বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (হাসাপাতাল) এ ভূল চিকিৎসার অভিযোগে প্রাক্তণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগের প্রায় ২০ কুড়ি মাস পর সরজমিনে তদন্ত করেছে এক তদন্তকারী কর্মকর্তা। কিন্তু অভিযুক্ত কর্মকর্তার সাথে একই গাড়ীতে করে তদন্তকারী কর্মকর্তা বিরলে এসে আবার একই গাড়ীতে ফিরে যাওয়ায় তীব্র সমালোচনা করছে অভিযোগকারী রোগীর আত্মীয়-স্বজনসহ স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চাঁদাবাজি ও হুমকির অভিযোগের মামলায় আসামি করে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে তাঁদেরকে। অপরদিকে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ অভিযুক্তরা এমনকি হাসপাতালের বর্তমান কর্মকর্তাও সংবাদকর্মীদের সাথে মুখ খুলতে রাজি হোননি। তদন্তাধীন বিষয়ে কোন কথা সংবাদমাধ্যমে বলা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর কবির।
ভূক্তভোগী রোগী ইসমত আরা (৩৫) এর স্বামী ওয়াকুল ইসলাম জানান, গত ২১ জানুয়ারি সোমবার সন্ধ্যা আনুমানিক ৬ টায় তাঁর স্ত্রী বিষপান করলে বিরল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ওয়াশ করে রেজিস্ট্রেশন নং ১০১/৪ বেড নং ম-২৬ ভর্তি করানো হয়। কিন্তু রাত সাড়ে ১১ টায় রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীকে বদলী করে। উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পরদিন মঙ্গলবার পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, রোগীর ভূল চিকিৎসার কারণে নাড়ী-ভূড়ী ছিড়ে গেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবরে ৩১ জানুয়ারি ওয়াকুল ইসলাম একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ২ ফেব্রুয়ারি বিরল হাসপাতালের উঃস্বাঃকমঃ/বিরল/দিনাজপুর/১৯/১২৩ নং স্মারকে চিকিৎসাপত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র দাখিল করতে বলা হলে ৩ ফেব্রুয়ারি ওয়াকুল ইসলাম ১৬ পাতা কাগজপত্র দাখিল করেন। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা হতে ১০ টা পর্যন্ত বিরল হাসপাতাল থেকে ০১৭১০৮৬৭৬৮৬ নম্বর হতে ওয়াকুল ইসলামের ব্যবহৃত ০১৭৭৪১৬২১১০ নম্বরে একাধিকবার ফোন দিয়ে বলে বেটা হাসপাতালে অভিযোগ করেছিস, তোর স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে তাড়াতাড়ি আয়। ওয়াকুল ইসলাম স্বাক্ষীদের নিয়ে হাসপাতালে পৌছলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত টিম করা হয়েছে বলে জানানো হয়। ওয়াকুল তাঁর স্ত্রীকে ডাকার কারণ জানতে চাইলে, অভিযোগ তুলে নেন, না হলে আপনাদের বিরুদ্ধে অন্য ব্যবস্থা করিব জানায়। স্যার এটা কি কথা বলেন, আপনার কাছে ন্যায় বিচার পাবার জন্য আসছি জানালে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলে, বেটাদেরকে রুমে আটকিয়ে রাখো। সেই সময় ওয়াকুল ইসলাম স্বাক্ষীদের নিয়ে তাড়াহুড়ো করে হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে আসে। এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার বিরল থানা পুলিশ রোগীর আত্মীয় কামরুজ্জামান ভোলাকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করলে ওয়াকুল ইসলাম জানতে পারেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের স্বাস্থ্য পরিদর্শক নজরুল বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করছে। ওয়াকুল ইসলাম প্রকৃত ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায় বিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
থানার মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ জানুয়ারি/২০১৯ এজাহার নামীয় ৭ জন ও অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন আসামি হাসপাতালের ৩ জন কর্মচারীর নামে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নিকট একটি বানোয়াট অভিযোগ দায়ের করে ৩ জনের নিকট থেকে ২ মাসের বেতনের সমপরিমাণ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক ১১ টায় ওই চাঁদা নেয়ার জন্য আসামিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অফিস কক্ষে গিয়ে চাঁদার টাকা না পেয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাস্থ্য পরিদর্শক মোঃ নজরুল ইসলাম ও তাঁর সহকর্মী টিএলসিএ ফরিদুল আলমকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জীবননাশের হুমকি দেন। থানা পুলিশ সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান করে দুই কর্মচারীকে শারীরিক লাঞ্চিত ও চাঁদাবাজির হুমকির অভিযোগে ৭ জন এজাহার নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন আসামীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে এজাহারনামীয় কামরুজ্জামান ভোলা নামের এক আসামীকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করে। বিজ্ঞ বিচারক আটককৃতর জামিন মঞ্জুর করলে সে জামিনে মুক্ত আছে। এরপর ৩ এপ্রিল/২০১৯ তারিখে রোগীর আত্মীয়-স্বজনসহ ১১৪ জন এলাকাবাসী স্বাক্ষরীত একটি স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বরাবরে প্রেরণ করার পর গত ২১ অক্টোবর/২০২০ তারিখে নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর কবির স্বাক্ষরীত সি,এস,নীলফা/২০২০/৩৪৮৬/১(০৫) নং স্মারকে গত ১ মার্চ/২০২০ তারিখের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বা:অধি:/শৃঙ্খলা-১৮/২০২০/১০৮৯ নং স্মারকের সূত্র মোতাবেক প্রাক্তন বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও বর্তমানে পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ ফজলুর রহমান, বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর বর্তমান স্বাস্থ্য পরিদর্শক মোঃ নজরুল ইসলাম, নাইটগার্ড মোঃ মোসলেম, সাইদুর রহমান, এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকেসহ অভিযোগকারী মোঃ ওয়াকুল ইসলামকে ১ নভেম্বর/২০২০ তারিখে সকাল ১০ টায় তদন্ত বোর্ডের চাহিদা মোতাবেক নথিপত্র উপস্থাপন ও তদন্ত বোর্ডকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করে পত্র প্রেরণ করা হয়। পত্রের আলোকে অভিযোগকারী বিরল হাসপাতালে সকাল ১০ টায় উপস্থিত হলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর কবির এবং প্রাক্তন বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও বর্তমানে পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ ফজলুর রহমান একই গাড়ীতে করে হাসপাতালে প্রবেশ করলে অভিযোগকারীসহ উপস্থিত সকলের মাঝে এর তীব্র প্রতিক্রীয়া দেখা দেয়। পরে দন্তকারী কর্মকর্তা নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর কবির উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হলরুমে অভিযোগকারীসহ অভিযুক্তদের পর্যায়ক্রমে বক্তব্য শ্রবণ করেন।