দেশ স¦াধীন হওয়ার দু‘দিন পর পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি ১৮ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হলেও এ এলাকার বধ্যভ’মিগুলো রয়েছে অরক্ষিত। স্বরুপকাঠিতে ৭১‘র ২৬ মে থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাক হানাদার বাহিনীসহ দেশীয় দোসর আলবদর, আলশামস্, রাজাকার ও পিস কমিটির বরর্বরতায় গণহত্যার বধ্যভ’মিগুলোর অধিকাংশই চিহ্নিত হয়নি। সরকারি তালিকা সোহাগদলের সাত ব্যক্তির এক কবর, বরছাকাঠি, শেখ পাড়া ও কুড়িয়ানা এ ৪টি বধ্যভ’মি চিহ্নিত করা হলেও তা অধিকাংশই রয়েছে অরক্ষিত। এ উপজেলায় প্রায় ৪২টি এলাকার নৌ ও সড়ক পথের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধ হয়। পাকহানাদারদের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ হাজার হাজার নিরহ মানুষকে হত্যা করা হয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিভীষিকার অত্যচার, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া এবং ইদিলকাঠিসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় কয়েক শত নিরহ মানুষকে হত্যা করে খালে ভাসিয়ে দেয় এবং ইদিলকাঠি খালের পাড়ে একটি লাশের স্তুপ মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয় যা এখনো অরক্ষিত। এভাবে একাধিক এলাকায় হত্যাযষ্ণ চালায় পাক হানাদার বাহিনী। এসব লাশগুলো দাপনের কাপড় ছাড়াই মাটি চাপা দিয়ে রাখলেও বধ্যভ’মির আওতা আসেনি। আবার কোনো কোনো এলাকায় এক দড়িতে বেধে গুলিকরে হত্যার পর নিরহ মানুষের লাশগুলো নদী, খাল-বিল, ডোবা- নালায় ফেলে দেওয়ায় এসব লাশের সন্ধান ৪৯ বছরেও পায়নি শহীদ পরিবারগুলো। আবার অনেক শহীদের লাশ অজানতে চাপা পড়ে আছে সড়ক ও পাকা ভবনের নীচে। যা চিহ্নিত করা বড়ই কঠিন। পাকসেনারা ১০ নভেম্ভর বরছাকাঠিতে ২৬ জনকে একই দড়িতে বেধে গুলির পর ৫ জন বেছে গেলে ২১জনের লাশ, এক দিন পরে সাত জনকে গোসল কাপড় ছাড়াই এক গর্তে মাটি চাপা দেয়া হয়, যা সাত ব্যক্তির এক কবর নামে তালিকাভুক্ত। কুড়িয়ানা বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় আড়াই শত মানুষকে ধরে এনে গুলি করে হত্যার পর বাজারে সংলগ্ন দু‘টি ডোবায় ফেলে রাখালে গ্রামবাসী ২দুই পর কোনো রকম মাটি চাপা দেয় যা বধ্যভ’মি হিসেবে তালিকা ভ’ক্ত হলেও জমির মালিকের গাফিলতির কারণে অরক্ষিত। আটঘর কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগান ছিল স্বরুপকাঠির মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও বিভিন্ এলাকাবাসীর নিরাপথ আশ্রায় স্থান। পাকসেনা এটি জানতে পেরে পেয়ারা বাগানে টানা ২১দিন আক্রামন করে ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। তবে বাগানে আশ্রায় নেয়া নিরহ মানুষ কত জন মারা গেছে তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি এবং বাগানে কোনো বধ্যভ’মিও নেই। সূত্র তথ্যে,সন্ধ্যা নদী থেকে ভেসে যাওয়া লাশগুলোর মধ্যে কীনারে পড়ে থাকা মরাদেহগুলো শকুন-কুকুর-শিয়াল ছিড়ে-ছিড়ে খাছছিল সেদিন এ দৃশ্যই যেন-মানুষ কর্তৃক মানুষ হত্যার পর যে হোলি খেলার মাছির উল্লাস, তা ৭১’র পাকহানাদার ও দেশীয় দোসরদের হত্যাযষ্ণ বর্হিপ্রকাশ।।
নভেম্ভর বরছাকাঠিতে ২৬ জনকে একই দড়ি বেধে গুলিকরে ২১ জন মারা হত্যা করে। তার মধ্যে সাত জনকে প্রামবাসী গোসল দাপনের কাপড় ছাড়াই একটি গর্তে মাটি চাপা দেয় যা সাত ব্যক্তির এক কবর নামে সরকারি তালিকা ভুক্ত। কাছারিউলায় যে খানে ২৬ একই দড়িতে বেধে গুলিকরে পাকসেনারা সেই স্মৃতিস্তুম্ভ। ইধিলকাঠির যে খালে পাকহানাদার বাহিনী গানবোর্ডে নিরহ মানুষকে হত্যা ফেলে দিত এবং আটঘর কুড়িয়নায় যে কাঁচা সড়কে লাইন দিয়ে মানুষ হত্যা করা হত। যে সড়কের মরাদেহের উপর দিয়ে চলছে গাড়ি। সথিন্দ্রনাথ কুড়িয়ানার তালিকা ভুক্ত বধ্যভুমিটি সংরক্ষিত করার জন্য দাবি জানালেন
(৩) শেখপাড়া স্কুল মাঠে মুক্তিযোদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়ার পর ৬ জন উচ্চ প্রশিক্ষণের জন্য ভারত যান। পথে এ জনকে পাকসেনা হত্য করে। সরকারি তালিকাবুক্ত তাদের স্মৃতিস্তুম্ভ। ৯ নং সেক্টর মুক্তিযোদ্ধের সাব-কমান্ডার মাহাফুজ্জামান আলী বেগ বলেন, পেয়ারা বাগানেই প্রশিক্ষণ দিতেন মুক্তিবাহিনীকে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পদমর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, আরো একটি বধ্যভ’মির নাম তালিকাভ’ক্ত করা হয়েছে গেজেট আসলেই এটি জন্য বরদ্দর জন্য আবেদন করা হবে।
স্বরুপকাঠিতে এখনো ৬টি বধ্যভ’মি তালিকা ভুক্ত হয়নি। বরছাকাঠি ও কাছারিউলায় ২টি, ইদিল কাঠি ১টি, মাহামুদকাঠি ১টি, অলেংকার কাঠি ১টি ও জলাবাড়ি ১টি এ মোট ৬টি সরকারি তালিকা ভুক্ত না অপূর্ণতা রয়েছে বধ্যভ’মির তালিকা। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরনে স্বরুপকাঠিতে বেশ কিছু স্মরক স্মৃতিস্তুম্ভ নির্মিত হয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বধ্যভ’মির অধিকাংশই তালিকাভুক্তর আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু স্বরুপকাঠিতে অধিকাংশই বধ্যভ’মি গেজেট তালিকাভুক্তর আওতায় না আসায় স্থানীদের অভিযোগ। যে সব বধ্যভ’মি এখন তালিকা ভূক্ত হয় নায় সে গুলোর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অধিনে যাচাই-বাচাইয়ের মাধ্যমে তালিকাভ’ক্ত করার দাবি জানিয়েছেন একাবাসী।