রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অস্টিনের মতে Law is the Command of Soverign অর্থাৎ আইন সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আইন না মানার মধ্যে রয়েছে নিয়ম ভাঙ্গার সংস্কৃতি। আইন অমান্য ও আইন না মানার কৃষ্ণ সময়কে আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগের সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। সভ্যতার যুগে নিয়ম ও আইন ভাঙ্গার প্রবণতাকে কেহ মেনে নিতে পারে না। আজ অনেক সরকারি, বেসরকারি অফিস, পরিদপ্তর, অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের তোলপাড় চলছে। তারপরও কিছু অফিস, অধিদপ্তর, পরিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে যে নিয়মনীতি একেবারে নেই তাও বলা যাবে না। যাকে বলা হয় সমুদ্রের দূষিত পানির মধ্যে সামান্য দুধের ছিটা। তবে খারাপ, মন্দ ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না এ শ্রেণীটার কাছে এ দৃশ্যমান, অদতব্য বলাই সমীচিন। এ শ্রেণীটা অহরহ নিয়ম-নীতি ভেঙ্গেই চলছে। তাই বলা চলে নিয়ম ভাঙ্গার সংস্কৃতি আজ মাথার ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। যা দেখে মনে হয় এ শ্রেণীটাই রক্ষক ও ভক্ষক। দেশে যে লাগামহীন অসদোপায়, বেলাল্লাপনা ও দুর্নীতি চলছে এর পেছনেও কারণ একটাই। তা হচ্ছে নিয়ম ভাঙ্গার সংস্কৃতি এবং চুরি আরও সিনাজুরি। এ শ্রেণীটা দিনকে রাত এবং রাতকে দিন মনে করে থাকে। যে ভাগম্বরীতা, অনিয়ম, উপমা ও নিয়ম ভাঙ্গার উদাহরণের যেন শেষ নেই। যাকে সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আপ্রান চেষ্টা করেও ওদেরকে আয়ত্বে আনার ব্যাপারে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ওরা ব্যাংক, বীমা, বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের টাকা মেরে মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে বেগমপাড়া তৈরী করে আরাম আয়াশে দিন অতিবাহিত করছে।
কোনো কারণে কর্মপরিসরে অনেকের কাছে গেলে দেখা যায় ওদের দাপট, দৌরাত্ম, বেরসিকতা, তোকাব্বরি ও ক্ষমতার বাহাদুরী। ওরা হরহামেশা মানুষকে তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য করতে আদৌ দ্বিধা সংকোচ ও কুন্ঠাবোধ করেনি। ২৫/১১/২০২০ ইং বৃহস্পতিবার শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল মূল অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে ১১৬, ১১৭ ও ১১৮তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারী যারা রয়েছেন, তারা মানুষকে অবহেলার চোখে দেখবেন না বা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবেন না। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখবেন এবং যথাযথ সম্মান করবেন।
১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষনের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছিলেন, আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় দেশের গরীব কৃষক, আপনার মাইনে দেয় ওই গরীব শ্রমিক, আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ইজ্জত করে কথা বলুন, ওরাই দেশের মালিক। আজ দৃশ্যপটে এসব কিছু কথা তাৎপর্য ও গ্রহণযোগ্যতা সীতার বনবাসের মতো নির্বাসন হতে চলছে। এসব যেন অনেকেই তোয়াক্কাই করছে না এমনকি আমলেই নিচ্ছে না। এসব কিছু শুদ্ধাচারের কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেকেই কমবেশী অপদস্ত হতেও শুনা যায়, তাদের কাছ থেকে। যে উপমা, উদাহরণ ও বলারও যেন শেষ নেই। অনেকেই এ যাতনা সহ্য করতে না পেরে নিরবে অশ্রু সংবরণ করে থাকে।
