লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে মো. সহিদুন্নবী জুয়েলকে (৫০) পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা তদন্ত করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এছাড়াও এই নৃশংস হত্যা কান্ডের প্রতিবাদে জেলায় দুদিন ধরে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
রোববার (১ নভেম্বর) বুড়িমারী স্থলবন্দর আসেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ ও তদন্ত বিভাগের পরিচালক আল মাহমুদ ফাউজুল কবিরসহ ৩ সদস্যের একটি কমিটি।
ওই তদন্ত কমিটি বুড়িমারী জামে মসজিদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পুড়ানোর স্থানসহ বিভিন্নজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করবেন।
এ সময় কমিটির প্রধান ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ ও তদন্ত বিভাগের পরিচালক আল মাহমুদ ফাউজুল কবির বলেন, নিহত জুয়েল কেন বুড়িমারীতে এলো? তাকে যখন মারধর করা হচ্ছে তখন তার সাথে থাকা অপর লোকটি তাকে রক্ষার চেষ্টা করেছে কি না? আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি তাকে হঠাৎ করে কেন মারধর করলো? নিহত জুয়েল কোরআন অবমাননা করেছে কিনা? ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হাফিজুল নিহত জুয়েলকে অন্য স্থানে না সরিয়ে দীর্ঘক্ষণ পরিষদে আটকিয়ে কেন রাখলো? অনেক পরে কি কারণে পুলিশকে খবর দেওয়া হলো? বহিরাগত লোকজন কার ডাকে আসলো? এ ঘটনায় কারো প্ররোচনা আছে কিনা সহ নানা বিষয়ে তদন্ত করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, কমিশন তদন্ত করে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিবে।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পি এম রাহসিন কবির, সিনিয়ন সহকারী পুলিশ সুপার তাপস সরকার উপস্থিতি ছিলেন।
অপরদিকে বুড়িমারীতে মো. সহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগে দায়ী ব্যাক্তিদের শাস্তির দাবীতে গত ূুদিন ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
লালমনিরহাট জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারন সম্পাদক এ্যাড. রফিকুল ইসলাম ইসলাম বলেন, এমন ঘটনার নিন্দা জানাবার ভাষা আমার নেই। ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাক না কেন তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় না আনলে ভবিষ্যতে আরও এমন বিভৎস, বিকারগ্রস্ত মানুষের উল্লাস দেখতে হবে আমাদের।
লালমনিরহাট জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি এ্যাড. ময়েজুল ইসলাম ময়েজ বলেন, এটি একটি লোমহর্ষক হত্যাকান্ড। এ দায় কার? আমরা এতটাই অসহিষ্ণু, এত বেশি পাশবিক হয়ে পড়ছি প্রতিটি ঘটনায়। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের আগামী প্রজন্ম কি করে একটি সুস্থ, সহনশীল বাসযোগ্য সমাজ পাবে? মাথায় এখন এমন প্রশ্নই বার বার আসছে। বড় কষ্ট পাচ্ছি আমরা। কিন্তু কে দিবে এসবের উত্তর। একটু দায়িত্বশীল হলে কি, এ মর্মান্তিক, মধ্যযুগীয় হত্যাকান্ডটি এড়ানো যেত না? ঘটনাটি শুরু থেকে বিশ্লেষণ করলে মনে হয় ¯হানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন আর একটু দায়িত্বশীল এবং দ্রুততার সাথে পদক্ষেপ নিতে পারলে এমন ঘৃণ্য, নৃশংস মৃত্যুটি হয়তো এড়ানো যেত। শুনেছি ছেলে বেলায় বাবা মা দুজনকেই হারিয়েছে নিহত ওই জুয়েল।ওর দুটি ছেলে মেয়ে। বছর খানিক আগে চাকুরী হারানোর পর কিছুটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। তার সন্তানরা তাদের প্রিয় বাবার পোড়া লাশের ছাই ভস্ম আর অবশিষ্ট কঙ্কাল টা দেখার পর তাদের কি অব¯হা হয়েছিল।সারাজীবন এই দুঃসহ স্মৃতি আর ভয়ংকর দৃশ্য তাদের কতটা মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত করবে। সন্তানদের এই কঠিন সময়ে শক্তি দিন। প্রকৃত সত্য ঘটনা তদন্তে বেড়িয়ে আসলে হয়তো জানা যাবে।
উল্লেখ্য, লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে যাকে পিটিয়ে হত্যার পর পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সেই সহিদুন্নবী জুয়েল বুড়িমারীতে গিয়েছিলেন ওষুধ কিনতে।
নিহত সহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আবদুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। গত বছর চাকরিচ্যুত হওয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি।
এ ঘটনায় ৩টি মামলা হয়েছে। জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।