লোকসানসহ নানা অজুহাতে বন্ধ হলো পাবনা সুগার মিলসসহ (পাসুমি) দেশের ছয়টি সুগার মিলস। মিল বন্ধ নয়, মাড়াই শুরু করার চিঠি আসছে; এমন সংবাদের বিপরতীদে এল মিল বন্ধের চিঠি। এই চিঠিতেই মিলের কয়েকশত শ্রমিক কর্মচারীরা হয়ে পথে বসলো। মিলবন্ধের প্রতিবাদে ও মিল চালুর দাবীতে কয়েক দফা বিক্ষোভ প্রদর্শন ও গেট সভা করেছে শ্রমিক কর্মচারী, আখচাষী পাওনাদাররা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিক কর্মচারী ও আখচাষী পাওনাদাররা মিলগেটস্থ পাবনা-দাশুড়িয়া মহাসড়কে কয়েক দফা অরবোধ সৃষ্টির চেষ্টা করেও পুলিশে বাঁধায় তা পন্ড হয়ে যায়। একই সঙ্গে বন্ধ ঘোষণা করা দেশের ছয় সুগার মিলসের শ্রমিক নেতারা মিল চালুর দাবীতে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ঢাকা চিনি শিল্পভবণে সমাবেত হচ্ছেন বলে শ্রমিক নেতাদের সুত্রে জানা গেছে।
বুধবার সকালে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়াস্থ পাবনা সুগার মিল গেটে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মিলস বন্ধের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন পাবনা সুগার মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফ উদ্দিন আহম্মেদ।
পাসুমির শ্রমিক কর্মচারীরা কান্নাজনিত কন্ঠে জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের সরকার। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মানবতার মা। কিন্তু তাঁর সরকারের আমলেই মিলসগুলো মিথ্যা অজুহাতে বন্ধ ঘোষণা করা হলো। মিলের হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারীদের বেকার বানালো। পরিবার পরিজনদের নিয়ে পথে বসালো। শ্রমিকরা আরো জানান, দেশে চলমান করোনা মহামারিতে এমনিতেই শ্রমিক কর্মচারীরা দীর্ঘ প্রায় ৮/৯ মাস বেতন না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করতে ছিলো। তার উপর আবার একেবারেই মিলস বন্ধ করে দেওয়া হলো। তবে শ্রমিক কর্মচারীরা আশাবাদী হয়ে আরো জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা উন্নয়নের রুপকার শেখ হাসিনা শ্রমিক কর্মচারীদের পরিবার পরিজনের কথা বিবেচনা করে মিলসগুলো পূনরায় চালু নির্দেশ দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের শক্তভাবে জবাব দিবেন বলেও বিশ্বাস করছেন।
পাবনা সুগার মিলস লিঃ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, আখের জমি, চিনি আহরণের হার, মিলের অবস্থা/ উৎপাদন দক্ষতা, লোকসান ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বিবেচনায় পাবনা সুগার মিলস লিঃসহ দেশের ৬টি সুগার মিলসে চলতি মাড়াই মৌসুম আখ মাড়াই বন্ধ রাখার জন্য গতকাল (বুধবার) পাবনা সুগার মিলসে শিল্পমন্ত্রণালয় থেকে চিঠি এসেছে। এরপরই চিঠির আলোকে মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এমডি আরো জানান, দেশের ১৫ টি সুগার মিলস লিঃ বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন প্রদান করা হয়। এর ভিত্তিতে অধিকতর সমস্যা ও লোকসান বিবেচনা করে শিল্পমন্ত্রণালয় পাবনা সুগার মিলসসহ কুষ্টিয়া সুগার মিলস, পঞ্চগড় সুগার মিলস, শ্যামপুর সুগার মিলস, রংপুর সুগার মিলস ও সেতাবগঞ্জ সুগার মিলস লিমিটেড বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছে।
এমডি আরো জানান, মিলের অধিনে আখচাষী পাওনাদার, শ্রমিক কর্মচারীদের বেতনসহ যাবতীয় বকেয়া পাওনা প্রতিশোধসহ মিলের অবস্থার বর্ণনা দিয়ে টিঠির মাধ্যমে কর্পোরেশনকে অবগত করা হয়েছিল।
এমডি চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সনৎ কুমার সাহা জানান, পাবনা সুগার মিলসসহ দেশের ৬টি সুগার মিলস বন্ধের সুপারিশ করে বেশ কিছুদিন আগেই চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন থেকে শিল্পমন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। বুধবার শিল্পমন্ত্রণালয় সেই কর্পোরেশনের সুপারিশকৃত চিঠিতে সম্মতি দিয়েছে। ফলে মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেলো। চেয়ারম্যান আরো জানান, বন্ধ হওয়া মিলের কিছু শ্রমিক কর্মচারীকে চালু থাকা মিলসগুলোতে সমন্বয় করা হবে। একই সঙ্গে মিলগুলোর অধিনে চাষ হওয়া আখ নিকটবর্তি চালু থাকা সুগার মিলে সরবারহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে মিল বন্ধের চিঠি পাসুমিতে আসার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বুধবার সকালে মিলে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারী ও পাওনাদার আখচাষীরা তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে। মিলস গেটে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। মিল চালুর দাবীতে শ্লোগান দেন। রাস্তায় অবরোধ করেন। কিন্তু পুলিশী বাধার কারণে অবরোধ প্রত্যাহার করেন। পরে মিলস গেটে বিক্ষোভ সভা করেন। আখচাষী ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান আলী ওরফে পেঁপে বাদশার সভাপতিত্বে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভায় পাবনা সুগার মিলসের শ্রমিক ও আঞ্চলিক শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন, পাবনা সুগার মিলস শ্রকিম কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শাহিন, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান উজ্জল, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুর রহমান জাহিদসহ বিভিন্ন শ্রমিক নেতারা বক্তব্য রাখেন।
পাবনা সুগার মিলস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল জানান, মিলস বন্ধের প্রতিবাদে এবং মিলস চালুর দাবীতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে বন্ধ ঘোষণা করা ৬ মিলের শ্রমিক নেতাদের ঢাকায় চিনি ও খাদ্য শিল্প ভবনে সমাবেত হবেন। সেখান থেকেই পরবর্তি কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে ২৭ ডিসেম্বর পাবনা সুগার মিলসটি ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামে ৬০ একর জমির উপর স্থাপিত হয়। মিলসটি ১৯৯৭-৯৮ মাড়াই মৌসুমে পরীক্ষামুলকভাবে চালু হয়। পরের বছর থেকেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাড়াই মৌসুম চালু করে। বর্তমানে মিলসটি প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দেনা গ্রস্থ। মিলসটিতে স্থায়ী, অস্থায়ী ও মৌসুমি ভিত্তিক শ্রমিক কর্মচারী সংখ্যা ছিলো প্রায় ১২শত।