কিছু দিন হল জনৈক শিক্ষাবিদের নাম উল্লেখ করে কম্পিউটারে লেখা একটি লিফলেট হস্তগত হয়। লিফলেটটির শিরোনাম ছিল “কিশোরগঞ্জ পাগলা মসজিদ ফান্ডের কোটি কোটি টাকার অপ্রাসঙ্গিক ব্যয় বন্ধ করুন”। জানা যায়, ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান বাক্সটি প্রায় ৩ মাস অন্তর অন্তর খোলা হয়ে থাকে। অনেক সময় দানবাক্সে টাকা, ডলার, সোনা, রূপা ইত্যাদি ৩ কোটি এবং অনেক সময় এর বেশীও পাওয়া যায়। পাগলা মসজিদ ফান্ডের এই টাকা কিশোরগঞ্জ জেলার অবহেলিত মসজিদ সমূহের উন্নয়নে ব্যয় করার কথা। কিন্তু দেখা যায়, এই টাকা শুধু অবহেলিত মসজিদে ব্যয় না করে বিভিন্ন সময়ে নরসুন্দা নদী পরিস্কারসহ নানা অসংগতিপূর্ণ খাতেও নাকি অনিয়মভাবে ব্যয় করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি জেলা শহরে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে পাগলা মসজিদের বিপুল পরিমান টাকা ব্যয় বরাদ্দ দেয়া, ইসলামী শরীয়াহ, ওয়াক্ফ এস্টেট, রাষ্ট্রীয় আইন ও নিয়ম পরিপন্থী কাজ বলেও উল্লেখ করা হয়। জনৈক শিক্ষাবিদ লিফলেটটিতে আরও বলেছেন, পাগলা মসজিদ কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের কারণে জনগণের প্রদত্ত অর্থের অপব্যবহার হলে জনগণ পাগলা মসজিদে দান করার আগ্রহ ও আস্থা হারাবে বলেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে। পরিশেষে বলা হয়, ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদের অবান্তর, অসঙ্গত, অপ্রাসঙ্গিক খাতেও অনিয়মভাবে ব্যয়কৃত অর্থের পুুনরোদ্ধার নিশ্চিত করে ভবিষ্যতে জেনে, শুনে ও বুঝে পাগলা মসজিদের অর্থ ব্যয় করার অনুরোধ জানানো হয়। পাগলা মসজিদের দানকৃত অর্থ যাতে শরীয়াহ আইন মোতাবেক ব্যয় করা হয় জনৈক শিক্ষাবিদের এ আহবানকে একেবারে উড়িয়ে না দেয়ারই কথা। তারপরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এ ব্যাপারে সর্বজন গ্রহণযোগ্য ও বাস্তব সম্মত উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে তবে হয়তো জনৈক শিক্ষাবিদের আহবান ও প্রত্যাশা কাজে আসতে পারে। তদোপরি আইন ও নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠা কল্পে কঠোর নির্দেশনা ও নজরদারি বহাল থাকে তবে এ নিয়ে প্রশ্ন না উঠারই কথা। আর যদি এর ব্যত্যয় ঘটে এবং কেহ যদি নিয়ম ভাঙ্গার সংস্কৃতি আর কতকাল বলে মন্তব্য করে থাকে তবে হয়তো কিছু না বলারই কথা।
নিয়ম ও আইন ভাঙ্গার সংস্কৃতি অনেক পুরাতন। এসব থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বাগ্নে দরকার এদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তা না হলে নিয়ম ও আইন ভাঙ্গার দজ্জাল, চন্ডাল ও অপরিনামদর্শীদের কাছ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া কারও পক্ষেই সম্ভবপর নহে। নিয়মনীতি ও আইন ভাঙ্গার পক্ষেও রয়েছে স্বার্থসিদ্ধির সিন্ডিকেট। ওরা যুগের পর যুগ নিয়ম ও আইন ভাঙ্গার সংস্কৃতি লালন পালন ধারণ ও তোয়াক্কা না করে সব অর্জনকে ধুলিসাৎ করে দিতে কুন্ঠাবোধ করছে না। এই বেঁহুশদের সম্পর্কে বলতে হয় মানুষকে অবহেলার চোখে দেখবেন না। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখবেন, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন না। দেশের কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের ঘামের অর্থে আপনাদের বেতন হয়, অফিসে এসি ও চলাফেরায় আলীশান পাজারো ও লিমোজিন চলে।
