ফেরান টরেসের হ্যাটট্রিকে জার্মানীকে ৮৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় লজ্জায় ডুবিয়েছে স্পেন। মঙ্গলবার জার্মানীকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে আগামী বছরের নেশন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্পেন। আরেক ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও সুইডেনকে ৪-২ গোলে পরাজিত করেছে আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করা ফ্রান্স। ম্যানচেস্টার সিটি ফরোয়ার্ড টরেস ছিলেন কাল জয়ের নায়ক। টরেস যতটা ভাল খেলেছে ঠিক ততটাই খারাপ খেলেছে পুরো জার্মান দল। এই ফলাফলে জার্মান কোচ জোয়াকিম লোয়ের ভবিষ্যত নিয়ে আরো একবার প্রশ্ন উঠেছে। ইতোমধ্যেই চাপে থাকা লো’কে নিয়ে এখন হয়ত নতুন কিছু চিন্তা করতে বাধ্য হবে জার্মানী। ১৯৩১ সাল অস্ট্রিয়ার কাছে ৬-০ গোলে পরাজিত হয়েছিল জার্মানরা। দীর্ঘদিন পর বড় এই পরাজয়ে লো বলেছেন, ‘আজকের দিনটা আমাদের জন্য সবদিক থেকেই দূভার্গ্যরে ছিল।’ এ-লিগের ৪ নম্বর গ্রুপে স্পেনের থেকে এক পয়েন্ট পিছিয়ে ম্যাচ শুরু করেছিল জার্মানী। গ্রুপ সেরা হিসেবে আগামী বছরের ফাইনাল ফোর নিশ্চিতে স্পেনের সামনে জয়ের বিকল্প ছিলনা। অন্যদিকে জার্মানদের শুধুমাত্র ড্র করলেই চলতো। কিন্তু ১৭ মিনিটে আলভারো মোরাতা স্পেনকে এগিয়ে দেবার পর ৩৩ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন টরেস। তখনই কার্যত জার্মানীর বিদায় ঘন্টা বেজে গিয়েছিল। এর আগে দানি অলমোরের হেড বারে লেগে ফেরত আসে। ম্যানচেস্টার সিটি আরেক তারকা রড্রির হেডে ৩৮ মিনিটে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় স্পেন। যদিও ইনজুরির কারণে প্রথমার্ধেই তাদের হারাতে হয়েছে সার্জিও ক্যানালেস ও অধিনায়ক সার্জিও রামোসকে। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে রামোস ৪৩ মিনিটে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। ৫৫ মিনিটে জার্মান রক্ষনভাগকে আরো একবার ফাঁকি দিয়ে টরেস নিজের দ্বিতীয় গোল করেন। ৭১ মিনিটে ২০ বছর বয়সী ফাবিয়ান রুইজের সহায়তায় হ্যাটট্রিক পূরণ করেন টরেস। ম্যাচ শেষের মিনিটখানেক আগে বদলী খেলোয়াড় মিকেল ওয়ারজাবাল স্পেনের হয়ে ষষ্ঠ গোলটি করলে বড় জয় পায় সাবেক বিশ^ ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। সার্জি গ্যানাব্রি বল বারে লাগালে সান্তনাসূচক গোলও পায়নি জার্মানী। স্প্যানিশ কোচ লুইস এনরিকে বলেছেন, ‘স্প্যানিশ জাতীয় দলের এটি অন্যতম একটি সেরা ও পরিপূর্ণ ম্যাচ ছিল।’ আগামী মার্চে কাতার বিশ^কাপের বাছাইপর্ব শুরু হবার আগে বেশ কিছুদিন নিজেদের আবারো গুছিয়ে নেবার সুযোগ পাচ্ছে জার্মানী। মার্চের বাছাইপর্বের পর জুন-জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে ইউরো ২০২০। গত সপ্তাহে পর্তুগালকে হারিয়ে নেশন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল ফ্রান্স। এবার দ্বিতীয় দল হিসেবে ফাইনাল ফোরে জায়গা করে নিল স্পেন। সুইডেনকে পরাজিত করে এ-লিগের ৩ নম্বর গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে নেশন্স লিগের গ্রুপ পর্ব শেষ করলো বর্তমান বিশ^ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। প্যারিসের স্তাদিও ডি ফ্রান্সের দর্শকশুন্য স্টেডিয়মে অলিভার গিরুদ দুই অর্ধে দিয়েছেন দুই গোল। ম্যাচ শুরুর চার মিনিটে ভিক্টর ক্লাসেন সুইডেনকে এগিয়ে দেন। কিন্তু তাদের এই লিড বেশীক্ষন স্থায়ী হয়নি। ১৬ মিনিটে গিরুদ সমতা ফেরানোর পর ৩৬ মিনিটে বেঞ্জামিন পাভার্ডের গোলে এগিয়ে যায় লেস ব্লুজরা। ৫৯ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পের ক্রসে গিরুদ ব্যবধান ৩-০’তে নিয়ে যান। ৮৮ মিনিটে রবিন কোয়াইসন সুইডেনের হয়ে এক গোল পরিশোধ করলেও ততক্ষনে ফরাসিদের জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। ইনজুরি টাইমের চতুর্থ মিনিটে কিংসলে কোম্যান ফ্রান্সের হয়ে চতুর্থ গোলটি করেন। সম্প্রতি জাতীয় দলের জার্সি গায়ে সাবেক অধিনায়ক মিশেল প্লাতিনির ৪১ গোলের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছেন গিরুদ। সর্বমোট ৪৪ গোল করা গিরুদ এখন থিয়েরি অঁরির সর্বকালের সর্বোচ্চ ৫১ গোলের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবার অপেক্ষায় আছেন। ক্লাব ফুটবলে চেলসির হয়ে নিজেকে ততটা লাইমলাইটে আনতে না পারলেও ফ্রান্সের হয়ে সব সময়ই নিজেকে অন্যতম নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় হিসেবে প্রমান করেছেন ৩৪ বছর বয়সী গিরুদ। এবারের মৌসুমে লিগ কাপের মাত্র একটি ম্যাচে তিনি মূল একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন। ক্রোয়েশিয়ার পিছনে থেকে গ্রুপের শেষ দল হিসেবে নেশন্স লিগের এবারের আসর শেষ করেছে সুইডেন। আগামী মৌসুমে রেলিগেটেড হয়ে তারা দ্বিতীয় টায়ারের বি-লিগে খেলবে। গ্রুপের আরেক ম্যাচে ঘরের মাঠে পর্তুগালের কাছে ৩-২ গোলে পরাজিত হয়েছে ১০জনের ক্রোয়েশিয়া। ম্যানচেস্টার সিটি ডিফেন্ডার রুবেন ডায়াসের ৯০ মিনিটের গোল পর্তুগালের জয় নিশ্চিত হয়। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে দুই গোল করেছেন চেলসি তারকা মাতেও কোভাচিচ। ৫১ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের কারণে মাঠ ত্যাগে বাধ্য হন ক্রোয়েট ফরোয়ার্ড মার্ক রগ।