দেশ থেকে নানা পন্থায় অর্থ পাচার হয়। বিদেশে অর্থপাচারকারীদের তালিকায় একসময় শীর্ষে ছিলেন রাজনীতিবিদরা। তারপর ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রাজনীতিবিদদের টপকে গেছেন। ব্যবসায়ীদের অর্থ পাচারের নানা কৌশলের মধ্যে একটি হলো পণ্য আমদানির নামে বিদেশে টাকা পাঠানো। অর্থাৎ যে পণ্য আমদানির ঘোষণা দেওয়া হয় তা না এনে নি¤œ মানের ও স্বল্প দামের কোনো পণ্য আনা হয়, অনেকক্ষেত্রে কোনো পণ্যই আনা হয় না। এতে দেশের টাকা বিদেশে চলে যায়। এভাবেই এক অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে পোলট্রি ফিডের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির আড়ালে ২২৬ কোটি টাকা পাচারের তথ্য উঠে এসেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, ২০১৭ সালে পোলট্রি ফিডের মূলধনী যন্ত্রপাতি ঘোষণায় দুটি প্রতিষ্ঠান ১২ কনটেইনার যন্ত্রপাতি আমদানি করে। পরে পরীক্ষার জন্য কনটেইনার খোলা হলে দেখা যায় এতে রয়েছে সিগারেট, এলইডি টিভি, ফটোকপিয়ার মেশিন ও বিদেশি মদ। এ দুটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এর আগে একই ঘোষণায় মোট ৭৮ কনটেইনার খালাস নেয়। এ ঘটনার বিস্তারিত অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, একই ঘোষণায় এর আগে ২০১৫ সালের বিভিন্ন সময়ে ২৫ কনটেইনার পশুখাদ্য তৈরির যন্ত্রপাতি আমদানি করে নারায়ণগঞ্জের পাগলার ‘চায়না বিডিএল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করে এ নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাননি। আরও জানা যায়, টাকা পাচারের দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি গঠন করা হয়। ব্যাংক হিসাব থেকে শুরু করে বিনিয়োগ বোর্ডের নিবন্ধন সবই জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
ঘটনাটি উদ্ঘাটনের জন্য শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সাধুবাদ পেতেই পারে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কিছু বলা হয়নি প্রতিবেদনে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ব্যাংক ও কাস্টমসের সহযোগিতা ছাড়া আমদানিকারকের একার পক্ষে টাকা পাচার করা সম্ভব নয়। তাই তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এ ঘটনার অধিকতর তদন্ত হওয়া জরুরি। ধারণা করা হয়, এভাবে আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ার আড়ালে দেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনা ঘটছে অহরহ। বস্তুত মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির নামে এ পর্যন্ত কত টাকা পাচার হয়েছে, তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। তবে প্রতি বছর দেশ থেকে অস্বাভাবিক হারে টাকা পাচারের তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি। টাকা পাচারের একটি বড় কারণ হল দুর্নীতি। দেশে দুর্নীতি বেড়েছে বলেই অর্থ পাচার দিন দিন বাড়ছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সামগ্রিক অর্থনীতি। তাই টাকা পাচার রোধে একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এজন্য দরকার সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ার আড়ালে টাকা পাচার রোধে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে তৎপর হতে হবে এবং অর্থপাচারকারীদের বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।