বাংলাদেশের যে কয়টি সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানের ঘটনা ঘটে তার মধ্যে একটি হচ্ছে রাজশাহীর চর খানপুর। বাংলাদেশ-ভারতের এ সীমান্ত হচ্ছে নদী পথ। পদ্মা নদীর মাঝখানের এ সীমান্তের বালুচর দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ ও হুন্ডির টাকা ছাড়াও কাপড়-প্রসাধনী সামগ্রী এবং মরণ নেশা খ্যাত ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ পণ্য চোরাচালান হয়ে থাকে। প্রশাসনের টহল পার্টির অভিযানের মাধ্যমে এ সীমান্তে চোরাচালানের বিভিন্ন পণ্য জব্দ হয়। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাজশাহীর সদস্য কতৃক চোরাচালানের বিভিন্ন পণ্য জব্দ হলেও জব্দকৃত পণ্যের চোরাকারবারিরা সবসময়ই থাকেন অধরা। যে কারণে চোরাচালানের ঘটনায় মামলা হলেও বেশিরভাগ সময় আসামি হয় অজ্ঞাত ব্যক্তি।
জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে (জানুয়ারি-নভেম্বর) ভারত থেকে এ অঞ্চল দিয়ে পাচার হওয়ার সময় ৬ লাখ ২৯ হাজার ৬৯০ টাকা মূল্যের অবৈধ পণ্য ধরেছে বিজিবি। এসব ঘটনায় করা হয়েছে ১৪টি মামলা। তবে একটি মামলাতেও আসামি আটকের রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
বিজিবর তথ্য অনুযায়ী, শুধু এপ্রিল মাসে সীমান্তে কোনো অবৈধ পণ্য জব্দের ঘটনা ঘটেনি। তবে মে মাসে সব থেকে বেশি চোরাচালানের পণ্য আটক করে খানপুর বিজিবি। মাসটিতে ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকার সমপরিমাণ অবৈধ পণ্য জব্দ করা হয়। এর পরের মাস থেকে অবৈধ পণ্য ধরা পড়ার পরিমাণ কমে আসে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪১০ টাকার পণ্য আটক করে বিজিবি।
এর আগে বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৩৭ হাজার ৬১০ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ১০ হাজার ৫০০ টাকা এবং মার্চে ১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকার পণ্য জব্দ করা হয়। অন্যদিকে জুনে ৫ হাজার ২৬০ টাকা, জুলাইতে ৪০ হাজার ৫০০ টাকা, আগস্টে ৫২ হাজার ১০ টাকা, সেপ্টেম্বরে ৫৭ হাজার ৯০০ টাকা এবং অক্টোবরে ৫১ হাজার টাকার অবৈধ পণ্য জব্দ করা হয়েছে। এসব চোরাচালানের অবৈধ পণ্য জব্দের ঘটনায় জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, মে, জুন, জুলাই, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে একটি করে মামলা হয়েছে। তবে আগস্টে মামলা হয়েছে দুটি এবং নভেম্বরে হয়েছে চারটি। প্রতিটি মামলাই হয়েছে আসামি ছাড়া।
এ বিষয়ে খানপুর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েক সুবেদার মানিক দেবনাথ বলেন, আমরা মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ পণ্য আটক করেছি। এর মধ্যে বেশিরভাগ ফেনসিডিল। সীমান্ত ঘেঁষা নদী পথ হওয়ায় আসামি ধরা সম্ভব হয় না। কারণ, চোরাকারবারিরা মালামাল ফেলে নদীতে নেমে ভারতের সীমায় ঢুকে পড়ে।
আর বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, এখন অভিনব পন্থায় মাদক চোরাচালান হচ্ছে। কিছুদিন আগে টেকনাফ থেকে একজন নারী তার শরীরের সংবেদনশীল স্থানে করে ইয়াবা নিয়ে আসছিল। বিজিবিতে যেহেতু নারী সৈনিক আছে, তারা চেক করে ওটা ধরতে পেরেছে।
তিনি আরও বলেন, মাদক চোরাকারবারিরা নিত্য নতুন পন্থা উদ্ভাবন করছে। বার্মিজ স্যান্ডেলে করে ইয়াবা নিয়ে আসছে, আমরা ওটাও ধরছি। আমাদের প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করছি এটা ধরার জন্য। আমরা কিছুদিন আগে খবর পেলাম গরুর পেটে করে মাদক পাচার হচ্ছে। কিন্তু সব গরুর পেট কেটে তো মাদক পরীক্ষা সম্ভব না। এরপরও আমরা তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। আশা করছি, আমাদের প্রশিক্ষিত সৈনিকরা খুব শিঘ্রই এ বিষয়েও সফল হবে।