ভুমিহীন ২০ পরিবারে বসতভিটায় হামলা করে দখল নিয়ে সেখানে ঘর উঠানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুমিহীন পরিবার গুলো থানায় অভিযোগ করেও পুলিশের কোন সাহায্য পাচ্ছেনা।
কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের নদী বিচ্ছিন্ন মধ্যে শিকারপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে,ওই এলাকার ভুমিহীন নুরনবী (৪০),পিতা মৃত্যু মহর আলী,ইয়াকুব আলী(৭৫),পিতা মৃত্যু ইউনুছ আলী,সমেশ আলী(৪০) পিতা মৃত্যু সোনউল্লাহ,বেলাল হোসেন (৬০) পিতা মহর আলীসহ প্রায় ২০টি পরিবার তাদের কোন জায়গা জমি না থাকায়,নদী ভাংগা ২০টি পরিবার ১৯/২০ বছর থেকে সরকারী খাস জমিতে আশ্রয় নিয়ে অদ্যবদি বসবাস করে আসছে।
মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের শিকারপুর মৌজায় ১ নং খতিয়ানের ১২৭,১২৮,১২৯,১৩০,১৩৩ নম্বর দাগের সাড়ে ৩ একর জমিতে ওই ভুমিহীন অসহায় পরিবারগুলো মাথা গুজার ঠায় করে নেয়।
ভুমিহীন বেলাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান,তিনি সহ ২০টি পরিবার সেখানে ২০ বছর যাবৎ বসবাস করে আসছেন। গত শুক্রবার এলাকার প্রভাবশালী ও আওয়ামী লীগ নেতা ইমান আলী দেওয়ানীসহ তার ভাড়াটে সন্ত্রাসী দ্বারা আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারপিট করে। পরে তার একটি চৌচালা টিনের ঘরের চালা বাড়ির পাশে রেখে চলে যায়। যাওয়ার সময় বলে যায় ১ সপ্তাহের মধ্যে ভিটে ছেড়ে চলে যাবি। না গেলে তোদের মেরে ফেলবো। এ ব্যাপারে আমার স্ত্রী বাদী হয়ে ইমান আলীর বিরুদ্ধে ৫ নভেম্বর ঢুষমারা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়,বসত ভিটা তাদের দখলে থাকা স্বত্তেও গত ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভুমিদস্যু ইমান আলী তার ৩ ছেলে সুরমান আলী(৩০),বাবুল হোসেন (২৭) ও নজির হোসেন (২২) নামে এবং তার নিকট আত্মীয় মজিদ খন্দকার(৬০ )পিতা মহর খন্দকার,মোস্তফা খন্দকার (৩০) পিতা মজিদ খন্দকার,কামরুল খন্দকার (২৫),পিতা মজিদ খন্দকার,মোগল হোসেন (৩০) পিতা আজিজল হক,মর্জিনা খাতুন (৫০)স্বামী দুলা মিয়সহ ৮ জনের নামে বন্দেবস্ত করে নেয়। তৎকালিন ইউনিয়ন ভুমি উপ সহকারি কর্মকর্তা তথ্য গোপন করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ওই দাগের ভুমি বন্দোবস্ত দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে আরও জানা গেছে, ১ মাস আগে ভুমিদস্যূ ইমান আলী তার সন্ত্রাসী নিয়ে ভুমির দখল ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যায়। তারা দখল ছেড়ে না দেওয়ায় ইমান আলী ঢুষমারা থানায় অভিযোগ দেন। থানা পুলিশ তাদেরকে মাঝে ,মধ্যে হয়রানি করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার ওই চরে গেলে ওই চরে বসবাস কারী নুরনবী সাংবাদিকদের নিকট জানান, ইমান দেওয়ানী মাঝে মধ্যে এসে আমাদের মেরে ফেলার ভয়ভিতি দেখায়। আমাদের ছেলে মেয়েদেরসহ আমাদের বাড়ি ঘর পুড়ে ফেলার হুমকি দেয়। এখন আমারা ছেলে মেয়ে সহ কোথায় যাব।
চরের স্থানীয় আমিন হামিদুল ইসলাম জানান,ওই পরিবার গুলোর মাথা গুজার ঠাই না থাকায় আমি ও এলাকার মহৎ ব্যক্তিবর্গ তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট গেলে ,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেখানে বসবাস করার নির্দেশ দেন। তখন থেকেই বসবাস করে আসছে।তিনি আরও জানান,ইমান আলী দেওয়ানী দলের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রভাব খাটিয়ে অন্যের জমি দখল করে নেয়। কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে না। প্রতিবাদ করলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে মারপিট নতুবা গুম করার চেষ্টা করে।ওই এলাকার আনোয়ার হোসেন জানান, ইমান আলী একজন দুস্কৃত প্রকৃতির লোক। সে ভুমিদস্যুর পাশাপাশি আন্ত: ডাকাত দলের সর্দার। তার ভয়ে চরের কেউ মুখ খোলে না। ভুক্ত ভোগী সমেশ আলী জানান,উক্ত চর এখন ইমান আলীর দখলে। সে একজনের জমি টাকার বিনিময়ে অন্যকে দখল করে দেয়।
শিকারপুর ওয়ার্ডর ইউপি সদস্য রেফাজ উদ্দিন জানান, আমি জানি প্রায় ২০ বছর যাবৎ ওই চরে ২০টি পরিবার বসবাস করছে। এখন শুনছি ইমান দেওয়ানী চরটি বন্দোবস্ত নিয়েছে। অভিযুক্ত ইমান আলী দেওয়ানী জানান,আমার আত্মীয়স্বজন বৈধভাবে জমিগুলো বন্দোবস্ত নিয়েছে। এখন ওরা জবরদখল করে থাকতে চায়।আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন।
এ ব্যাপারে মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন ভুমি সহকারি কর্মকর্তা খালেকুজ্জামান জানান,সরকার কাউকে উচ্ছেদ করে বন্দোবস্ত দেয়না। যারা বসবাস করে আসছে তারাই বন্দোবস্ত পাবে।
এ ব্যাপারে ঢুষমারা থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ জানান, আমি একটি অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.নবীরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারের ব্যাপার। ভুক্তভোগীরা স্যারের নিকট আবেদন দিতে পারে, আমার নিকট আবেদন দিতে পারে।অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিব।