নীলফামারী জেলায় শুরু হয়েছে কফি চাষ। আগামী এক মাসের মধ্যে জেলায় অন্তত এক’শ বিঘায় কফি চাষ সম্প্রসারণ করবে কৃষি বিভাগ। তাই কফির নতুন ফসল উৎপাদনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জেলার কফি চাষীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, নীলফামারী জেলার মাটি ও আবহাওয়া কফি চাষের উপযোগী হওয়ায় সমতলে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ করা সম্ভব। তাই মুজিববর্ষ উপলক্ষে আগামী এক মাসের মধ্যে সম্ভাবনাময় এ কফি চাষের পরিধি বাড়ানো হবে। এতে করে লাভবান হবেন এলাকার কৃষক, সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা।
নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রাামের কফি চাষী সুলতান আলী ১ বছরের মাথায় বাগানে কফি হতে শুরু করে। এ বছর কফি গাছে প্রচুর পরিমাণে কফি ধরেছে। কয়েকদিন আগে প্রায় ৫০ কেজি কফি উত্তোলন করি। কিশোরগঞ্জ উপজেলার মুন্সিপাড়া গ্রামে প্রথম কফিচাষি আবদুল কুদ্দুস বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে নার্সারি ব্যবসা করি। ২০০৭ সালের দিকে পত্রিকায় দেখি কক্সবাজারে কফি চাষের খবর। এরপর চারা সংগ্রহের চেষ্টা চালাই। জেলা নার্সারি সমিতির সহসভাপতি হিসেবে ২০০৮ সালে বঙ্গভবনে আমার ডাক পড়ে। সেখানে গিয়ে একটি বই পাই। ওই বইতে ৬৪ জেলার নার্সারি মালিকদের মোবাইল নম্বর পাই। সেখান থেকে নম্বর সংগ্রহ করে কক্সবাজার থেকে ২০০৯ সালে ১৫০টি কফির চারা সংগ্রহ করি। তখন প্রতিটি চারার মূল্য ছিল ২০ টাকা। ওই চারা ৪ শতাংশ জমিতে লাগাই। ৩ বছরের মাথায় ফল আসতে শুরু করে। কিন্তু ওই ফল দিয়ে কী করব, এ নিয়ে চিন্তায় পড়ি। এরপর বাড়িতে কফি ফল গুঁড়া করি। কিন্তু কফির স্বাদ আসে না। অনেক ভেবে চিন্তে একদিন কড়াইতে ভেজে গুঁড়া করে দেখলাম, কফির স্বাদ ও সুগন্ধ দুটোই এসেছে। এরপর স্বল্প পরিসরে এলাকায় বিক্রি করতে শুরু করি। শেষে আমি কফি উৎপাদনে সফল হই। কফি বাগান বাদ দিয়ে বর্তমানে কফির চারা বিক্রিতে বেশি নজর দিয়েছি। আমার বাগানের চারা দেশের ৬৪ জেলায় যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে এক ফুট সমান কফির চারা একশ টাকা হারে বিক্রি করছি। সে অনুযায়ী ৫ ফুট কফি চারার দাম পাঁচশ এবং ১০ ফুট হলে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। বর্তমানে চারা বিক্রি করে বেশি লাভবান হচ্ছি। জেলায় কফি চাষীদের সন্ধানে বের হয়ে আসে একজন নারী উদ্যোক্তা। জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের সুনগর গ্রামের মোছাম্মদ খাদিজা আক্তার ২০১৯ সালে ৪০ শতাংশ জমিতে কফির বাগান করেছেন। ওই বাগানে এখন ফল আসতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, আমার বড় ছেলে নর্দান ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় ইউটিউবে দেখে আমাকে কফি চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে। এখন সে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং বিভাগে চাকরি করছে। এ কারণে কফি বাজারজাতকরণে অসুবিধা হবে না বলে সে জানিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কফি অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে দাম বেশি। ফলন দেখে বোঝা যায়, এটি অনেক লাভজনক হবে। তিনি বলেন, আমি আগামী বছরে আরও পাঁচ’শ চারা লাগাব। এর আগে তিনি প্রতিটি চারা ২শ টাকা হিসেবে ৮শ চারা সংগ্রহ করেছিলেন। যার মধ্যে ৫শ ৮৬টি গাছ টিকে আছে। এগুলোর মধ্যে ২শ ৪৬টি গাছে ফল এসেছে। ফলনও ভালোই হয়েছে। কৃষি বিভাগের লোকজন প্রতিনিয়ত এসে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে ওই ফল সংগ্রহ কীভাবে হবে, সেটি জানার চেষ্টা করছি। এলাকার অন্যান্য কফিচাষিরা বলছেন, সাধারণত পতিত জমিতে কফি চাষ বাড়ানো গেলে অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে লাভ বেশি। এদিকে কৃষি বিভাগের অভিমত, পানি নিষ্কাশনযুক্ত যেকোন উঁচু জমিতে কফি চাষ করা সম্ভব। দেশে বর্তমানে রোবাস্টা ও অ্যারাবিকা, দুই জাতের কফি চাষ হচ্ছে। তবে এ জেলায় রোবাস্টা জাতের কফির ফলন বেশি। তাই বাণিজ্যিকভাবে ওই জাত আবাদের পরিকল্পনা কৃষি বিভাগের। এ ছাড়া কফির ফুল থেকে উন্নত মানের মধু আহরণ করা সম্ভব এবং এ জমিতে মিশ্র ফসল আবাদ করা সম্ভব। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, কফি সাধারণত পাহাড়ি ফসল। উঁচু এবং যেখানে পানি জমে না থাকে, এমন সমতল জমিতে কফি চাষ যাবে। নীলফামারীর মাটি বেলে-দোঁআশ হওয়ায় এ মাটি কফি চাষের উপযোগী। নীলফামারীতে ৩জন কৃষক ইতোমধ্যে ৫২ শতাংশ জমিতে অ্যারাবিয়ান জাতের কফি চাষ করেছেন। তাঁদের গাছে ফলও ভালো এসেছে।
তিনি আরো বলেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে এ জেলায় আগামী ১ মাসের মধ্যে আমরা এক’শ বিঘা জমিতে রোবাস্টা জাতের কফি চাষের পরিকল্পনা করেছি। এর ফলন বেশি পাওয়া যায়। আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছি। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ তাঁদের বিনা মূল্যে চারা সরবরাহ করবে।