করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব এক চরম দুঃসময় অতিক্রম করছে। আগের চেয়েও ভয়াবহরূপে ফিরে এসেছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলাদেশেও দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে। আশার কথা, একাধিক টিকা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু টিকাই করোনা থেকে আমাদের মুক্ত করতে পারবে না। এর জন্য প্রয়োজন হবে আরো অনেক বেশি সচেতনতা, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে আমরা সেই সচেতনতা থেকে এখনো অনেক দূরে। ইউরোপে করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় সংক্রমণ ঠেকাতে নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করছে কয়েকটি দেশের সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক আগেই বাংলাদেশে দ্বিতীয় দফা করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা প্রকাশ করে বর্তমান অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সরকার এরইমধ্যে ঘোষণা করেছে, ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’। বিশেষজ্ঞরা সব সময়ই জোর দিচ্ছেন মাস্ক পরার ওপর। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় চলছে অভিযান, হচ্ছে শাস্তি। তার পরও ঢাকায় এখনো বেশির ভাগ মানুষই মাস্ক ব্যবহারে সতর্ক হচ্ছে না। অনেকেই মাস্ক না পরেই চলাফেরা করছে। চলছে হাট-বাজারে অবাধে কেনাবেচা, এমনকি গণপরিবহন ও কর্মস্থলে অনেক ক্ষেত্রেই সচেতন মানুষও মাস্ক ব্যবহার করছে না। সব মিলিয়ে মাস্ক পরা নিয়ে চলছে রীতিমতো বিশৃঙ্খল অবস্থা।
শীতের সময় সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে সরকার ও বিশেষজ্ঞ পর্যায় থেকে। মাস্ক পরা নিশ্চিতে গত সোমবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রীসভার বৈঠকে মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) পরিচালনাসহ শক্ত অবস্থানে যাওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, কোভিড নিয়ে বলা হয়েছে, আরেকটু স্ট্রিক্ট ভিউতে যেতে হবে। (করোনা) একটু বেড়েও যাচ্ছে মনে হচ্ছে। সেজন্য আরেকটু প্রি-কশান (সতর্কতা) নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। ডিজাস্টারকে আরেকটু কম্প্রিহেনসিভ প্রেজেন্টেশনের জন্য ক্যাবিনেটে নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে। ঢাকাতে করোনার বিষয়ে সেফটি মেজার্সের বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকাতেও বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল কোর্ট বা ল-এনফোর্সিং এজেন্সি (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) যাতে আরেকটু স্ট্রং (শক্ত অবস্থানে) হয় -সেজন্য বলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এর আগেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় ঘরের বাইরে এবং সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে সরকার। অর্থাৎ মাস্ক ব্যবহারকেই সংক্রমণ মোকাবেলার অন্যতম প্রধান পদক্ষেপ হিসেবে আপাতত বিবেচনা করা হচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানহীন মাস্ক তৈরি করে বাজারে সরবরাহ করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের গাইডলাইন থাকলেও সে অনুযায়ী মাস্ক তৈরি বা আমদানি হচ্ছে কি না সে বিষয়ে নজরদারি নেই। এসব মাস্ক কোনো ধরনের জীবাণু বহন করছে কি না, তা বোঝার উপায় নেই। সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। এ অবস্থায় আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। করোনা প্রতিরোধে সবার সম্মিলিত চেষ্টার বিকল্প নেই।