নওগাঁর পত্নীতলাসহ আশেপাশের এলাকায় গত কয়েকদিন ধরেই ঘন কুয়াশা দৃশ্যমান হচ্ছে। তবে সোমবার সকালে এই ঘন কুয়াশা যেন কুয়াশা বৃষ্টিতে রুপ নেয়। ঘন কুয়াশার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। হঠাৎ শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকায় চরম বেকায়দায় পড়ে যায় অতি দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ। শীত নিবারণের পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় তাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এদিকে এলাকায় শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় শীতবস্ত্রসহ শীত নিবারণ সংশ্লিষ্ট জিনিসের বাজার দর বেড়ে গেছে। প্রান্তিক মানুষদের ফুটপাতের দোকানে ভিড় করতে দেখা গেছে। সোমবার দিনভর সূর্যের দেখা না মেলায় শীতের তীব্রতা বিষয়ে মানুষের মনে শংকার দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে সোমবার সকালে উপজেলার নজিপুর ইউনিয়নের ফহিমপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পল্লীতে গিয়ে দেখা গেছে শীতের উপযুক্ত পোষাক ছাড়াই শিশুরা খালি পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পল্লীর নারীরা চুলায় আগুন জ্বালিয়ে গা গরম করে শীত থেকে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করছেন। পল্লীর পুরুষ ও শিশুরা খড় দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করছেন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রবীণ নারীরা গায়ে পাতলা কাপড় জড়িয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছেন। সত্তর বয়সী নারী চিমতি কর্মকার জানান, তাঁর নিজের থাকার জায়গা নেই, বোনের বাড়িতে আশ্রিতা, শীত নিবারণের জন্য গায়ে দেওয়ার মতো মোটা কোন কম্বল বা লেপের ব্যবস্থা নেই। সরেজমিনে চিমতির বোন শান্তি কর্মকারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে এই বৃদ্ধ নারী রাতে পাতলা ১টি কম্বল গায়ে জড়িয়ে মাটিতে রাত কাটান। শুধু চিমতি নয় পল্লীর কয়েকটি বাড়ি ঘুরে প্রবীণদের শীত নিবারণের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে পল্লীর বাসিন্দা কৃষ্ণ কর্মকার জানান, আমরা প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করায় সরকারের তেমন একটি সুযোগ-সুবিধা পাই না। ভোটের সময় আর নিজেদের একান্ত প্রয়োজন ছাড়া চেয়ারম্যান আর মেম্বাররা আমাদের পল্লীতে আসেন না। একই গ্রামে মেম্বারের বাড়ি হলেও তিনি আমাদের এখানে আসেন না। বিনা রাজোয়ার বলেন, করোনা সংকটের সময় আমরা কোন সহায়তা পাইনি। এখন আবার শীতে আমরা দূর্ভোগে পড়েছি। করোনার থেকে শীতের সংকট আমাদের কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে আদিবাসীদের নিয়ে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন বরেন্দ্রভূমি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (বিএসডিও)’র নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুর রউফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বরাবরের মতোই এবারও দাতা সংস্থা ও বন্ধু সংগঠনের কাছে শীতবস্ত্রের জন্য আবেদন করা হবে। বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিতরণ করা হবে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আইজুল বলেন তিনি ২০টি কম্বল পেয়েছিলেন যা ইতোমধ্যে বিতরণ করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিটন সরকার বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিটি ইউনিয়নে ৪শত পিছ করে কম্বল বরাদ্দ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো কম্বল বিতরণ করা হবে।