নারী অধিকারকে সাফল্যের সিড়িঁতে বেড় হয়েছিল বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। এই ধারাবাহিকতায় বাজিতপুরের পাঁচ নারী শত বাধা শিকল ছিড়েঁ সাফল্যের সিড়িঁতে পৌঁছতে অনেক পথ যুদ্ধ করে তারা আজ বিজয়ী হয়েছে। এরা হলেন,
অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অজর্নকারী নারী পপি আক্তার ঃ বাজিতপুর উপজেলা সরারচর ইউনিয়নে তেঘরিয়া গ্রামের পপি আক্তার, স্বামা- মোঃ মামুন রশিদ, স্বামীর আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকায় সংসারে অভাব অনটন গেলেই থাকত। বেচেঁ থাকার জন্য কিছু করার তাগিদে প্রতিবেশীর কাছে শাড়ীর পুথিঁ বসানোর কাজ করেন এবং শিখেন। পরবর্তীতে নিজে ধার দেনা করে খিছু পুজিঁ নিয়ে ৪/৫ জন দুঃস্থ নারীকে নিয়ে কাজ শুরু করেন। আস্তে আস্তে পপি আক্তারের প্রায় ৮০০ নারী কর্মী রয়েছে। পপির স্বামীও তাকে ব্যবসার কাজে সহযোগিতাম করেন। অভাব অনটন দৈন্যদশা থেকে মুক্তি সবই পপির হাত ধরে। নিজেও স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং অন্যকেও করেছেন। আজ পপি আক্তার অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অজর্নকারী নারী সকলের পরিচিত মুখ।
শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী আমেনা সুরমা আক্তার ঃ আমেনা আক্তার সুরমা, স্বামী- আঙ্গুর মিয়া, গ্রাম- মধ্যভাগলপুর, বাজিতপুর পৌরসভা এর সাথে ৯ম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাল্য বিয়ে হয়। বিয়ের পর আর পড়াশুনা হয়নি। স্বামীর আর্থিক অবস্থা ভাল না তেমন কাজ কর্মও করত না। এ অবস্থা দেখে আমেনা আক্তার সুরমার বাবা-মা স্বামীর সাথে সম্পর্ক শেষ করার জন্য মানসিকভাবে চাপ নেন। সন্তানদের কথা চিন্তা করে বাবা মায়ের কথা কর্ণপাত করেন নি। সংসারের চাপ থাকা সত্বেও কাজের ফাঁকে লেখাপড়া করেছেন হাল ছাড়েননি। এসএসসি এবং এইচএসসি পাশ করেছেন পাশাপাশি এনজিওতে চাকুরীও করেছেন। বড় সন্তানের সাথে বি.এ পাশ করেছেন। বর্তমানে তিনি বাজিতপুর পৌসভার একজন সম্মানিত জনপ্রতিনিধি। শিক্ষার কোন বিকল্প নেই শত বাধা বিপত্তিও তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছেন একমাত্র শিক্ষাই পারে জীবনকে আলোকিত করতে। আমেনা আক্তার সুরমা শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অজর্ন করেছেন।
সফল জননী ফরিদা খানম ঃ পিরিজপুর ইউনিয়নের ডুয়াইগাঁও প্রত্যন্ত গ্রামে থেকে ৭ জন ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছেন। একরকম বলতে গেলে বাল্য বিয়েই হয়েছে। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বিয়ের পর সন্তান জন্ম হওয়ায় আর পড়াশোনা হয় নি। ফরিদা খানম বাল্যবিয়ের কারণে মাধ্যমিকে গন্ডি পেরুতে পারেননি তাই সন্তানদের দিয়ে সেই ইচ্ছে পূরণ করা প্রতিজ্ঞা করেন। স্বামী প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। ফরিদা খানম নিজের সব ইচ্ছাকে ত্যাগ করে ছেলে মেয়েদের পড়া শোনার দিকে নজর দেন তিনি। ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে কোন তফাত করেন নি। সমান শুরুত্ব দিয়ে সন্তান হিসেবে তাদের মানুষ করেন ৭ জন সন্তানই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। ৩ সন্তান বিসিএস ক্যাডার। প্রথম মেয়ে কামরুন নেছা খানম- শিক্ষক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দ্বিতীয় ছেলে- ডঃ আশরাফুল আলম ২২ তম বিসিএস- প্রশাসন ক্যাডার, তৃতীয় মেয়ে- আকলিমা- শিক্ষক, চতুর্থ ছেলে- শরিফুল আলম- শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ৫ম ছেলে আলম সোহেল- শিক্ষক প্রাথমিক বিদ্যালয়, ষষ্ঠ ছেলে- আরিফুল আলম জুয়েল- ৩১তম বিসিএস কর ক্যাডার, সপ্তম ছেলে- তরিকুল আলম রাসেল ৩১তম বিসিএস- নির্বাহী প্রকৌশলী, গণপূর্ত। ফরিদা খানম এর ত্যাগ সার্থক হয়েছে তিনি একজন সফল জননী।
নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে পেলে নতুন উদ্যেমে জীবন শুরু করেছে রুনা আক্তার ঃ বাজিতপুর পৌরসভার মধ্যভাগলপৃুর গ্রামের রুনা আক্তার, পিতা- মহিবুর রহমান (মজনু মিয়া)। রুমা আক্তার ১০ম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার গরিব মা-বাবা অভাবের তাড়নায় বিয়ে দেয়। বিয়ের পর আর পড়াশুনা করতে পারেননি। স্বামী তেমন কাজকর্ম করত না আর্থিক অবস্থাও ভাল না। যৌতুকের জন্য স্বামী তাকে শারিরীক এবং মানসিক নির্যাতন শুরু করে। গরীব অসহায় বাবা মায়ের পক্ষে স্বামীর দাবীকৃত টাকা দেওয়া সম্ভব না। তাই রুনার স্বামী তাকে না জানিয়ে আনেকটি বিয়ে করে। সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে স্বামীর সব অত্যাচার সহ্য করে। অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বেড়ে চলে স্বামীর যৌতুকের দাবী মিটাতে না পারায় একসময় রুনাকে তালাক দেয়। সন্তানকে নিয়ে রুনা গরীব বাবার আশ্রয়ে আসে। নিজের স্বল্প বিদ্যাকে ভর করে ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়িয়ে নিজের এবং সন্তানের ভরণ-পোষণ এবং পাশাপাশি হাসঁমুরগী পালন করে সংসার চালায়। তবুও থেমে থাকেননি। সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে শত বাধাঁ বিপত্তি পেরিয়ে এভাবেই রুনা নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করে।
সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন ছালমা বেগম ঃ ১০ম শ্রেণিতে পড়ার সময় দিলালপুর ইউনিয়নের বড়খাটুলা গ্রামের মোঃ খালেদ মিয়ার সাথে বিয়ে হয়। পরে আর পড়াশুনা হয়নি। স্বামীর আর্থিক অবস্থা তেমন স্বচ্ছল নয়। সংসারের কথা চিন্তা করে স্বামীর কাজে সহযোগিতা করেছেন। ৪ জন সন্তানকে মানুষ করার জন্য এবং জীবিকার তাগিদে অনেক কষ্ট করেছেন। সব সময় দুঃস্থ অসহায় মানুষের পাশে থেকেছেন। ১৯৯৮ সাল থেকে বিভিন্ন সমাজ সংগঠনের সাথে কাজ করেছেন। সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচির সহযোগিতায় ১ মাস ব্যাপি তিনি সহযোগিতা পাওয়ার জন্য অসহায় নারীদের সহযোগিতা করেছেন। তিনি গর্ভবর্তী মায়ের গর্ভকালীন সময়ে স্বাস্থাসেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৩ জন মহিলাকে ধাত্রীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। এলাকার যে কোন সমস্যা হলে সকলে তার কাছে পরামর্শ গ্রহণ করে। সমাজ উন্নয়নে নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন ছালমা বেগম।