আজ অফিস আদালতে যেখানেই যাওয়া যায় বড় সাইনবোর্ডে লিখা থাকে মাস্ক ব্যবহার করবেন। মাস্ক ব্যবহার না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায় সেই অফিসের বরকন্দাজদের মধ্যে অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করেন না। এক সময় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ব্যাপারে রাত ৮টা থেকে হাট বাজার, বিপনি বিতান বন্ধ করে দেয়া হলেও অনেকের বাসার চত্তরে দেখা গেছে শত শত বাতির আলোর মহড়া। সরকার অফিস সময়ের পর অনেক সরকারি অফিসের গাড়ী চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও চলাফেরার সময় দেখা যায় বিপনী বিতানগুলোতে সরকারি গাড়ীর লাইন যেন শেষ হয়নি। সরকারি ডাক্তারদের অফিস সময়ে ক্লিনিকবাজি বন্ধের ঘোষনা দিলেও অহরহ ক্লিনিকগুলোতে সরকারি ডাক্তারদের ভীড় লক্ষ্য করা গেলেও অনেকেই যথাসময়ে সরকারি হাসপাতালে গিয়েও সেবা পায় না। এসব এখন মামুলি ও অদতব্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঔষধ, তেল, সাবান, চিনিসহ অনেক নিত্যপণ্যের গায়ে দাম বাড়িয়ে পণ্যের গায়ে নতুন দাম সংযোজন করা হয়ে থাকে। এসব দেখে মনে হয়, তদারকির বুঝি কেহ নেই। বাস্তবে এসব পণ্যে দাম নির্ধারণে রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ঔষধের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে ঔষধ প্রশাসন বা Drug Adminsitration । ক্যানসারের ঔষধ, হার্টের রিং ও ডায়াবেটিসের ইনসুলিন নিয়েও রয়েছে ভেজাল ও অনিয়মভাবে দাম বাড়ানোর রমরমা ব্যবসা। লাক্স সাবানের দাম ৬ মাসে ২ বার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এসব ব্যাপারে প্রতিবাদ করারও সুযোগ থাকে না। সাধারণ বিক্রেতারা বলে থাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দাম বাড়িয়েছে তাতে আমাদের করার কিছুই নেই।
ঢাকার ৭ আসনের এমপি হাজী সেলিমের পুত্র সম্প্রতি অপকর্মের কারণে পুলিশ ও র্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর সেলিমের বিভিন্ন অবৈধ সম্পদ ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। প্রশ্ন থেকে যায় হাজী সেলিমের এ ধরণের অবৈধ সম্পদ স্থাপনা অনেক আগেই কুক্ষিগত করে থাকলেও এ পর্যন্ত কোনো সংস্থা তা উচ্ছেদ করেনি। এই নিয়ম ও আইন ভাঙ্গার সংস্কৃতি হাজী সেলিমকে বেআইনী কাজে অনেকেই উৎসাহ ও সহযোগিতা না থাকার কথা নয়। তা না হলে যাদের নখদর্পনে এ কাজগুলো করা হয়েছে তারাও এই অবৈধ কাজে জড়িত। হাজী সেলিমের চেয়ে এ সমস্ত অনুপ্রেরণাকারী সহযোগীরা কম দোষী নহে।
কিছুদিন আগে পুলিশের সিনিয়র এ.এস.পি আনিসুলকে মাইন্ড এইড মাদকাসক্ত ও মানসিক নিরাময় হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও বেদম মারপিট করার ফলে তাঁর মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময় মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছে দেশের আনাচে কানাচে এ ধরণের শত শত মাদকাসক্ত ও মানসিক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। যাদের কোনো বৈধ লাইসেন্স বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো ধরণের অনুমতি নেই। এতে প্রশ্ন জাগে এএসপি আনিসুলের মৃত্যুর পূর্বে এই লোকগুলো কোথায় ছিল। তাদের কি এ ব্যাপারে জানার প্রয়োজন ছিল না। যা নিয়মনীতি ও আইন ভঙ্গের সংস্কৃতিতে পরিপূর্ণ।
কুড়িগ্রামের সাংবাদিক ডিসির বিরুদ্ধে সংবাদ লেখার কারণে বিনা অজুহাতে ঘুম থেকে তুলে মোবাইল কোর্টে অহেতুক সাজা দিয়ে রাতে জেলে পাঠানো হয়। কুড়িগ্রামের এনডিসি সদর্পে ঘোষণা করে তুই ডিসির বিরুদ্ধে লিখিছ, আজ তোকে ক্রসফায়ারে দিব। এ ধরণের অনিয়ম কারও সহ্য করার কথা নয়। এমনিভাবে অহরহ মিথ্যা ঘটনা ও ক্ষমতার জোরে কত যে নিয়ম ও আইন ভাঙ্গার ঘটনা ঘটছে এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া হচ্ছে এমন নির্মম ও লোমহর্ষক ঘটনার যেন শেষ নেই। এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে নির্যাতিত সাংবাদিক জেল থেকে মুক্তি পায়।
