রাজশাহী জেলার পুঠিয়া বাঘা চারঘাট এই তিন উপজেলায় ভেজাল খেজুরের গুড়ে সয়লাভ হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র গুড় তৈরি করার জন্য এ অঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় ১০ হতে ১২ ট্রাক অতিরিক্ত চিনি প্রবেশ করছে। বেশিরভাগ চিনি ভেজাল গুড়ের মিশিনোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে চিনি মিশানো গুড়গুলি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নীরবিগ্নে চলে যাচ্ছে। জেলার পুঠিয়া বাঘা চারঘাট এই তিন উপজেলা এলাকায় কয়েকজন পাইকারী চিনি বিক্রেতা রয়েছে। রাজশাহী নাটোর জেলায় শীত মৌসুমে ব্যাপক চিনির চাহিদা থাকায়। দেশের ভেতরে থাকা আমদানিকৃত চিনিগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করছে চিনি পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সারা বছর তেমন কোনো চিনি বিক্রি করতে দেখা যায় না। কিন্তু বর্তমানে প্রতিদিন টনকে টন পাইকারি চিনি কেনাবেচা করতে দেখা যাচ্ছে। হাট বাজারের মোদিখানা দোকানগুলিতে ভেজাল খেজুর গুড় তৈরি করার জন্য খুচরা বিক্রেতারা হুড়াহুড়ি করে চিনি কিনছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিনি পাইকারী ব্যবসায়ী বলেন, আগে আমরা প্রতিদিন পাঁচ/দশ বস্তার বেশি চিনি বিক্রি করতে পারতাম না। কিন্তু এখন দোকান খোলার আগেই খুচনা বিক্রেতা এবং মোদিখানা দোকানদারা এসে চিনি কিনার জন ধরনা দিয়ে বসে থাকছেন। বর্তমানে আইনশৃংখলা বাহিনীর চাপে কারণে প্রকাশ্যে গোডাউনে চিনির ট্রাক খালাশ না করে, অন্যত্র রেখে আস্তে আস্তে খুচনা বিক্রেতাদের নিকট বিক্রি করতে হচ্ছে। রাজশাহী নাটোর জেলায় প্রতিদিন প্রায় ১০ হতে ১২ ট্রাক ভর্তি চিনি বিভিন্ন মাধ্যমে দিয়ে এই এলাকায় এসে পৌঁেঁছ যাচ্ছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, পুঠিয়ার বানেশ্বর হাট, ঝলমলিয়া হাটসহ ছয়জন পাইকার, বাঘা সদর, আড়ানী বাজার মিলে পাঁচজন, চারঘাট সদর,নন্দনগাছি বাজারে চারজন পাইকারী চিনি বিক্রেতা রয়েছেন। তিন উপজেলা ভেতর বাঘা উপজেলার আড়ানী অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ভেজাল গুড় তৈরি করার সন্ধান পাওয়া গেছে। রাজশাহী জেলার ভেতর খেজুর গুড়েরের সর্ববৃহৎ আড়ত হচ্ছে, পুঠিয়া উপজেলার ঝলমলিয়া ও বানেশ্বর হাট। শীত মৌসুম শুরু হলেই বাঘা চারঘাট উপজেলা জুড়ে শতাধিক আড়ত গড়ে উঠে। হাট-বাজারসহ প্রতিদিন সকাল থেকে ওই আড়ত গুলোতে খেজুরের গুড় কেনাবেচা হয়ে থাকে। বর্তমানে ভেজাল গুড় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০/৭০ টাকা করে। আর খাঁটি খেজুর গুড় ১ কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০/ ১০০ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে বাজারে খুচরা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা কেজি করে। গুড় কিক্রেতারা বলেন, কেউ বা গত বছরের পুরাতন ‘র’ বা লালি মেশায়ে বাজারে গুড় নিয়ে আসছে। এখনো খুব বেশি শীত পড়েনি। কিন্তু এ অঞ্চলের হাটগুলোতে ব্যাপক গুড় দেখা যাচ্ছে। গুড়ের রং ভালো হলে বাহির থেকে আসা পাইকাররা অনেক বেশী দামে কিনতে আগ্রহী হয়। গুড়ের রং করতে কী কী মেশাতে হয়,এমন প্রশ্ন করলে, তিনি বলেন, চুন ফিটকারীর পাশাপাশি একটু বেশী করে চিনি, সোড়া ও হাইডোজ দিতে হয়। আড়ৎদার আমির হোসেন বলেন, হাটে আসা বেশীর ভাগ খেজুরের গুড়ে মাত্রারিক্ত চিনি মেশানো রয়েছে। ঝকঝকে রং না হলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারা বেশ দামে গুড় কিনে না। চিনি মিশানো গুড় র্দীঘদিন আড়ৎতে কিংবা বাসা-বাড়িতে পড়ে থাকলে এর রং নষ্ট হয় না। কালো রংগের গুড় শহরের লোক পছন্দ করে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, আমরা দুই/একদিনের ভেতর ভেজাল খেজুরের গুড় কেনাবেচা না করার জন্য ক্রেতাবিক্রেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করব। তারপরও তারা ভেজাল গুড় বিক্রি করা শুরু করলে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হবে।