নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ১৭ বছরের অপ্রাপ্ত মেয়েকে বিয়ে করার অপরাধে স্থানীয় প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়ে ৬ লাখ টাকায় রফাদফা করে ছাড়া পেয়েছেন ঢাকাস্থ আল-নাসের এভিয়েশন। ১ নবেম্বর ওই টাকা ভাগাভাগির খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় সৃস্টি হয় তোলপাড়। জানা যায় ঢাকা জেলার মিরপুর উত্তর পাইকপাড়ার মৃত সামসুল হকের ছেলে এবং আল নাসের এভিয়েশন সার্ভিসের মালিক আব্দুল্লাহ আল নাসের। হজ্জ ও ওমরা পালনে লোক পাঠানোর সুবাধে আব্দুল্লাহ আল নাসেরের পরিচয় হয় কিশোরীগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বাসিন্দা আতিকুল ইসলামের সাথে। একাধিক বিয়ে করা ৬৩ বছরের বৃদ্ধ আল নাসের পুনরায় বিয়ের জন্য আতিকুল ইসলামকে মেয়ে খুঁজতে বলেন।
আতিকুল ইসলাম এক ঘটকের মাধ্যমে কিশোরীগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের খোলাহাটি গ্রামের আবদুল মতিনের ১৭ বছরের অপ্রাপ্ত বয়সের নাতনীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। মেয়েটির নানা গরীব হওয়ার কারণে ২৭ অক্টোবর নগদ ১ লাখ ২৫ হাজার ৫শ ৫ টাকা দেনমোহরে মেয়েটির সঙ্গে উপজেলার বড়ভিটায় আতিকুল ইসলামের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। বিয়ের একদিন পর ২৮ অক্টোবর ওই আব্দুল্লাহ আল নাসের তার নিজস্ব প্রাইভেট কারে (ঢাকা মেট্রোÑগ ৩৫-২৭৯০) তার নববিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে নিতাই ইউনিয়নের খোলাহাটি গ্রামে নানা শ্বশুর আবদুল মতিনের বাড়ি আসেন। এলাকার কিছু প্রভাবশালী এ বিয়ে মেনে নিতে না পেরে আব্দুল্লাহ আল নাসেরকে আটক করে। ওই গ্রামের সুরুজ মিয়া, সোনা মিয়া, আবুল কালাম কাল্টু মিয়াসহ বেশকিছু প্রভাবশালীরা বৃদ্ধ আবু নাসেরকে ছাত্রলীগ নেতা সুরুজের বাড়িতে আটকে রাখে। এরপর নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুকের নেতৃত্বে রাতভর সালিশ বৈঠক বসে। অপ্রাপ্ত বয়সের মেয়েকে বিয়ে করার অপরাধে প্রভাবশালীরা আব্দুল্লাহ আল নাসেরের কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করে বসে। বৈঠকে অবশেষে ৬ লাখ টাকায় রফাদফা হয়। এজন্য নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুকের নামে স্টান্ডার্ড ব্যাংক,নীলফামারী শাখার অনুকুলে ৬ লাখ টাকার চেক প্রদান করেন আল নাসের এভিয়েশন সার্ভিসের মালিক। যাহার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ৫০১১৩০০০০২০ চেক পাতা নম্বর সিএএ ০০০০৪৭৫। এরপর ২৯ অক্টোবর সকালে চেয়ারম্যান নিজে নীলফামারী শহরে এসে চেকের ৬ লাখ টাকা উত্তোলন করেন।
এ বিষয়ে আল নাসের এভিয়েশন সার্ভিসের মালিক আব্দুল্লাহ আল নাসেরের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ৬ লাখ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে ঘটনা মিমাংসা করে আমি ঢাকায় ফিরে এসেছি।
্এ ব্যাপারে নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুকের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ আল নাসের মাত্র ১ লাখ ২৫ হাজার ৫শ ৫ টাকা দেনমোহর ধার্য করে মেয়েটিকে বিয়ে করেছিল। দেনমোহর কম হওয়ার কারণে তাঁর কাছে দেনমোহর বাবদ ৬ লাখ টাকার চেক গ্রহন করা হয়েছে। ৬ লাখ টাকার মধ্যে ২ লাখ টাকা খরচ বাবদ স্থানীয়দের বুঝিয়ে দিয়েছি বাকি ৪ লাখ টাকা আমার কাছে গচ্ছিত রয়েছে।
এদিকে বিয়ের কাবিননামায় দেখা যায় বর কনে ও অন্যান্য স্বাক্ষীর স্বাক্ষর দেখা গেলেও নিকাহ রেজিষ্টারের নাম ও স্বাক্ষর নেই। এমনকি কোন এলাকার নিকাহ রেজিস্ট্রার বিয়ে পড়িয়েছেন তারও হদিস পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে মেয়ের নানা আবদুল মতিনের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এটি ভুয়া বিয়ে হয়েছিল। যে টাকা পেয়েছি তা নাতনীর নামে জমা রেখেছি।