সপ্তম শ্রেণীতে Rapid Reader এ পড়া একটি গল্প আজও মনে পড়ে। একবার রাজা নিজের পালিত গাভীর দুধ খেয়ে তার উজিরকে বলল, দুধ খেয়ে দুধের স্বাদ পাচ্ছি না। দুধে পানি লাগে। তাতে উজির বলল, জাহাপনা আপনার জিহবায় পানি রোগ আছে। জিহবা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তার কোনো পানি রোগ পেল না। ডাক্তার বলল, আপনার দুধ পরীক্ষা করুন। পরে পরীক্ষা করে দেখা গেল দুধে কোনো পানি নাই। অবশেষে জানা গেল, দুধ দহনের সময় প্রতিদিন রাজার উজির, নাজির এখান থেকে দুধ নিয়ে যায় এবং রাজার দেয়া দুধে সমপরিমান পানি মিশিয়ে রাখে। এ কথা রাজার কানে গেলে রাজা তাতে ভীষণ ক্ষেপে যায়। রাজা উজির ও নাজিরকে শাস্তি দেয়ার নির্দেশ দিলে ওরা দুজনেই রাজার পায়ে লুটিয়ে পড়ে। ওরা বলতে থাকে, শুধু আমরা দুজনেই জড়িত না। আপনার অধীনস্থ আরও অনেকেই আছে যাদের নাম আপনার কাছে আসে নাই। এই কথা শুনার পর রাজা রাগে আরও ক্ষিপ্ত হয় এবং রাজার গাভীর দুধ খাওয়ার সাথে জড়িত সবাইকে রাজমহল থেকে বের করে দেয়। এমন ঘটনা আজ অহরহ ঘটছে বলেই নিয়ম ও আইন ভঙ্গের সংস্কৃতি দিন দিন বেড়েই চলছে। দরকার নিয়ম ও আইন ভাঙ্গাদের বিরুদ্ধে সময়োচিত ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ।
যেভাবে দিনের পর দিন নিয়ম ও আইন ভাঙ্গার সংস্কৃতি দাবানল ও সোনামির মতো চলছে, অনেকেরই অভিমত এভাবে চললে এ প্রবণতাকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। এখনই নিয়ম ও আইন ভাঙ্গার সংস্কৃতিকে দৃঢ়ভাবে দমন করতে হবে। তা না হলে রাজার গাভীর দুধ খেয়ে উজির যেমন রাজার জিহবার পানি রোগের কথা বলেছে এমনিভাবে নিজেকে বাঁচানোর জন্য যদি কেহ জিহবায় কাহারও পানি রোগের কথা বলে তবে হয়তো বলারও কিছু থাকবে না।
পরিশেষে উপসংহারে বলব, ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ফান্ড নিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ লিফলেট ছেড়ে মানুষকে যেভাবে সচেতন করেছেন তা একটি দায়িত্বপূর্ণ কাজ। তারপরও অনেকেরই জানতে ইচ্ছে হয়, এই মসজিদের ফান্ড আরও যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে দেয়া হয়েছে সবগুলো প্রতিষ্ঠান কি এলাকার না তহবিলের টাকা কোনোক্রমে দেশের অন্যান্য স্থানেও গিয়েছে। নিয়ম ও আইন ভাঙ্গার সংস্কৃতি কারও জন্যেই ভালো না। নিয়ম ও আইনের প্রতি সম্মান সব কিছুকে সামনে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যায়। আর বড় বড় কথা ও তোকাব্বরী সমাজের কারও জন্য ভালো না। নিয়ম ও আইন ভাঙ্গার সংস্কৃতি থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল।
দুনিয়ার যত দেশ অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির দিকে ধাবিত হচ্ছে এসব দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও জীবন ধারা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তাদের এত উন্নতি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও প্রসারতার পেছনে তাদের নিয়ম ও আইন মানার সংস্কৃতিই তাদেরকে এত শীর্ষে নিয়ে গেছে। আমরা যা বলি তা করি না এবং যা করি তা বলি না বলেই আমাদের মাঝে এত কুটিলতা ও অপসংস্কৃতি দিনের পর দিন বাসা বেঁধেছে। এসব কিছুর পরিত্রানই জনপ্রত্যাশা।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট