প্রতিদিন সকাল সকাল রোদের দেখা মিললেও বিকেল হতে না হতেই শুরু হচ্ছে শীতের আমেজ। উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে দিন দিন বাড়ছে শীতের তীব্রতা বেড়োই চলেছে। হেমন্তের মাঝামাঝি সময়ে এসে সন্ধ্যা নামলেই জেলার মানুষকে ঠান্ডায় কাবু করছে উত্তরের হিমেল বাতাস। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত হালকা কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে চারদিক। কিন্তু গত দইদিনে ঘন কুয়াশার চাদরে একেবারে ঢাকা পড়ে গেছে। এতে আট নয়টার মধ্যেই প্রায় ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে শহরসহ জেলার অন্য বাজারগুলো।
শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর ) সকাল নয়টায় লালমনিরহাটে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। লালমনিরহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, গত ২০ দিন ধরে লালমনিরহাটে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে।
এদিকে গত ৭ থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ১৬ দিন সারা দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা বিরাজ করেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। এর মধ্যে ২৩ নভেম্বর নওগাঁর বদলগাছিতে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলেও ওই দিন তেঁতুলিয়ার সর্বনি¤œ তাপমাত্রাও রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) লালমনিরহাটে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ডিগ্রী সেলসিয়াস।
রাতে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে কুয়াশা বেশি দেখা যাচ্ছে। রাতের হিম বাতাসে কাবু হয়ে লেপ-কাঁথা জড়িয়ে ঘুমাতে হচ্ছে এই উত্তর জনপদের মানুষকে। সন্ধ্যার ঠান্ডা বাতাসে কাবু হয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই ঘরে ফিরছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে দিনে রোদ আর রাতে শীতের কারণে কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন সর্দি-কাশিসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা এ ধরনের সমস্যায় বেশি পড়ছেন বলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
লালমনিরহাট জেলা শহরের ভ্যান চালক মো. বজলার রহমান বুদু বলেন, ‘আমরা দিনে যখন ভ্যান নিয়ে বের হই, তখন পাতলা কাপড়চোপড় পরেই বের হই। তবে গত দুইদিন ধরে সন্ধ্যা হতে না হতেই ঠান্ডা বাতাসে হাত-পা জড়ো হয়ে আসছে। রাতে বেশিক্ষণ ভ্যান চালানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া ঠান্ডা বেশি লাগায় রাতে যাত্রীরাও ভ্যানে চড়তে চায় না, তাই যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে কম।
অপরদিকে শীতের তীব্রতা বাড়লেও শহরের পিঠার দোকান গুলোতে কিন্তু উপছে পড়া ভির লক্ষ্য করা গেছে। এমনিতে এই পিঠার দোকান গুলো সন্ধ্যার আগে খুললেও শীতের কারণে সকাল থেকেই এসব দোকানে বেচা কেনা চলছে। তাই পিঠার দোকানদানিদের ব্যবসা ভাল হওয়ায় তারা খুবই খুশি।
লালমনিরহাটের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের উত্তরাঞ্চলে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এই অঞ্চলটি হিমালয়ের খুব কাছাকাছি হওয়ায় উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হিমেল বাতাস সরাসরি এখানে আসছে। সাইপ্রাস থেকে আসা ঠান্ডা বাতাস হিমালয়ে ধাক্কা খেয়ে এই এলাকায় আসায় এখানে তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে।
আরও জানাযায়, এই হিমেল বাতাস দিনের বেলায়ও থাকছে, তবে দিনে সূর্যের তাপ থাকায় তা অনুভূত হচ্ছে না। রাত গভীর হলেই তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।
এদিকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ঠা-াজনিত রোগের কারণে শিশু-বৃদ্ধসহ অসংখ্যরোগী লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে এক শিশুকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসা সদর উপজেলার কুলাঘাট গ্রামের শ্রী রমেশ ডাউয়াই বলেন, প্রচ- শীতের কারণে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে মেঝেতে থেকেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা.ইফাত মিলি জানান, কয়েকদিনের ঠান্ডা গরম আর গত দুইদিনের তীব্র শীতে ঠা-াজনিত কারণে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তবে সদর হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাদেরকে যথাযথ চিকৎসা দেয়া হচ্ছে।