাস ফেরত দুই ছেলে ব্যবসা করে এবং এক ছেলে প্রবাসে রয়েছে।
নূরুল ইসলাম লাতু পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে সদ্য অবসর গ্রহন করেন, স্ব পরিবারে ঢাকার মিরপুর থাকেন। আমিন উল্যার এক ছেলে ইটালি থাকেন অন্য ছেলে প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত, তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী'র সাথে ঢাকায় থাকেন।
মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম বলেন, জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করছি সরেজমিে কর্তৃপক্ষ দেখেও আমার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নূরনবী বলেন, আমি ভাড়ায় সিএনজি অটোরিক্সা চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালাই। আরেক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ফয়েজ বলেন,আমি পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চালাই। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বাবুল বলেন, গত ২৫ বছর থেকে রামগঞ্জে ভাড়া বাসায় থাকি অথচ তালিকায় সচ্ছল অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। টন্ডিপুর ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন ভুইয়া বলেন,আমার চন্ডিপুর ইউনিয়নে অনেক অস্বচ্চল মুক্তিযোদ্ধা থাকলেও অদৃশ্য ব্যক্তি একটি ওয়ার্ডে ৫ জনকে তালিকাভুক্ত করেছে। আমি ইউএনও স্যার সহ সংশ্লিষ্ঠ যাচাই কমিটির সবাইকে জানিয়েছি। প্রয়োজনে বিষয়টি জেলা প্রশাসক সহ উর্ধতম কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সাংবাদিক সম্মেলন করবো।
জানতে চাইলে বাছাই কমিটির সদস্য, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার সালেহ আহম্মদ জানান, আমাদের দৃষ্টিতে তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা অসচ্ছল। বাছাই কমিটির সদস্য সমাজ সেবা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, আমি মুক্তিযোদ্ধা সালেহ আহমেদসহ কমিটির অন্য সদস্যরা সরেজমিনে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি। কেউ তথ্য গোপন করে রাখলে এবং কমিটিতে থাকায় ৩জন মুক্তিযোদ্ধা সহযোগীতা না করলে প্রকৃত তালিকা করা সম্ভাব নয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপ্তি চাকমা জানান, প্রায় সাড়ে পাঁচ শত ভাতা ভোগী মুক্তিযোদ্ধার মধ্য থেকে বত্রিশ জনকে খুঁজে বের করা কষ্টকর। কেউ চাইলে চুড়ান্ত করা তালিকার বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে আপিল করতে পারবে।