ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ অগ্রনী ব্যাংকে কৃষকের নামে ভূয়া কাগজপত্র তৈরি ও মৃত ব্যক্তিদের নামে ঋণ উঠিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ব্যাংকটির পূর্বের ম্যানেজার, ক্রেডিট কর্মকর্তা কে বরখাস্ত ও এক মাঠ সহকারীকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে আসা ব্যাংকটির প্রিন্সিপাল কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামসহ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্যাংকের বর্তমান ম্যানেজার নাজমুস সাদাত।
অগ্রনী ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখার বর্তমান ম্যানেজার নাজমুস সাদাত জানান, বনখাস্ত হয়েছেন অগ্রনী ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখার পূর্বের ম্যানেজার শৈলেন কুমার বিশ্বাস, ক্রেডিট কর্মকর্তা আবদুস সালাম ও মাঠ সহকারী (অস্থায়ী) আজির আলীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
ব্যাংকটির পূর্বের ম্যানেজার শৈলেন কুমার বিশ্বাসকে বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক অফিসে কর্মরত, ক্রেডিট কর্মকর্তা আবদুস সালাম কালীগঞ্জ শাখায় ও মাঠ সহকারী আজির আলী ঝিনাইদহ হামদাহ বাসস্ট্যান্ড শাখায় কর্মরত ছিলেন।
ব্যাংক সুত্রে জানা গেছে, খুব গোপনে এসব অসঙ্গতির বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে তদন্ত কমিটি। গত এক মাস যাবৎ প্রতিদিন দুইজন কর্মকর্তা ভূয়া ঋণের খোঁজে কাজ করছেন। মাঠ সহকারী আজিজুর রহমান ও ক্যাশ কর্মকর্তা আবদুস সালাম বিষয়টি ধামাচাঁপা দিতে ক্ষমতাসীনদের ব্যবহারের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন।
আড়পাড়া এলাকার সুফল কুমারের স্ত্রী কবিতা অধিকারী বলেন, নতুন ঋণের জন্য তিনি কোন আবেদন করেননি। গত ১৯ অক্টোবর ব্যাংক থেকে ফোন দিয়ে বলা হয়েছে আপনি ব্যাংক থেকে ৫৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। অথচ তিনি ব্যাংক থেকে কোন টাকা ঋণ নেননি। ব্যাংকে চাকরি করে আজিজ আমাদের এই টাকা তুলে নিয়েছে। কিন্তু আমরা জানিনা। এরপর আজির আমাদের ফোন করে বলে আমি এসে দেখা করবানে।
একই এলাকার শেফালী রাণী বলেন, তিনি নতুন কোন ঋণের আবেদন করেননি। কিন্তু হঠাৎ ব্যাংক থেকে ফোন করে জানানো হয়েছে তিনি ৪৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। আমি এই টাকা হাতেও পাইনি।
উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের স্ত্রী রাবেয়া বেগম জানান, এক সপ্তাহ আগে কালীগঞ্জ অগ্রনী ব্যাংক থেকে লোকজন লোক আসছিল। তারা বলে আমার স্বামী নাকি ৬ মাস আগে ব্যাংক থেকে ৪৮ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু আমার স্বামী প্রায়৩ বছর আগে মারা গেছেন।
গত ২০১৭ সাল থেকে ৪% সুদে কৃষিঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম করার অভিযোগ পাওয়া যায়। কৃষকের পূর্বের ঋণের কাগজপত্র জাল ও মৃত ব্যক্তিদের ঋণ দেওয়ার নামে ব্যাংকটির তখনকার ম্যানেজারসহ তিন কর্মচারী বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ নিয়ে গত ১ মাস ধরে অগ্রনী ব্যাংকের ঝিনাইদহ আঞ্চলিক অফিস থেকে তদন্ত কমিটি কাজ করছেন।