কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা পোল্ট্রি শিল্পে সফল আত্মকর্মী যুবক মোঃ শিবলী সাদিক নোমান বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পদক ২০২০ লাভ করেছেন। রোববার ১ নভেম্বর জাতীয় যুব দিবসে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তার হাতে এ পদক তুলে দেওয়া হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী,অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ অন্যন্য অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ টেলিভিশনে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কৃর্তক বেকার যুবদের প্রশিক্ষণ গ্রহনের পর মৎস্য ও পোল্ট্রি খামার করে স্বালম্বী হওয়ার বিজ্ঞাপন দেখে এবং শাইখ সিরাজের উপস্থাপনায় কৃষিভিত্তিক প্রামান্য অনুষ্ঠান “মাটি ও মানুষ” অনুষ্ঠানে প্রচারিত বিভিন্ন প্রকল্পের প্রমান্য তথ্য চিত্র ও সফল যুবকের আত্মকর্মী কাহিনি দেখে প্রাথমিক ভাবে মৎস্য খামার স্থাপনে উদ্বুদ্ধ হন জেলা সদরের বিন্নাটী ইউনিয়নের ধনাইল গ্রামের অ্যাডেেভাকেট আ.রাজ্জাকের ছেলে মোঃ শিবলী সাদিক নোমান। তিনি জানান, আমি মাসব্যাপী মৎস্য চাষ,৭দিন ব্যাপী হাঁস মুরগী পালন খামার স্থাপন,৭ দিন ব্যাপী বনায়ন ও নার্সারী,গরুমোটাতাজাকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞান দিয়ে ২০০২ সালে আমার পিতা অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের কাছ থেকে ২০,০০০/- ধার নিয়ে ০২টি পুকুরে মাছের চাষ শুরু করি। ১ম বছর সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে ৩০,০০০/- টাকা মুনাফা হয়। ২০০৯ সালে আমার লেখা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে মাছের চাষ চালিয়ে যেতে থাকি। কিন্তু প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাবে প্রকল্প সম্প্রসারন করতে পারিনি। আমি ২০১১সনে এম,বি,এস, (মার্কেটিং) ২য়শ্রেণীতে উত্তীর্ন হই। কয়েক বছর সরকারী চাকুরী খুঁেজ হতাশ হয়ে পুনঃরায় মৎস্য চাষ শুরু করি। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, পশু সম্পদ দপ্তর, ও বিভিন্ন এন জিও কর্মকর্তাদের পরামর্শে ২০১৫ সাল থেকে মৎস্য চাষের পাশা পাশি ৬০০ লেয়ার মুরগী নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। ব্যবসা লভ্যাংশ, পারিবারিক উৎস ও কিছু জমি বন্দক দিয়ে প্রকল্প সম্প্রসারণ করতে থাকি। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠিত মেসার্স সোনালী এন্টারপ্রাইজ বহুমুখী ফার্মের প্রকল্পে মোট জমির পরিমাণ ৫ একর ২০ শতাংশ। যার মধ্যে রয়েছে ৪টি পুকুর, ০২টি মুরগীর সেড, সবজীর বাগান, ফলের বাগান, নার্সারী প্ল্যাট। বর্তমানে আমার খামারে ০২টি সেডে লেয়ার মুরগীর সংখ্যা ৩৫০০টি। ৪টি পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে আসছি। বর্তমানে আমার প্রকল্পে নিয়মিত ৪জন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে আরও ৩/৪ জন শ্রমিক কাজ করছে। আমার ব্যাক্তিগত উদ্যোগ ও পরামর্শে এলাকায় আরও ৭/৮টি খামার গড়ে উঠেছে। এ বৎসর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হতে ৬০,০০০/- টাকা যুব ঋণ নিয়ে প্রকল্প সম্প্রসারন করেছি। উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকার বেকার যুবদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছি।
তার এসব কার্যাবলী দেখে জেলা প্রশাসন ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হতে প্রতিনিধিদল পরিদর্শন করে জাতীয় যুব পদকের জন্য প্রস্তাব প্রেরিত হলে পদক বাচাই কমিটি তাকে এ পদক প্রদানের জন্য মনোনীত করেন।
ওবিবার টিভির পর্দায় তাঁর এ পদক প্রাপ্তির খবর দেখে জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও যুব সংগঠকদের মধ্যে বইছে আনন্দ ও উচ্ছাস। কিশোরগঞ্জ যুব উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আমিনুল হক সাদী বলেন, সফল আত্মকর্মী যুবক মোঃ শিবলী সাদিক নোমান জাতীয় যুব পদক প্রাপ্তিতে আমাদের প্রানঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। তার পদক প্রাপ্তি শুধু কিশোরগঞ্জ নয় সারা দেশের পোল্ট্রি শিল্পের উদ্যেক্তাদেরকে আরও উৎসাহিত করবে। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জেড এ শাহাদাৎ হোসেন ও সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান,শহীদুজ্জামান জানিয়েছেন, শিবলীর এ সম্মান মানেই আমাদের সকলের সম্মান। তাঁর জন্য আমাদের অফুরান ভালোবাসা রইল।
এদিকে রোববার সকালে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জাতীয় যুব দিবসের অনুষ্ঠানটি বিটিভির সৌজন্যে সরাসরি সম্প্রচার করাকালে উপস্থিত সকলেই তা উপভোগ করেন এবং কিশোরগঞ্জের ছেলে শিবলী সাদিক নোমানের সারা দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জন করে জাতীয় যুব পদকে ভূষিত হওয়ায় অভিনন্দন জানানো হয়।